Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামইউক্রেন সংকট: ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিত

ইউক্রেন সংকট: ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিত

প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডি বলেছিলেন, একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর জন্য মুক্ত ও স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং তাদের নিজেদের ব্যবস্থা বেছে নেয়ার বিষয়ে স্বাধীন, যতক্ষণ না তা অন্যের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মিলার ‘দৈনিক মানবজমিন’ এর সাথে সাক্ষাৎকারে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পুনরুল্লেখ করে বলেছেন সেটা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
জন এফ কেনেডির এই বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ইউরোপকে ব্যাখ্যা করলে হয়তো ইউক্রেন সংকটে জড়িত পরস্পর বিরোধী শক্তিগুলোর অবস্থানকে বোঝা আরো সহজ হতে পারে।

যুদ্ধের প্রচারণা:
ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার লক্ষাধিক সেনা সমাবেশকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন হামলার সম্ভাব্য দিনক্ষণ গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে উল্লেখ করছে। তাতে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনকে আক্রমণ করার কথা প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছে। পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠে যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কায় দূতাবাস থেকে তাদের কূটনীতিকদের সংখ্যা কমাতে শুরু করে। পশ্চিমা বিশ্ব কর্তৃক যুদ্ধের দামামা বাজানোর কারণে ইউক্রেনে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধের আগেই অর্থনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের সমালোচনা করে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন : “আমি পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে বেশি উত্তেজনাপূর্ণ বলে মনে করি না। বিদেশে একটা অনুভূতি আছে যে এখানে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ব্যাপারটা এমন নয়।” তিনি এমন সময়ে একথা বললেন যখন কিছু পশ্চিমা মিত্র রাশিয়ার সম্ভাব্য আসন্ন আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করছে।

ইউক্রেন সংকট এর গভীরে যা আছে:
ইউক্রেন সংকট যতটুকু দৃশ্যমান তার থেকেও অনেক গভীরে এর অবস্থান। ১৯৯১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিনা রক্তপাতে রাশিয়াসহ ১৫ টি দেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কোল্ড ওয়ার এর যুগ শেষ হয়ে যায় এবং বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা তখন থেকেই পুরো ইউরোপের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যাটোকে পুনর্গঠন করে তার পরিধি বাড়াতে থাকে। পুরো ইউরোপকে ন্যাটো সামরিক জোটের মধ্যে নিয়ে আসতে চায়।
পুতিন মনে করেন, ১৯৯০ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ব্যাপকভাবে দুর্বল রাশিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা নির্ধারিত একটি এজেন্ডা মেনে নিতে বাধ্য করেছিল। আজকের সংকটের শুরুও সেখান থেকেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে পুতিন ইতিহাসের বড় রাজনৈতিক বিপর্যয় বলে মনে করেন।
ন্যাটো কোন অর্থনৈতিক জোট নয়। এটা একটি শক্তিশালী সামরিক জোট । ১৯৪৯ সালে মাত্র ১২ টি দেশকে নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (USSR) এবং তার সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে প্রতিহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়। যে দেশটির বিরুদ্ধে ন্যাটোর জন্ম হয়েছিল বর্তমান বিশ্বে সেই দেশটির কোন অস্তিত্ব নেই। ৩০ বছর আগেই দেশটি বিলীন হয়ে গিয়েছে এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শও সেই জনপদে আর বিরাজমান নেই। তবে ন্যাটোকে বিলুপ্ত বা সংকুচিত করা হয় নি বরং সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে ন্যাটোকে পুনর্গঠিত করে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। ন্যাটোর সামরিক পরিধি ইউরোপে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে ন্যাটোর সদস্য সংখ্যা ৩০ । ন্যাটো এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইমাসি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থাকে সম্প্রসারণ এবং সংরক্ষণের জন্যই মূলত এখন ন্যাটো কাজ করছে। ওয়েস্টার্ন হেমিস্ফিয়ার এর বাইরে যুদ্ধ ছাড়াই ন্যাটো হল একমাত্র সামরিক চুক্তি যার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে তার সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করছে।
রাশিয়া মনে করে ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করে সেখানে ন্যাটোর সামরিক স্থাপনা তৈরি করা প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। রাশিয়ার এর বিরুদ্ধে বরাবরই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। ইউক্রেন রাশিয়ার ব্যাকইয়ার্ড এবং তার সাথে রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। ইউরোপে নিরাপত্তার বর্তমান কাঠামো এবং ন্যাটোর ব্যাপ্তি যেভাবে প্রসারিত হয়ে রাশিয়ার সীমান্তে এসে পৌঁছেছে রাশিয়া তাতে নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে বলে মনে করে।
রাশিয়াকে পশ্চিম থেকে বারবার আক্রমণ করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে, ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু বলশেভিক বিরোধী মিত্র শক্তি আক্রমণ করেছিল। জার্মানি আক্রমণ করেছিল দুবার, যার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ২৬ মিলিয়ন সোভিয়েত নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পুতিন স্পষ্টভাবে এই ইতিহাসকে সামনে নিয়ে এসেছেন। রুশ সীমান্তের কাছাকাছি ন্যাটোর অবকাঠামো নিয়ে রাশিয়ার বর্তমান উদ্বেগ এবং নিরাপত্তা গ্যারান্টির জন্য মস্কো তার দাবির সাথে সেই ইতিহাসকেও যুক্ত করেছে। রাশিয়া তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়। তার প্রস্তাব,ন্যাটোকে প্রকৃত অর্থেই ১৯৯০ সালের পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে হবে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য পদ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধ করতে হবে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পূর্ববর্তী সোভিয়েত ব্লকের বহুদেশকে ন্যাটোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা পূর্বে সোভিয়েভুক্ত সামরিক জোট ‘ওয়ারশ প্যাক্টে’ একীভূত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া কয়েকটি দেশকেও ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২০০৮ সালে ন্যাটোর একটি ডিক্লারেশন মূলত ঘটনাকে উসকে দেয়। বুখারেস্ট সামিটে ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেন এবং জর্জিয়ার ইউরো-আটলান্টিক জোটে সদস্য হওয়ার ইচ্ছাকে স্বাগত জানায় এবং সম্মত হয় যে এই দেশগুলি ন্যাটোর সদস্য হবে। রাশিয়া এই ডিক্লারেশনের সরাসরি প্রতিবাদ করে। এরপরও ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোটামুটিভাবে একটা সহনীয় অবস্থান বিরাজ করছিল।

