শুরুটা
রোবটিকস নিয়ে আগ্রহ পাঁচজনের। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় একে অপরের সঙ্গে পরিচয়।
টিম এক্সো ম্যাক্সের সদস্যরা হলেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের মো. নুর আহমাদ, নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাহদী বিন ফেরদাউস, নওগাঁর নজিপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নাদিম শাহরিয়ার অপূর্ব, চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. ত্বসিন এলাহী এবং নরসিংদীর লোরেটো কলেজের সানজিম হোসেন।
স্কুল থেকে নাসায়
সময় তখন ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস। অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা খুঁজতে খুঁজতে চোখে পড়ে নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ। এক্সো ম্যাক্স দলের সদস্যদের গ্রুপে তা শেয়ার করা হয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, যা নাসার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় তারা সেখানে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের বিভাগ রয়েছে। সেসবের মধ্যে ‘এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ বিভাগে অংশগ্রহণ করার পরিকল্পনা করে টিম এক্সো ম্যাক্স। সবার সম্মিলিত আইডিয়া থেকে ‘স্মার্ট রোড সেফটি বিস্ট’ বা ‘এসআরএসবি’ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশনের পরে তাদের প্রথম রাউন্ড ছিল ‘লিন ক্যানভাস’। এই রাউন্ডে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রডাক্টের বিবরণ দিতে হয়। লিন ক্যানভাস রাউন্ড সাবমিশনের পর প্রথম ধাপটি তাঁরা সফলভাবে পার করেন। পরের ধাপে তাঁদের প্রডাক্ট বানাতে যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই সাবমিট করতে হয়। তখন ছিল নভেম্বর মাস। মাহদী, নাদিম এবং ত্বসিনের সামনে এসএসসি পরীক্ষা। পড়াশোনার চাপ। তবু তাঁরা ডিসেম্বরে বিভিন্ন জেলা থেকে এক হওয়ার পরিকল্পনা করেন। এরপর রাজশাহী এসে প্রডাক্টের সব কাজ করে ফেলেন। একটি রিসার্চ পেপার ও ভিডিও তৈরি করে ফেলেন। তারপর সাবমিশনের পালা। ডেডলাইন ১২ জানুয়ারি থাকলেও এক দিন আগেই সাবমিশন সম্পন্ন করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে তাঁরা গ্লোবাল ফাইনালিস্ট হন।
এসআরএসবি
এক্সো ম্যাক্স স্মার্ট রোড সেফটি বিস্ট (এসআরএসবি) মূলত গাড়ির গিয়ার বা যন্ত্রাংশ। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ নকশার মাদারবোর্ড, ভাইব্রেটর, রিডার সেন্সর, টেকোমিটার, ক্যামেরা ও অ্যাকসিডেন্ট ডিটেক্টর। প্রতিটি কম্পোনেন্টের সঙ্গে যুক্ত ডিসপ্লে চালকের সামনে থাকবে। এতে থাকবে ভয়েস সেন্সর, যা প্রয়োজনে চালককে সতর্ক করবে। এই যন্ত্রাংশ ব্যবহারে গাড়িটি ড্রাইভার ছাড়া নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারবে। পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করে গাড়িটি মনিটর করা যাবে। চালক অসতর্ক হয়ে পড়লে তাঁর আচরণ বিশ্লেষণ করে ভুল ধরিয়ে দেবে এআই বট। সম্পূর্ণ এ গিয়ারটি পেতে খরচ করতে হবে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এটি ব্যবহার করে রোধ করা যাবে সড়ক দুর্ঘটনা।
সেরা পাঁচে
প্রতিবছর কনরাড ফাউন্ডেশন এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে থাকে। মূলত এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে এবং শেষ হয় পরের বছরের এপ্রিলের শেষে। মূল আসরে যাওয়ার আগে তিনটি ধাপ পার করতে হয়। যেসব টিম এই তিনটি ধাপ অতিক্রম করতে সক্ষম হয় তারা সরাসরি নাসা জনসন স্পেস সেন্টারে অংশগ্রহণ করে থাকে। যেখানে প্রতি বিভাগ থেকে পাঁচটি করে টিম বাছাই করা হয়। তাদের মধ্যে এক্সো ম্যাক্স টিমও তিন ধাপের বাছাইপর্ব উতরে নাসা জনসন স্পেস সেন্টারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে। সবশেষে চূড়ান্ত রাউন্ড যাকে ‘কনরাড ইনোভেশন সামিট’ বলা হয়, যা নাসার হাস্টন স্পেস সেন্টারে ২৩-২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভিসা জটিলতায় টিমের সদস্য নাদিম ও নূর যেতে পারেননি। বাকি তিনজন সদস্যই চূড়ান্ত আসরে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই প্রতিযোগিতায় পেটে কনরাড স্কলার দেওয়া হয়েছে শুধু একটি টিমকে। তবে অংশগ্রহণকারী বাকিদের জন্য ছিল স্কলারশিপের ব্যবস্থা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে নাদিম বলেন, ‘ভবিষ্যতে একটি রোবটিকস কম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে রোবট নিয়ে নিত্যনতুন গবেষণার পাশাপাশি বাজারজাত করা হবে। এ ছাড়া গাড়ি উৎপাদনকারী কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে চাই। আর এক্সো ম্যাক্সকে একটি বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাই।