কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ১৪ পাইলট নিয়োগের ঘটনা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত। অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশেরই বিমান চালানোর প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা নেই; উপরন্তু দুজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হতে না পারাসহ দুর্ঘটনা ঘটানো ও চাকরিচ্যুত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। শুধু তাই নয়, জানা গেছে-নিয়োগকৃত একজন কো-পাইলট (ফার্স্ট অফিসার) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি পরিবারের সদস্য। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এসব বিষয়ে বিমানের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে। একই সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিমানের কাছে ব্যাখ্যা তলবের পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। আমরা দেখতে চাই, পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত দুর্নীতিবাজদের কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
ইতঃপূর্বে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে গেড়ে বসা দুর্নীতি উৎপাটনের উদ্যোগ সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছিল। তবে দুর্নীতিবাজ চক্রের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটির যে মুক্তি ঘটেনি; অযোগ্য ও বিতর্কিতদের পাইলট হিসাবে নিয়োগের ঘটনায় তা পরিস্ফুট হয়েছে। বস্তুত সম্ভাবনাময় এ সংস্থাটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে এখানে চলমান বল্গাহীন দুর্নীতির কারণেই। আধুনিক কৌশল প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করার মধ্য দিয়ে অর্থ ও সুনাম অর্জনের কাজটি সহজসাধ্য হলেও বর্তমানে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে কেন হিমশিম খাচ্ছে, এর সদুত্তর খোঁজা জরুরি। হতাশাজনক হলো, খোদ প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ পাইলট নিয়োগে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি করার দুঃসাহস দেখানো হয়েছে, যার মূলোৎপাটন জরুরি। উদ্বেগজনক হলো, বাংলাদেশ বিমানের প্রায় প্রতিটি শাখায় দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বছরের পর বছর নানারকম কারসাজি ও ফন্দিফিকিরের মাধ্যমে প্রায় প্রকাশ্যে সিন্ডিকেট গঠন করে সংস্থাটিতে কমিশন ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধ চালানো হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স হলো নিজস্ব পতাকার আবরণে একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার স্বীকৃত উপায় বা মাধ্যম। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র কেবল আর্থিকভাবেই লাভবান হয় না; একই সঙ্গে সংস্থাটির প্রতীক দেশের মানুষের অহংকারের বস্তুতে পরিগণিত হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাতে দেশবাসীর অহংকারের বস্তুতে পরিণত হয়, সে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এজন্য সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানোর কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করা গেলে অবস্থার পরিবর্তন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এ কাজে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। অবশ্য শুধু বিমান নয়; দেশ থেকে সব ধরনের দুর্নীতি হটাতে সরকার কতটা আন্তরিক ও আপসহীন-এ প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি বিরাজমান দুর্নীতিসহ অনিয়ম ও অরাজক পরিস্থিতি পরিবর্তনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেয়, তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ সব ধরনের দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটন ও দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে বাংলাদেশ বিমানকে পরিচ্ছন্ন ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে-এটাই প্রত্যাশা।