Friday, April 26, 2024
spot_img
Homeধর্মদান-সদকার পুরস্কার

দান-সদকার পুরস্কার

দান-সদকা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। সদকা দুই প্রকার। ১. সাধারণ সদকা; ২. সদকায়ে জারিয়া।

সাধারণ সদকা হলো-এতিম, গরিব অসহায়কে টাকা-পয়সা, বস্ত্র, অন্ন দান করা। আর সাদকায়ে জারিয়া হলো-যে দানের সওয়াব স্থায়ী হয়। মৃত্যুর পর কবরেও সওয়াব পেতে থাকে। যেমন-দুনিয়ার মধ্যে হাফেজ, আলেম ছাত্র ও নেককার সন্তান রেখে যাওয়া। দ্বীনি বইপুস্তক রচনা করা। মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা। জনসাধারণের জন্য পানির ব্যবস্থা করা, বৃক্ষরোপণ করে যাওয়া।

এক ব্যক্তি অন্যকে যদি দ্বীনি এলেম শিক্ষা দেয়, সে ব্যক্তি অন্যকে পরবর্তীতে কাউকে না কাউকে শিক্ষা দেবে। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এ সৎ কাজের সওয়াব কবরে পৌঁছতে থাকবে। নবি মুহাম্মদ (সা.) ওই ব্যক্তিকে সবচেয়ে বড় দানশীল হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। যিনি পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর এলেম অন্যদের শিক্ষা দেন। মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা রাস্তাঘাট ইত্যাদিতে দান করলে অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হয় এবং সওয়াব দীর্ঘস্থায়ী হয়। বুখারি শরিফে এসেছে-হজরত আবু হুরায়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি আমলের সওয়াব কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকে- সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান, ভালো সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।

দানের গুরুত্ব সম্পর্কে সূরা যারিয়াতের ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের সম্পদে গরিব-অসহায়দের অধিকার রয়েছে’।

অর্থাৎ আমরা যা দান করি, ইসলামের দৃষ্টিতে তা দয়া নয়, তা গরিবদের অধিকার বা হক্কুল ইবাদ। যখন দান করা হয়, তখন সৃষ্টির অধিকারকেই সম্মান করা হয়। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (যারা লজ্জায় কারও কাছে হাত পাতে না) সবার হক রয়েছে’।

দানের গুরুত্ব সম্পর্কে সূরা বাকারার ২৬১নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-‘যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন’।

হাদিস শরিফেও দান করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে-বুখারি ও মুসলিম শরিফে এসেছে-যারা গোপনে দান করেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের আরশের নিচে ছায়া ও শান্তি দান করবেন। নবি (সা.) বলেন, দান-সদকা গুনাহ এমনভাবে মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে। দান জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। সুবহানাল্লাহ। তিনি আরও বলেন, দান করলে বিপদ কেটে যায় আর হায়াত বাড়ে।

বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।’

দান করলে বালা মুসিবত, অ্যাক্সিডেন্ট, পেরেশানি, দুর্ঘটনা, অসুস্থতা দূর হয়ে যায়। তাই দানের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম।

তবে দান করে খোটা দেওয়া জায়েজ নেই। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা দানের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাতের সওয়াব বরবাদ করো না এবং এখলাছের সঙ্গে দান করতে হবে। আল্লাহর রাসূল বলেন, নাজাতের জন্য একাগ্রচিত্তে অল্প আমলই যথেষ্ট।

বর্তমান যুগে অনেক মানুষ প্রশংসা নেওয়ার জন্য, গর্ব-অহংকার প্রকাশ করার জন্য দান করে। অনেকে আবার দুনিয়াবি স্বার্থের জন্যও দান করে। এটি সম্পূর্ণ নিষেধ। দান যদি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়, তা দ্বারা হয়তো দুনিয়াবি কিছু স্বার্থ হাসিল হবে, কিন্তু পরকালে এর বিনিময় পাওয়া যাবে না।

রাসূল (সা.) বলেন, যারা মানুষের প্রশংসা নেওয়ার উদ্দেশে দান করবে, তাদের দ্বারাই জাহান্নামের আগুনকে প্রথম প্রজ্বলিত করা হবে (নাউজুবিল্লাহ)।

তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা সম্পদশালীকে প্রশ্ন করবেন, আমার দেওয়া সম্পদ তুমি কী করেছ? সে জবাব দেবে আমি আপনাকে খুশি করার জন্য অনেক দান করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে দান করেছ যে, তোমাকে বলা হবে, দানবীর, দানশীল, সমাজসেবক, জনদরদি। সব টাইটেল তো তুমি দুনিয়াতে পেয়ে গেছ। তখন তাকে টেনেহিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তাই দান করে খোটা দেওয়া যাবে না এবং এখলাছের সঙ্গে দান করতে হবে।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সাধ্যমতো এখলাসের সঙ্গে দান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments