Friday, April 26, 2024
spot_img
Homeধর্মকুসংস্কারমুক্ত হওয়ার মাস সফর

কুসংস্কারমুক্ত হওয়ার মাস সফর

ইসলাম সব সময় কুসংস্কার প্রত্যাখ্যান করে। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের সব কুসংস্কার পরিহার করেছে ইসলাম। জাহেলি যুগে আরবে সফর মাস ঘিরে নানা কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। এ মাসকে তারা অশুভ মনে করত।

ইসলাম এই কুসংস্কার দূর করেছে। এই মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোগে সংক্রমিত হওয়া বলতে কিছুই নেই, কোনো কিছু অশুভ নয়। প্যাঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসেও কোনো অশুভ কিছু নেই…। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৯)

কুসংস্কার বলা হয় যুক্তিহীন অন্ধবিশ্বাসকে। সেটি হতে পারে ধর্মের নামে, সামাজিকতার নামে, মতবাদ ও শাস্ত্রের নামে। রাসুল (সা.) জাহেলি যুগের সব কুপ্রথার মূলে কুঠারাঘাত করেছেন। বিদায় হজের ভাষণে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘জাহেলি যুগের সব কুপ্রথা আমার পায়ের নিচে নিক্ষেপ করা হলো। ’

তবু মানবসমাজ থেকে পুরোপুরিভাবে কুসংস্কার নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। যুগের পরিবর্তনে নতুন রূপ ও অবয়বে নতুন নতুন কুসংস্কারের উদ্ভব ঘটেছে। মানুষ নতুন নতুন বেদি ও দেবতার আবিষ্কার করেছে। মোমবাতি প্রজ্বালন, হস্তরেখা, ভাগ্য পরীক্ষা ও রাশিফলের মতো যুক্তিহীন বিষয়ে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। পশুর গলায় মালা পরানো, বাবার নামে, মাজারের নামে পশু ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এসব তো শহরাঞ্চলের অবস্থা। গ্রামে-গঞ্জে জীবনের পরতে পরতে কুসংস্কার ছেয়ে গেছে, ‘পরীক্ষায় যাওয়ার আগে ডিম খাওয়া যাবে না’, ‘দোকানের প্রথম কাস্টমার ফেরত দিতে নেই’, ‘জোড়া কলা খেলে জোড়া সন্তান হবে’, ‘কোরআন পড়ে গেলে আড়াই কেজি চাল দিতে হয়’, ‘নতুন কাপড় পরিধান করলে আগুনে সেঁক দিতে হয়’, ‘কাক ডাকলে বিপদ আসে’, ‘প্যাঁচা অশুভ’ আরো কত কী! সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, যখন কোনো কোনো কুসংস্কারকে ধর্মের কর্ম বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। অথচ ধর্ম এসবকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না, সমর্থনও করে না।

জাহেলি যুগের লোকেরা পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ণয় করত। সে যুগের লোকেরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাওয়ার আগে নিজেদের পোষা পাখিকে উড়িয়ে দিত অথবা কোনো বন্য পাখিকে ঢিল ছুড়ত। পাখিটি ডান দিকে উড়ে গেলে কাজটি শুভ বলে ধারণা করত। কিন্তু পাখিটি বাঁ দিকে উড়ে গেলে অশুভ লক্ষণ ভাবত। ফলে তারা সেই কাজ থেকে বিরত থাকত। এভাবে পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ধারণের কোনো ভিত্তি ইসলামে নেই। রাসুল (সা.) এ ধরনের কাজকে শিরক আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভাগ্যের ভালো-মন্দ নির্ণয়ের জন্য পাখি ওড়ানো বা ঢিল ছোড়া বা কোনো কিছুকে অশুভ লক্ষণ মান্য করা শিরক। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯০৯)

জাহেলি যুগের লোকেরা প্যাঁচাকে অশুভ মনে করত। আমাদের এ অঞ্চলেও এই ধারণা এখনো আছে। অথচ প্যাঁচা আল্লাহর সৃষ্টি। বান্দার ভালো-খারাপ করার কোনো ক্ষমতা তার নেই। তাই প্যাঁচাকে কুলক্ষণের প্রতীক মনে করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছুই নেই। প্যাঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছু নেই। তারকার দরুন বৃষ্টি হওয়া ভিত্তিহীন এবং সফর মাসে অশুভ নেই। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৯২৬)

কুসংস্কারের প্রধান কারণ হলো অজ্ঞতা। ইসলামের প্রথম কথাই হলো ইকরা বা তুমি পড়ো। অজ্ঞতাকে জয় করা গেলে কুসংস্কার নির্মূল করা সম্ভব। ইসলামে অশুভ বলতে কিছু নেই। সৃষ্টির কোনো কিছুই অশুভ নয়। কোরআনের ভাষায়, ‘হে আমার রব, তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করোনি। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments