Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeজাতীয়থার্টি ফার্স্টে জৌলুস হারাল কক্সবাজার

থার্টি ফার্স্টে জৌলুস হারাল কক্সবাজার

ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

প্রতি বছর শেষ দিনে সূর্যাস্ত দেখে বছরকে বিদায় জানাতে উপচে পড়া ভিড় থাকে দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে। এবারো বছরের শেষ সূর্য অস্ত গেছে। কক্সবাজরও প্রস্তুত ছিল পর্যটকের ভিড় সামলাতে। কিন্ত এবারের থার্টি ফার্স্টের সেই জৌলুসের দেখা মেলেনি কক্সবাজার সৈকতে।

সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেল-রেস্তোঁরা অনেকটাই ফাকা। নেই সড়ক-মহাসড়কে পর্যটকবাহী যানের সাড়ি। এক প্রকার স্তব্ধ বিচ এলাকা। অথচ থার্টি ফাস্ট নাইট এবং শুক্রবারের সাপ্তাহিত ছুটিতে পা ফেলার জায়গা পাওয়ার কথা ছিল না সৈকতে।

লাখ লাখ পর্যটকের পরিবর্তে ৭০/৮০ হাজার পর্যটক শুক্রবারের গোধূলীতে সৈকতে ২০২১ সালের শেষ সূর্যাস্তকে বিদায় জানিয়েছেন। পর্যটকের অনুপস্থিতি পর্যটন ব্যবসায়ীদের ভাবিয়ে তুলেছে।

কক্সবাজারের হতাশাগ্রস্ত পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নানা কারণে এবারের থার্টি ফাস্টে সৈকতে পর্যটকের ‘মহামিলন মেলা’ বসেনি। প্রথমত করোনা পরিস্থিতির কারণে সৈকতে এবং প্রকাশ্যে যে কোনো অনুষ্টান আয়োজন নিষিদ্ধ আছে। এ কারণে দেশের নানা প্রান্তের পর্যটক তাদের ভ্রমণ কর্মসূচি বাতিল করেছে। দ্বিতীয়ত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও পারকী সৈকতে লোকসমাগম বন্ধ করে দেওয়ার খবরে অনেকেই কক্সবাজার সৈকতেও একই আদেশ নিয়ে বিভ্রান্তির মুখে পড়ে শেষ মুহূর্তে কক্সবাজার যাত্রা বাতিল করে।

এ ছাড়াও সাম্প্রতিক কক্সবাজার সৈকত কেন্দ্রিক নারী ধর্ষণ এবং হোটেলে আটকিয়ে রেখে স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছে যে, অনেকেই ভ্রমণের প্রধান স্থানটি নিয়ে বিব্রতবোধ করেছেন। 

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সৈকত কেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দলের কারণেই কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্রের এখন বেহাল অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন সন্ত্রাসীদের বিষয়টি তেমন প্রকাশ পায়নি। কিন্তু এক নারী ধর্ষণের ঘটনাটি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে আশিকের মত ‘সৈকত সন্ত্রাসী বাহিনীর’ কথা চাওর হওয়ার পর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের পর্যটনের হালহকিকত দেখভাল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান শুক্রবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তার বিষয়টিকে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশী অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষে পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত ইনানী, হিমছড়ি ও কক্সবাজার সৈকতে কাজ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘পর্যটনের স্বার্থে সাগর পাড়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ট বন্ধ করার জন্য প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। পর্যটন কেন্দ্রিক ‘সৈকত সন্ত্রাসী’দের চিরতরে উৎখাত করা হবে।’

কক্সবাজার সৈকতে দেশী পর্যটকের বেহাল পরিস্থিতিতেও বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা ছিল স্বাভাবিক। গত দুইদিন ধরে কিছু বিদেশী পর্যটককে সৈকতে দেখা গেছে। নিজেদের মতো করে সমুদ্রের পানি এবং বিচের রৌদ উপভোগ করেছেন এসকল বিদেশি পর্যটকরা।

এ বিষয়ে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাশিয়ান একদল পর্যটক ভারত ঘুরে এসেছেন কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’

শুক্রবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থার্টি ফার্স্ট নিয়ে পর্যটন ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে। বছরের শেষ দিনে যেহেতু প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটকের ভিড় জমে সেহেতু ব্যবসায়ীরা পুরোদমে পুরো প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এরকম ‘নিরানন্দ’ পরিস্থিতি হবে সেটা ব্যবসায়ীদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত।

সৈকতের ফটোগ্রাফার রুবেল জানান, তিনি বছরের শেষ দিন শুক্রবার অন্তত ৫/৬ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশায় দিন গুনছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যা নাগাদ তিনি পেয়েছেন মাত্র ৪০০ টাকা। 

নিরিবিলি অর্কিড নামের রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মৌলানা জামাল হোসেন জানান, গেল বছরের থার্টি ফাস্টের তুলনায় এবার ৫০ ভাগ ব্যবসা কমে গেছে।

রোদেলা নামক একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মকবুল হোসেন বলেন, ‘গেল বছরের থার্টি ফার্স্টে আমার হোটেলে বিক্রি হয়েছিল এক লাখ টাকার বেশি। কিন্তু আজ (শুক্রবার) পুরো দিনে মাত্র ৩০ হাজার টাকা হয়েছে।’

কক্সবাজার সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, আমার আবাসিক হাটেলের ৬০ কক্ষের মধ্যে মাত্র ১০টি কক্ষ ভাড়া হয়েছে। আরো ৮/১০টি কক্ষের অগ্রিম বুকিং পর্যটকরা বাতিল করে দিয়েছেন। আমার রেস্টুরেন্টে অন্যান্য বছরের এমন দিনে দেড়-দুই লাখ টাকার ব্যবসা হতো। কিন্তু এবার ৩০ হাজার টাকার মত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, সাগর পাড়ের কেবল তারকা মানের হোটেলগুলো পর্যটকপূর্ণ। এরকম হোটেলের সংখ্যা হচ্ছে ১০/১৫টি। অন্য ৪৫০টি আবাসিক হোটেল-মোটেলে অন্তত ৫০ ভাগ কক্ষ খালি রয়েছে।

তবে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীদের আশা দেখাচ্ছে বিদেশি পর্যটকরা। তাদের নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা করছে টুরিস্ট পুলিশ। এ ছাড়াও সকল পর্যটকের জন্য কক্সবাজার সৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। 

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যটকদের বিষয়টি আমরা ভালভাবে দেখছি। তাছাড়াও সৈকতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।’ আকস্মিক এমন সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গেল সপ্তাহের তুলনায় পর্যটক কম এসেছে।’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments