Tuesday, April 16, 2024
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকওমিক্রন বিস্তার রোধে ইউরোপ দ্বিধাবিভক্ত!

ওমিক্রন বিস্তার রোধে ইউরোপ দ্বিধাবিভক্ত!

প্রায় সর্বক্ষেত্রে অভিন্ন মতাদর্শ প্রদর্শন করলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো কভিড-১৯ এর নতুন ভেরিয়েন্ট ’ওমিক্রনের’ ব্যাপারে ভিন্ন মতামত ও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। ওমিক্রন বিস্তারের কারণে নেদারল্যান্ডস জরুরী লকডাউন চালু করেছে, কিন্তু ফ্রান্স শুধুমাত্র ব্রিটেনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করেই সন্তুষ্ট থাকছে। জার্মানিতে সংক্রমণের হার কমছে বটে, তবে দেশটিতে এখনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনাধীন রেখেছে।

গত শনিবার রাতে যখন প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে ওমিক্রনের ব্যাপারে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তখন অনেক ডাচ কিছুটা হতবাক হয়েছিলেন। তিনি পরের দিন থেকে নেদারল্যান্ডসে পুরোপুরি লকডাউন ফিরে আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ ঘোষণায় জানানো হয়েছিল যে, প্রতিটি ডাচ পরিবার বাইরের থেকে সর্বাধিক দুজন অতিথি গ্রহণ করতে পারবে। তবে ক্রিসমাস এবং নববর্ষ উদযাপনে অতিথির সংখ্যা চারজন হতে পারবে। বেশিরভাগ ব্যবসা এবং সাংস্কৃতিক জীবন কমপক্ষে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণায় জানানো হয়। ঘোষণার আকস্মিকতায় শনিবার রাতেই অনেকে কেনাকাটা করতে ছুটে যায় বলে জানায় বিভিন্ন ডাচ মিডিয়া। নেদারল্যান্ডসের ভ্রমণ রীতিতেও কঠোরতা আনা হয়েছে। বাইরে থেকে প্রবেশকারীদের ৫-১০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

জার্মানিতে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে নিবন্ধিত সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। জার্মানীর নবগঠিত একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল সরকারকে পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করেছে এই বলে যে, কভিড-১৯ এর ওমিক্রন রূপটি মহামারিতে একটি ‘নতুন মাত্রা’ যোগ করেছে। ঝুঁকির ব্যাপারে প্যানেলটি সতর্ক করে বলেন যে, ওমিক্রন এত দ্রুত এবং সহজে ছড়িয়ে পড়ে যে ‘জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অতিদ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং/অথবা একই সময়ে কোয়ারেন্টিনে থাকবে’।

সুতরাং, সামাজিক পরিষেবাগুলো প্রাপ্তির জন্য এবং পরিণতির ভয়াবহতা রোধ করার জন্য অদূর ভবিষ্যতে সমাজের মানুষের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ‘তীব্রভাবে হ্রাস’ করা উচিত। গত সপ্তাহে জার্মানীর স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ বলেছিলেন যে, ক্রিসমাসের আগে কোনো লকডাউন দেওয়া হবে না এবং সম্ভবত তারপরেও নয়। তবে একই সঙ্গে তিনি ওমিক্রনের ‘বিশাল তরঙ্গ’ সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করেছিলেন। চলতি সপ্তাহের শেষের দিক থেকে জার্মানি বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের জন্য প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক এবং ফ্রান্সের ক্ষেত্রে এই কড়াকড়ি প্রযোজ্য হবে বলে জানা যায়।

আয়ারল্যান্ড সাম্প্রতিক দিনগুলোতেও নিয়ম কিছুটা কঠোর করলেও দেশটির পাবগুলো এখনো রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে বলে জানা যায়।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, চ্যাম্পস-এলিসিস-এ গ্র্যান্ড নববর্ষ উদযাপন কর্মসূচিটি বাতিল করা হবে। কোনো আতশবাজি ফোটানো হবে না এবং এমনকি কোনো ধরনের ডিজে পার্টিও হবে না বলে জানানো হয় মেয়রের কার্যালয় থেকে। জার্মানির চেয়ে ফ্রান্সে সংক্রমণের প্রবণতা বাড়লেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এজন্য তেমন কোনো বিধিনিষেধ ঘোষণা করেনি দেশটি। দেশটির বিভিন্ন মিডিয়া পর্যালোচনায় উঠে আসে যে, আগামী বছর এপ্রিলে পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে ইমানুয়েল ম্যাক্রন যেকোনো মূল্যে অজনপ্রিয় বিধিনিষেধগুলো এড়াতে চান। যুক্তরাজ্যের ব্যাপারে ফ্রান্সের বিধিনিষেধ কঠিন, যাতে দেখা যায়, দুটি দেশ এখনো ইইউ থেকে ব্রিটিশদের বেরিয়ে যাওয়ার পরের বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে। ফ্রান্স এক সংক্ষিপ্ত নোটিশে দু’দেশের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নরওয়েতে সবচেয়ে বেশি ওমিক্রনে সংক্রমণ বিস্তার লাভ করলেও ডেনমার্কও আক্রান্তের দিক থেকে পিছিয়ে নেই। সব ক্ষেত্রেই নরওয়ে অত্যন্ত জোরাল পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রতিবেশি দেশ সুইডেন দৃষ্টিগ্রাহ্য তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক সামাজিক বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করেছে যাতে ওমিক্রন বিস্তার রোধ করা যায়। কিন্তু ক্রিসমাসকে সামনে রেখে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত। দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই।

মৃত্যুর পরিসংখ্যানে ওমিক্রনের ভয়াবহতা যথেষ্ট অস্পষ্ট। মৃতের সংখ্যা বিবেচনায় পূর্ব ইউরোপের পরিসংখ্যান এখনো হালকা এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন। পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলো প্রতি এক লাখ জনের মধ্যে কভিডে মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে।

অন্যদিকে, সংক্রমণের হার পশ্চিম ইউরোপের মতো দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি এমনও হতে পারে যে, ওমিক্রন সবেমাত্র এই দেশগুলিতে পৌঁছেছে এবং বিস্তার লাভে যথেষ্ট সময় নিচ্ছে। সুতরাং একটি আসন্ন ঝুঁকি রয়েছে পূর্ব ইউরোপ সংক্রমণের বিস্তারের ক্ষেত্রে এবং তা শুধুই সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments