Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামবন্যার বিস্তার: পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে

বন্যার বিস্তার: পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে

সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হতেই দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বন্যা। এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত অন্তত ১৬টি জেলায় বন্যা বিস্তৃত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী, শেরপুর, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জামালপুর।

এছাড়া টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জও যুক্ত হয়েছে এ তালিকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি যত নিচের দিকে নামবে, ততই বাড়বে বন্যাকবলিত জেলার সংখ্যা। সেক্ষেত্রে পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, এমনকি মানিকগঞ্জও যুক্ত হতে পারে বন্যাকবলিত জেলার তালিকায়। সব মিলে এবারও বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য বন্যাকবলিত জেলাগুলোর প্রশাসনকে নিতে হবে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি।

বন্যা বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত করে তোলে। বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের প্রধান সমস্যা হিসাবে দেখা দেয় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকট। নিরাপদ পানির অভাব থেকে পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া সৃষ্টি হয় যোগাযোগ সংকটও। ২০১৯ সালে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রায় দেড় মাস স্থায়ী হয়েছিল সেই বন্যা। গত বছরও বন্যার কবলে পড়েছিল দেশের বিভিন্ন স্থান। সে সময় মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কাজেই বন্যা মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। যে কোনো দুর্যোগ সামনে রেখে এর মানবিক বিপর্যয়ের দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত সবার আগে। এজন্য সম্ভাব্য বন্যাকবলিত এলাকায় অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পায়, সে ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার বিষয়েও প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায় এখানে প্রতিবছরই কম-বেশি বন্যা দেখা দেয়। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নদীর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। অভিন্ন নদীগুলোর গতি-প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে এমন বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে তা ফলপ্রসূ হয়। গত ৫০ বছরে দেশে প্রচুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি হয়েছে। তবে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সরকার সাফল্যের পরিচয় দিতে পারছে না-এটা একটা বড় সমস্যা। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এবং দুর্নীতি রোধ করতে না পারাই এর মূল কারণ। কাজেই কেবল বাঁধ দিলেই হবে না; একইসঙ্গে সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হবে। নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণ, শাসন এবং বাঁধ নির্মাণসহ সব ব্যবস্থাপনা যদি আমরা একসঙ্গে সঠিক ও দুর্নীতিমুক্তভাবে করতে পারি, তাহলে বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে বলে আশা করা যায়।

বন্যার সঙ্গে সহাবস্থান করে জীবন ধারণের কৌশলও বের করা দরকার। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আরও একটি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা উচিত। দেশের নদীগুলোর নাব্য হ্রাস পেয়েছে এবং এর ফলে প্লাবনভূমির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এতে কম পানিতেই বেশি বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় নদী খননের মাধ্যমে উজান থেকে বেয়ে আসা পলি নিয়মিতভাবে ও দ্রুত অপসারণ করা না হলে ভবিষ্যতে দেশে বন্যার প্রকোপ ও ব্যাপ্তি ক্রমেই বাড়তে থাকবে। তাই অবিলম্বে এ দিকটিতে দৃষ্টি দেওয়া দরকার বলে মনে করি আমরা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments