Friday, April 26, 2024
spot_img
Homeবিচিত্র৬২ বছর বয়সে মাস্টার্স, হার না মানা এক সংগ্রামী নারীর গল্প

৬২ বছর বয়সে মাস্টার্স, হার না মানা এক সংগ্রামী নারীর গল্প

শিক্ষার কোনো বয়স নেই। সেই কথাটা প্রমাণ করলেন ঠাকুরগাঁও শহরের ইসলামবাগ মহল্লার আরেফা হোসেন। তিনি স্বাস্থ্য বিভাগের শত কর্ম-ব্যস্ততার মাঝেও চাকরি জীবনের ৩৮ বছর পেরিয়ে মার্স্টাস ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েছেন। এ যেন হার না মানা এক সংগ্রামী নারীর গল্প।

২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। ৬২ বছর বয়সে শিক্ষাগত সনদ অর্জনে যেন উচ্চ শিক্ষার স্বাদ শেষ বয়সে আস্বাদন করলেন হার না মা সংগ্রামী এই নারী।

তার কর্মজীবনে নিরলস প্রচেষ্টা ও পদোন্নতি তাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। তার পেছনে ফেলা আসা শিক্ষাজীবনের হাতছানিতে তিনি লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে মার্স্টাস পরীক্ষায় বসেন।

চার বছর বয়সে মাকে হারান আরেফা। তারপর বয়স যখন আট তখন হারান বাবাকে। পাঁচ বোনের মধ্যে আরেফা তৃতীয়। অভিভাবক হিসেবে একমাত্র বড় বোন। কিন্তু এতেও ভাগ্যে আসে বিয়োগান্ত বেদনা। অল্প বয়সে বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। পরে তার বাকি তিন বোনসহ আশ্রয় হয় খ্রিস্টান মিশনারি চ্যারিটেবলে।

সেখানে ভর্তি হন মিশনারি স্কুলে। মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সময় বাংলা একটি সিনেমা দেখেন তিনি। যে সিনেমায় এক অনাথ মেয়ে স্বেচ্ছায় মানুষকে সেবা দিচ্ছেন। সেই সিনেমা থেকেই স্বপ্ন বুনতেন তিনিও একদিন নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।

১৯৭৬ সালে মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৮১ সালে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৮২ সালের ৬ জুন ঠাকুরগাঁও মহকুমা হাসপাতালে (বর্তমানে আধুনিক সদর হাসপাতালে) জুনিয়র নার্স হিসেবে যোগদান করেন।

চাকরির দুই বছর হতে না হতেই আওয়ামী লীগ নেতা হামিম হোসেনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আরেফা। বছর না যেতেই কোলজুড়ে আসে সন্তান। যেন বেড়ে গেল আরও দায়িত্ব কমে গেল সময়। একদিকে সংসারের ব্যস্ততা অন্যদিকে কর্মময় জীবন। এগুলো বাদ দিয়ে আলাদা কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ হওয়ার সুযোগ ছিল না তার।

তবে মনে তার সুপ্ত বাসনা তাড়া করত উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আবার শুরু হয় পড়াশোনা। বিএসসি করার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মহাখালী সেবা মহাবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে দমেননি তিনি, বরং চাহিদা বেড়েছে মাস্টার্স করার। বয়সে শিক্ষাগত সনদ অর্জনে যেন উচ্চশিক্ষার স্বাদ শেষ বয়সে আস্বাদন করলেন তিনি।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৮ বছরের চাকরি জীবন শেষ করে এখন ঠাকুরগাঁও নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজে অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তিনি।

একদিকে বয়সের ভার, অন্যদিকে পরিবার ও কর্মস্থলের ব্যস্ত সময়। এ বয়সে পড়াশোনা যেন আকাশকুসুম বিষয়। তবুও সব বাধা ডিঙ্গিয়ে উচ্চশিক্ষার সনদ পেয়ে আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন আরেফা হোসেন।

আরেফা হোসেন বলেন, আমার জন্ম নাটোর জেলায়। সেখানেই আমাদের বাড়ি ছিল। আমরা পাঁচ বোন ছিলাম। ছোট বেলায় মা-বাবা মারা যায়। বড় বোন আমাদের দেখাশুনা করতেন। কিছুদিন পরে বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না। আমিসহ আমরা তিনবোন সেখানে একটি আশ্রমে বড়ই হয়েছি। তবে এখন আমরা সবাই মাথা উঁচু করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমার ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার। কিন্তু চাকরির পরে বিয়ে তারপর সন্তান হয়ে যায়। মনে হয়েছিল হয়তো আর উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারব না। তবে আমার স্বামী আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, তবে সে এখন নেই।  ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন।

আরেফার বড় ছেলে আসিক হোসেন ঢাকার একটি নিউজ পোর্টালে সাব-এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। ছোট ছেলে আদিব হোসেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রয়েছেন। মায়ের সাফল্যে দুই ছেলে দারুণ খুশি।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, আরেফা নারী জাগরণে অগ্রদূত।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments