‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার।
মানুষের এ অধিকার পূরণকল্পে আওয়ামী লীগ সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি আরও বলেছেন, খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
খাদ্য উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে খাদ্যের নিরাপত্তা ও পুষ্টিমান বজায় রাখার গুরুত্বের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে উল্লেখ করেছেন। বস্তুত দেশের জনগণের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা না হলে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। মানুষের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও বাজারে ভেজাল ও মানহীন পণ্যের সরবরাহ কমছে না।
বস্তুত উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যেমন সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন, তেমনই ভোক্তাদেরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সুস্বাস্থ্যের মূলনীতি, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যবিধি’। দেশে ভেজাল ও দূষণমুক্ত নিরাপদ খাদ্যের প্রাপ্তির জন্য ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ প্রণিত হয়েছে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশে ভেজাল ও দূষণযুক্ত খাবারের বিরুদ্ধে নানারকম কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও সারা দেশে ভেজালের মহোৎসবের বিষয়টি উদ্বেগজনক। অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের প্রায় প্রতিটি খাদ্যসামগ্রীই ভেজালমিশ্রিত। ভেজাল খাদ্যের কারণে প্রতিবছর দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রশ্ন হলো-এত অভিযানের পর খাদ্যে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য কমছে না কেন?
প্রচলিত শিশুখাদ্যও ভেজালমুক্ত নয়; এমনকি জীবনরক্ষাকারী ওষুধও ভেজালমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। ভেজাল ও মানহীন এসব পণ্য কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন; সেই সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বস্তুত ভেজাল ও ক্ষতিকর খাবার অবাধে বিক্রি হলেও দেশে ক্রেতাদের কোনো শক্তিশালী সংগঠন না থাকায় অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে পারছে না। বাজারের যা অবস্থা, তাতে স্বাস্থ্যসচেতন অনেকে ফলমূল কেনাই বন্ধ রেখেছেন।
কৃত্রিম উপায়ে পাকাতে গিয়ে এবং ফল দ্রুত পচন থেকে রক্ষার লক্ষ্যে নানারকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। ভোক্তা অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় বাজার তদারকির কর্মকাণ্ডে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগের মাধ্যমে ভেজাল ও প্রতারণার হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা জরুরি।
বস্তুত বাজার তদারকির কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন না হওয়ায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এর সুবিধা নিচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। খাদ্যে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য দেখে বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সরষের ভেতর যাতে ভূত বাসা না বাঁধে, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বস্তুত নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা না হলে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রবল।
শিশুখাদ্যসহ ওষুধের মতো জরুরি পণ্যেও ভেজাল মেশানোর কাজে কিছু ব্যক্তি জড়িত। এমন কার্মকাণ্ড থেকেই অসাধু ব্যক্তিদের নৈতিক অধঃপতনের বিষয়টি স্পষ্ট।
কাজেই অসাধু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা বলাই বাহুল্য।