কাজী মুহম্মদ অলিউল্লাহ। জন্ম : ১০-১০-১৯৪০। পিতা : আলহাজ মৌ. কাজী মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ফারুকি, মাতা : আলহাজ হুসনে আরা বেগম। ১৯৫৬ সালে প্রবেশিকা (Matriculation), উচ্চ মাধ্যমিক ১৯৬০, যশোর এমএম কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবন কাটিয়েছেন অধ্যাপনা করেই। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করছেন দীর্ঘদিন। ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রভৃতি নানা বিষয়ে গ্রন্থ রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ-১. ভাষা পরিচিতি (গ্রন্থ বিতান, সাতক্ষীরা, ১৯৯৬),২. বাংলাভাষা পরিচয় (গ্রন্থ বিতান, সাতক্ষীরা, ১৯৯৭),৩. বাংলা ছন্দ ও অলঙ্কার পরিচয় (গতিধারা, ৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা-২০০৩), ৪. সাহিত্যের দিক-দিগন্ত (নভেল পাব., প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-২০০৫), ৫. সাতক্ষীরার উপভাষা : স্বরূপ ও স্বাতন্ত্র্য, (হাতেখড়ি) ৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা-২০০৮ গবেষণা), ৬. আধুনিক বাংলা ছন্দ ও অলঙ্কার, (নওরোজ কিতাবিস্তান, ৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-২০০৯), ৭. মনন মনীষা (জ্ঞান বিতরণী, ৩৮/২ক, বাংলাবাজার, ২০০৯), ৮. সনাতনী (ধর্মীয়) (অর্পিতা প্রকাশনা, ৫ বাংলাবাজার, ২০০৯), ৯. সাহিত্য মনীষা, হাতেখড়ি, (৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা, গবেষণা) ২০১২, ১০. সিকান্দার আবু জাফর (জীবনী), হাতেখড়ি (৩৮/২ক বাংলাবাজার, ঢাকা, গবেষণা) ২০১৩, ১১. সৃজন মনীষা (গ্রন্থ প্রকাশ, ৩৮/২ বাংলাবাজার ঢাকা ২০১৪), ১২. বাংলার কথা বাঙালির কথা (প্রবন্ধ) (হাতেখড়ি ২০১৫), ১৩. মক্কা শরিফের ইতিহাস (অনুবাদ) (হাতেখড়ি ২০১৬), ১৪. রবীন্দ্র-নজরুল : সঙ্গে অনুষঙ্গে, (জ্ঞান বিতরণী, ৩৮/২ক, বাংলাবাজার, ২০১৭)। এছাড়াও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সম্পাদিত বই। কাজী মুহম্মদ অলিউল্লাহ রচিত এবং সম্পাদিত বই জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্য তালিকায়ও রয়েছে।
লেখক হওয়ার জন্য শহরে/কেন্দ্রে চলে আসার প্রবণতা কীভাবে দেখেন?
: সাহিত্য স্পর্শকাতর হৃদয়ের সৌন্দর্যানুভূতির বাক্সময় প্রকাশ। এমন মন যাদের তারাই লেখেন। এর জন্য শহর বা প্রত্যন্ত অঞ্চল কোনোটিই বাধা নয়। তবে শহর বা কেন্দ্র লেখা প্রকাশ, প্রসার প্রভৃতির যেমন প্রধান ক্ষেত্র তেমনি সর্ব বিষয়ের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ। তাই কেন্দ্রমুখী হওয়া লিখকদের সহজাত প্রবণতা।
বর্তমানে সাহিত্যে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে? কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পাওয়া উচিত?
: নিম্ন বিষয়গুলোর প্রাধান্য পাচ্ছে- রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, হতাশা বা নেতিবাচক চিত্র, ইতিহাস ও ঐতিহ্যভিত্তিক কিছু রচনা বা গবেষণা দুর্নিরীক্ষ নয়। বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয়তা একটা বড় সমস্যা। লেখকদের এ বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন ও দিকনির্দেশনা সহায়ক লেখার প্রতি সচেতন হওয়া উচিত।
দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন।
: সাহিত্যের মূল উপদান ভালোবাসা। সেটা মানুষ, প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশ সর্বক্ষেত্রে। নৈতিক অবক্ষয় যখন সামাজ জীবনে প্রাধান্য লাভ করে-তখন মানুষে মানুষে প্রেম, সম্প্রীতি প্রভৃতির বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে দেখা দেয়। আমাদের সমাজ জীবনে তাই ভালোবাসার ঘাটতি স্বাভাবিক সামাজিক প্রবণতা। আর এ কারণেই শ্রেণি সৎগ্রাম। নৈতিক মূল্যবোধের উন্নতি না ঘটলে ভালোবাসার মূল্যবোধ গড়ে ওঠা দূরপরাহত ব্যাপার।
আমাদের সাহিত্যে প্রকৃতি মানুষ জীবন কতটা নিজস্ব সৌন্দর্যে বহমান। কতটা বিকৃতির শিকার?
: প্রকৃতি মানুষের প্রতি মুহূর্তের সহচর। বলা হয় বাংলাদেশ ‘ষড়ঋতুর বঙ্গশালা’। সেই অর্থে আমাদের সাহিত্যে প্রকৃতির স্বাভাবিক আবেদন লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। আকাশ, বাতাস, নদী, পাহাড় ‘ধানখেত, বুনোহাঁস, বালুকার চর’ কিংবা ‘আলোকে শিশিরে কুসুমে ধান্যে হাসিছে নিখিল অবনী’ কিংবা ‘ঘুম জড়ানো ঘুমতি নদীর ঘুঙুর পরা পায়’ ইত্যাদি আমাদের কবিতায়, গানে, নাটকে। কথাসাহিত্যে নানাভাবে এসেছে এবং আসেওনি। বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন আমাদের জীবনে কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমানে হালের লাঙলের জায়গায় ট্রাক্টরের আগমন ঘটেছে। কিন্তু আমাদের বুকের যন্ত্রণা বা আনন্দাভূতিতে ট্রাক্টরের শব্দ তো শোনা যায় না।
বর্তমানে আমাদের প্রকৃতিতে প্রযুক্তি যেমন এসেছে তেমনি মানুষের কারণেই প্রকৃতির বিরূপ প্রতি-ক্রিয়াও জীবনধারণের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। জীবনের প্রয়োজনে প্রকৃতি নানাভাবে ও নতুনভাবে আমাদের সাহিত্যের বিশেষ উপাদান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রযুক্তির ব্যবহার সাহিত্যের জন্য কতটা ভালো, কতটা মন্দ?
: সাহিত্যের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বলা যায়। প্রকাশনার ক্ষেত্রে এ উন্নতি অভূতপূর্ব। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, অনলাইন ব্যবস্থা ফেসবুক, হোয়াটসআপ, আধুনিক প্রেস সব মিলিয়ে মুদ্রণ ও পঠনের ক্ষেত্রে অসাধারণ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে প্রযুক্তির নেতিবাচক দিকটারও ভূমিকা কম শক্তিশালী নয়। এখন বইপত্র পত্রিকা, জার্নাল প্রভৃতি পড়ার প্রবণতা ব্যাপক নিম্নমুখী কারণ অনলাইন প্রভৃতি সাহিত্য সৃষ্টি ও সাহিত্য পাঠের ক্ষেত্রটাকে ব্যাপকভাবে সংকুচিত করে দিয়েছে, যার ভবিষ্যৎ রীতিমতো আশঙ্কাজনক।
বর্তমানে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন? কেমন হওয়া উচিত?
: জনগণ সরকারের কাছাকাছি সম্পৃক্ত হওয়ার অধিক সুযোগ যাতে পায় রাষ্ট্রের জন্য সেটিই অধিক কার্যকর। এটাই আমাদের কাম্য।
সাতক্ষীরার বর্তমান সাহিত্যচর্চার অবস্থা কেমন? কী হলে আরও সক্রিয় হতে পারে?
: সাতক্ষীরার সাহিত্যচর্চার অবস্থা সব সময় সক্রিয় থাকে। তবে করোনাকালীন অনেকটা স্তব্ধ হয়ে পড়ে। বর্তমানে ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক পত্রপত্রিকার মধ্যে বর্তমানে সক্রিয়গুলো হলো-
পল্টু বাশারের সম্পাদনায় ঈক্ষণ, সৌহার্দ সিরাজের সম্পাদনায়-সৌম্য, নিশীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত বিজয়, স.ম. তুহিন সম্পাদিত ম্যাংগ্রোভ, মন্ময় মনির সম্পাদিত ‘কীর্তিগাথা’ গাজী আজিজুর রহমানের নদী। বেশ কয়েকটা দৈনিক পত্রিকারও ভূমিকা বিদ্যমান।