Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকডুলাসকে দেবদূত ভাবছে শ্রীলংকা

ডুলাসকে দেবদূত ভাবছে শ্রীলংকা

ঈশ্বর প্রদত্ত স্বর্গভূমির নাম শ্রীলংকা-কয়েক মাস ধরে এই শব্দগুচ্ছ লংকার জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চারণ করে। পরিবর্তিত সংস্করণ খুব আকর্ষণীয় এবং শিল্প ষ্টার প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় আনত করে।

কিন্তু আমরা কি আসলেই এই কথাগুলোর গভীরতা উপলব্ধি করি-এ প্রশ্নের প্রতিনিয়ত অনুরণন আমাকে ভাবাচ্ছে।

ভারত মহাসাগরের মুক্তা শ্রীলংকা আজ পুড়ে যাওয়া এক জগাখিচুড়ির নাম। রামায়ণ ছিল একটি মহাকাব্যিক মজার গল্প। বইটি আমি সব সময় বাবার (সাবেক স্পিকার উইজেসিংহে জয়বীর মুদিয়ান্সেল লোকুবন্দরা) বিশাল লাইব্রেরি থেকে পড়তে পছন্দ করতাম। কাঠের সিলিংয়ের পরিণতি কল্পনা করুন। প্রতিটি রাক্ষস-প্রাসাদ লেজের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে হনুমান। কিন্তু কখনো ভাবিনি টিভিতে দৃশ্যটা বাস্তবে দেখব। আজ নিজেদেরই প্রেসিডেন্টের বাড়ি, সচিবালয়, মন্দিরের গাছগুলো দখল করে নিয়েছে হতাশায় কাতর তরুণ এবং অসন্তুষ্ট শ্রীলংকানরা।

রাজকীয় শ্রদ্ধার স্থানগুলো পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য আমরা শুধু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম আর দেখলাম। এই আগুনের লেলিহান শিখা কেন? এর খুব আকর্ষণীয় উত্তর খুঁজতে চলে যান ১৯৪৮ সালে। দোষারোপের খেলা শুরু করুন ওখান থেকেই। রাজনীতিবিদদের ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনা শুরু করুন। নিজেদের বিবেক জাগ্রত করুন-উত্তর পেয়ে যাবেন। তবে সত্যি কথা-আমরা রাজাপাকসেদের যথাযথ সহযোগিতা দিতে পারিনি।

গোতা বাড়ি যাও : নন্দসেন গোতাবায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর। কেন?

কারণ, তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেননি। সংবিধান সংশোধন করে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। আমি নিজে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দার নির্দেশে সেই সময়ে সংসদ-সদস্য হিসাবে ভোট দিয়েছিলাম। গোতাবায়াকে বেছে নেওয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নামাল রাজাপাকসে সেসময় যথাযথ বয়স অর্জন করতে পারেননি বলে। এই নির্দেশগুলো গোতাবায়াকে দেওয়া হয়েছিল এবং এটাই যৌক্তিক ছিল।

মাহিন্দা রাজাপাকসের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসাবে আমার পাঁচ বছরের মেয়াদে আমাদের দুজনের অনেক সময় একসঙ্গে কেটেছে। কারণ, অন্য কেউ তার সঙ্গে দেখা হওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি ছিলেন না। এই বিচ্ছিন্নতার সময়ে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা আমার সঙ্গে অনেক মতামত শেয়ার করেছেন। আমার কানে বাজছে-কীভাবে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা তার গভীর রুক্ষ কণ্ঠে বলতেন, ‘… প্রেসিডেন্টের আসন ঠিক একটা রাজকীয় অগোছাল জিনিস।’

দুই বছর ধরে আমরা দেখেছি তার ভাইয়ের সঙ্গে কী ঘটেছে? তার কাছে প্রধানমন্ত্রীর ফোন কলগুলো অযৌক্তি হয়ে যাচ্ছিল আর দেশটি নর্দমায় ছিটকে যাচ্ছিল।

কীভাবে এগিয়ে যাব আমরা : রাজাপাকসে পরিবার আজকের এ অবস্থানে এসেছে শুধু তাদের রাজনৈতিক কৌশলের কারণে। তারা ভবিষ্যতেও রাজনীতি করবে এবং এগিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা এখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। এই মুহূর্তে প্রশ্ন হলো-আমরা যে মহাবিপদের মধ্যে আছি, তা থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়।

