অন্যের গঠনমূলক পরামর্শ ও মতামত শোনা মহৎ গুণ। সব বিষয়ে সবাই পারদর্শী হয় না। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি। এতে সত্যের নাগাল পাওয়া যায়।
একইভাবে মানুষকে স্বাধীনভাবে মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। এর জন্য প্রয়োজন প্রজ্ঞা ও পর্যাপ্ত ধৈর্য। মহান আল্লাহ ধৈর্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘হে মুমিনরা! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
রাসুল (সা.) অন্যের মতামত বা কথাকে গুরুত্ব দিতেন। এ সম্পর্কে একটি হাদিসে এসেছে, আবু উমামা (রা.) বলেন, এক তরুণ যুবক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে জিনা (ব্যভিচার) করার অনুমতি দিন। এ কথা শুনে উপস্থিত লোকজন তার কাছে এসে তাকে ধমক দিয়ে বলল, থামো! থামো! রাসুল (সা.) বলেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। অতঃপর সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খুব কাছে এসে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা (অন্যের সঙ্গে জিনা করা) পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! মানুষেরা এটা তাদের মায়েদের জন্য পছন্দ করবে না। তিনি বলেন, তোমার কন্যার জন্য কি তা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো মানুষ এটা তাদের মেয়েদের জন্য পছন্দ করবে না। তিনি বললেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য এটা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো ব্যক্তিই এটা তাদের বোনদের জন্য পছন্দ করবে না। তিনি বলেন, তাহলে তোমার ফুফুর জন্য কি এটা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো পুরুষ এটা তাদের ফুফুদের জন্য পছন্দ করবে না। তিনি বললেন, তবে তোমার খালার জন্য কি এটা পছন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোনো মানুষ এটা তাদের খালাদের জন্য পছন্দ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তার ওপর হাত রেখে দোয়া করে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি তার গুনাহ ক্ষমা করে দাও, তার হৃদয় পবিত্র করে দাও এবং তার লজ্জাস্থানকে হেফাজত করো। এরপর ওই যুবক আর কারো (কোনো নারীর) প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২২৬৫)
এভাবে রাসুল (সা.) অন্যকে স্বাধীনভাবে মতামত পেশ করার সুযোগ দিতেন। আর মতামত ভুল হলে তিনি তা শুধরে দিতেন।
স্বয়ং রাসুল (সা.)-এর সঙ্গেও নারীদের বাদানুবাদ করার ঘটনা কোরআনে উল্লেখ আছে। শুধু তা-ই নয়, এই বাদানুবাদ বিষয়ে ‘মুজাদালাহ’ (তর্ক-বিতর্ক) নামে একটি সুরাও নাজিল করা হয়েছে।
একবার এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর সামনে এসে ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে। তখন তিনি তাকে বলেন, স্থির হও! আমি কোনো বাদশাহ নই। আমি একজন কুরাইশ নারীর সন্তানমাত্র। যিনি শুকনা গোশত ভক্ষণ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩১২)
সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও শুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে কাউকে না কাউকে সত্য বলে যেতেই হবে। আর তা হজম করার শক্তিও থাকা জরুরি। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, সর্বোত্তম জিহাদ হলো জালিম শাসকের সামনে হক কথা বলা। (নাসাঈ, হাদিস : ৪২০৯; তিরমিজি, হাদিস : ২১৭৪)