পরবর্তী সঙ্কট শুরু হয় ২১ নভেম্বর ২০১৩ সালে যখন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি অর্থনৈতিক অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি স্থগিত করেন। তার পরিবর্তে রাশিয়ার দেয়া অনুরূপ একটি অর্থনৈতিক ডিল তিনি সমর্থন করেন। এই সিদ্ধান্ত দেশের অভ্যন্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ শক্ত হাতে বিদ্রোহ দমন করতে গেলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। উপরন্তু উস্কানিতে বিদ্রোহ আরও সহিংস হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট সিনেটর জন ম্যাককেইন সে সময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কয়ারে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সেখানে সমবেত বিদ্রোহীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। পার্লামেন্টারি ক্যু করে প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত করলে তিনি প্রাণরক্ষার জন্য সপরিবারে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যান। তখন পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থনপুষ্ট গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতাচ্যুত ইয়ানুকোভিচের সমর্থনে ইউক্রেনে অধিকাংশ রুশ ভাষী পূর্ব এবং দক্ষিণ অঞ্চলে অস্থিরতার জন্ম হয়।

রাশিয়া দ্বারা ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ:
প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতাচ্যুত এবং পশ্চিম সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পটভূমিতে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান হয়। ইউক্রেনের ক্রিমিয়ার সন্নিকটে সেভাস্তোপোলে রাশিয়ার ব্ল্যাক সি ফ্লিটের একটি প্রধান নৌ ঘাঁটি। শতাব্দীরও উপরে এই নৌঘাঁটির অবস্থান। সেভাস্তোপোলে এই নৌঘাঁটি থেকে রাশিয়া ব্ল্যাক সি নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিমিয়া তখন পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদে রাশিয়ার কাছে লিজ দেয়া ছিল। ক্রিমিয়ায় বসবাসকারী অধিকাংশ জনগণই রুশ ভাষাভাষী । উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্রিমিয়ায় প্রাদেশিক সরকার এক গণভোটে ইউক্রেন থেকে বের হয়ে রাশিয়ার সাথে একীভূত হওয়ার অনুমোদন লাভ করে। প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়ে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। নতুন করে কোন সেনা পাঠাতে হয়নি। সেভাস্তোপোলের নৌ ঘাঁটিতে অবস্থানরত সেনারা ক্রিমিয়ার দখল নিয়ে নেয়। পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ছিটেফোঁটা অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে কিন্তু ক্রিমিয়া পুনর্দখলে তারা এর বাইরে আর কিছু করতে পারেনি। ক্রিমিয়া ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়ার অংশ ছিল। ১৯ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫৪ সালে তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ একটি ডিক্রি জারি করে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ান সোভিয়েত ফেডারেটিভ সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক থেকে বের করে ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক এ স্থানান্তর করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে ক্রুশ্চেভের কল্পনারও অতীত ছিল যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবে এবং ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অংশ হবে।

অর্থনৈতিক অবরোধের খন্ড চিত্র:
সাম্প্রতিককালে পশ্চিমাদের পাঠানো ছোটখাটো সামরিক সরঞ্জাম বিশাল শক্তির বিপরীতে ইউক্রেনের আত্মরক্ষায় জন্য যথেষ্ট কিছু নয়। ইউক্রেন আক্রান্ত হলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কিছু বুলি আওড়ানো ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত কোন দেশ ইউক্রেনকে রক্ষার কোন মিলিটারি এনগেজমেন্টের কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ন্যাটোর মধ্যেও বিভাজন রয়েছে। জার্মানি সামরিক সংঘাতের ঘোর বিরোধী। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নেও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার মতভেদ রয়েছে। জার্মানি তার নিজের এবং ইউরোপের অর্থনীতিকে সংকটের মুখে ফেলতে চায় না। যদিও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্রদের সাথে সংহতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি রাশিয়া থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানি পর্যন্ত আসা নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইনকে অর্থনৈতিক অবরোধের সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করতে সম্ভবত সম্মত নন।
অর্থনৈতিক অবরোধে ইউরোপও দুর্বল হবে, কারণ ইউরোপ অর্থনৈতিকভাবে অনেকাংশে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল বিশেষ করে জ্বালানি ক্ষেত্রে। ইউরোপের শতকরা ৩০ ভাগ জ্বালানির উৎস গ্যাস এবং তা আসে রাশিয়া থেকে। জার্মানি ও ফ্রান্স সহ অনেক দেশ তাদের আন্তর্জাতিক কমিটমেন্ট থাকার পরও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে বেশ প্রাধান্য দিচ্ছে।
ইউক্রেন আক্রান্ত হলে হয়তো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আসবে, কিন্তু এই অবরোধ দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কি ইউক্রেনকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। আক্রান্ত হলে ইউক্রেনের আরো ভূমি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ইউক্রেনের আরো বিভক্তিও অসম্ভব নয়। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনে স্বাধীনতাকামী কয়েকটি অংশ এখনো তৎপর বহু বছর ধরে।

ভূ রাজনৈতিক বাস্তবতা:
ইউক্রেন রাশিয়ার তুলনায় সবদিক বিবেচনায় খুবই ছোট একটি দেশ। রাশিয়ার সাথে তার রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। ইউক্রেন আবার বাফার কান্ট্রিও বটে যা রাশিয়াকে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো থেকে আলাদা করে রেখেছে। ইউক্রেনের রাশিয়া বিরোধী সামরিক জোটে যোগদানের প্রধান অন্তরায় তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান।
রাশিয়া পরমাণু শক্তিধর একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো রাশিয়ার সরাসরি সামরিক প্রতিপক্ষ। এই ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই ইউক্রেনের ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের আকাঙ্ক্ষাকে রাশিয়া নিজের প্রতি আক্রমণের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান এই মুহূর্তে সুবিবেচিত পদক্ষেপ নয়। নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণ সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করাই শ্রেয়। সুইডেন এবং ফিনলান্ড ন্যাটোভুক্ত না হয়েও তাদের নিরপেক্ষতা এবং উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে।
গত এক দশকে রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র অনেক কৌশলগত বিষয়ে একে-অন্যের মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ইউক্রেনের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে তার আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকেই প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি। বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানই একমাত্র উত্তম পন্থা। যুদ্ধে কোন সমাধান নেই।

বিশ্ব শান্তির জন্য বহুপাক্ষিক বিশ্ব রাজনীতিই সর্বোত্তম বিকল্প। একুশ শতকের বিশ্ব ব্যবস্থায় এটাই আজকের বাস্তবতা।

লেখক: ডা: রফিকুর রহমান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments