বিবিসি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলছেন, ইসরাইলের কথিত হামলা ঘটনাটিকে বেশ খাটো করেই দেখাতে চাইছেন ইরানিরা। যেন এর বিশেষ তাৎপর্য নেই। তারা বলছেন, কোনো হামলা হয়নি। ক্ষুদ্রাকৃতি ড্রোনের রম্য ছবি প্রচার করছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এতে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের অপেক্ষাকৃত কট্টর অংশ কি পাল্টা জবাব দেবে? ইসরাইল কি আরও হামলার পরিকল্পনা করছে? জেরেমি বোয়েন আরও বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ইতিমধ্যেই দূরত্ব বেড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। সেটি হয়তো আর বাড়াতে চাননি নেতানিয়াহু। যে কারণে এই ধরনের হামলার পদক্ষেপটি নিয়ে থাকতে পারেন তিনি। এর আগে ১৩ই এপ্রিল ইসরাইলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেই হামলার জবাব দেয়ার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
দেশে তার বিরোধীপক্ষ, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদ তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে ইরানে কঠোর হামলা চালানোর জন্য। কিন্তু ইরানের হামলার জবাবে ইসরাইলকে আর পাল্টা হামলা না চালাতে বলেছিলেন বাইডেন, যেন ‘জয়টা ইসরাইলের’ অনুকূলেই থাকে। বৃটেনসহ অন্য মিত্ররাও যার যার জায়গা থেকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল।
জেরেমি বোয়েন বলেন, যদি শুক্রবারের আক্রমণ তারই প্রতিফলন হয়, তাহলে আরেকটা প্রশ্ন দাঁড়ায়। এটা কি ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় থাকা সাবেক জেনারেলদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথেষ্ট শক্ত পদক্ষেপ হলো, ইসরাইলের শত্রুদের নিরস্ত্র করতে যে পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছিলেন তারা। নেতানিয়াহুর অতি-জাতীয়তাবাদী শরিকরাও একটা প্রচণ্ড প্রতিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। একজন তো বলেই বসেন, ইসরাইলের ‘নৃশংস’ হওয়া উচিত। পশ্চিমা দেশগুলোর মতে, ওই অঞ্চলের ভালোর জন্য ইরান এবং ইসরাইলের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ইতি টানা উচিত। এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের শুরুটা হয় ১লা এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কূটনৈতিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলার মধ্য দিয়ে। তিনজন জেনারেলসহ অন্তত সাতজন মারা যান ওই হামলায়। এমনকি এই পর্যায়ে এসেও যদি ঘটনাপ্রবাহটা থামে, নতুন দৃষ্টান্ত কিন্তু স্থাপিত হয়েই গেল। ইরান সরাসরি ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে, জবাবে ইরানের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইসরাইল, যা আগে কখনো ঘটেনি। ওই অঞ্চলে ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতে দুই দেশের অভ্যন্তরে সরাসরি হামলা না চালানোটাই যেন ‘রুলস্ অব দ্য গেম’ (খেলার নিয়ম) ছিল এতোদিন। ফলে, দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের ছদ্মবেশী সেই যুদ্ধ ছায়া থেকে বেরিয়ে এলো এবার।