শ্রীলংকার সামনে একটিমাত্র রাস্তা আছে-যদি কেউ সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে তবেই উত্তরণ। আমাদের এখন জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু এ সহযোগিতা কে করবে? বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। আমেরিকা তার সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে। ইউরোপ চিন্তায় আছে কোনোভাবে যেন পুতিন তাদের ঘরে না ঢুকতে পারে। এদিকে ‘শেখরা’ চিন্তিত কীভাবে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করবে। বড় ভাই মোদি ইতোমধ্যে শ্রীলংকার পিআর গ্যাম্বিটে ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। ভারত চিন্তিত কীভাবে সেটার সমাধান করবে। চীনের কাছে শ্রীলংকাকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। কেননা তারা ভাবছে কোনোভাবে যেন আর কোনো ভাইরাস তাদের দেশে প্রবেশ না করে।

দেবতাদের দেওয়া এ স্বর্ণভূমিকে বাঁচাতে কে এগিয়ে আসবে : শ্রীলংকা আজ বিভক্ত। আমি গর্বিত, ২০০৯ সালের মে মাসে সংসদের মাঠে প্রেসিডেন্টের পাশে ছিলাম। যখন তিনি জোর আওয়াজ তুলে বলেছিলেন, ‘এখন থেকে এদেশে দুটি দল থাকবে-যারা মাতৃভূমিকে ভালোবাসে আর যারা বাসে না। যারা মাতৃভূমিকে ভালোবাসে তারা আমার সঙ্গে থাকবে এবং আমার বিপক্ষে দাঁড়াবে না।’

আমার বুক ধড়ফড় করছিল, সাহস নিয়ে ব্যক্তিগত রিভলবার ট্যাপ করে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে হচ্ছিল প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের প্রতি যে কোনো হুমকি গুলি করে উড়িয়ে দিতে পারি। আর আজ শ্রীলংকার অবস্থা এমন যে, দেশে মাত্র দুটি দল রয়েছে, যারা অর্থের জন্য রাজাপাকসের শাসনকে সমর্থন করছে এবং যারা করছে না। অবস্থা এমন যে, রাজাপাকসে পরিবারের পক্ষে কথা বলতে এগিয়ে আসা যে কোনো ব্যক্তিকে দাস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই একটি পরিবারের প্রতি যে পরিমাণ ঘৃণা প্রদর্শন করা হচ্ছে তা বলে বোঝানো যাবে না। রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে জড়িত হয়ে যে কোনো সমস্যার সমাধান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ’

এদিকে ‘মিস্টার ক্লিন অ্যান্ড মাস্টার ব্রেইন’ রনিল বিক্রমাসিংহে আজ রাজাপাকসে পরিবারকে কট্টর হিসাবে জাতিভুক্ত করছেন। অন্যদিকে ডুলাস আলাহাপেরুমা শ্রীলংকার মানুষের কাছে একজন দেবদূত হিসাবে সমাদৃত হচ্ছেন। এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠরা মনে করে, এ নরক থেকে রক্ষার্থে ডুলাস একটি ট্রোজান ঘোড়া হিসাবে আভির্ভূত হবেন। রনিলের ভাষা খারাপ। ইতোমধ্যে রনিলের গায়ে কালো দাগ লেগে গেছে। এত বছরের অর্জিত সব সম্মান তিনি দিনকে দিন হারাচ্ছেন।

উদিত লোকুবান্দ্রা : ১৯৭৭ সাল থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সাবেক স্পিকার ডব্লিউজেএম লোকুবন্দরার দ্বিতীয় পুত্র। কলম্বোয় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরবর্তী সময়ে লন্ডনেই চার্টার্ড ইনস্টিটিউটে মার্কেটিংয়ে পড়েন। লন্ডন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে একটি ডিপ্লোমা কোর্সও করেছিলেন পেশাগত যোগ্যতার জন্য। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে প্রশংসাপত্রও পেয়েছেন। বাবার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন উদিত লোকুবন্দরা। সেসময় তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। পরবর্তী সময়ে এসএলপিপি থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। মাহিন্দা রাজাপাকসের পিএস ছিলেন ৫ বছর। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দার সংসদবিষয়ক পিএস ছিলেন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments