Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeজাতীয়নয় বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি

নয় বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি

মহামারি করোনার প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, তীব্র খাদ্য সঙ্কটে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। বিশ্ববাজারে সরবরাহ-সঙ্কট ও উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার এখন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির পারদ আরও চড়েছে। যা গত নয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। তার আগে মে মাসে অর্থনীতির গুরুত্বপ‚র্ণ এবং স্পর্শকাতর এই সূচক উঠেছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। জুনে সেই সূচক আরও দশমিক ১৪ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উঠেছে। এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের জুন মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের জুনে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। যা লক্ষ্যের চেয়ে দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। গেলো অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছিল সরকার। জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মে মাসে হয়েছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, নয় বছর আগে ২০১১-১২ অর্থবছর শেষে সার্বিক গড় ম‚ল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখীই ছিল।

৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কিছুটা কমেছিল এই সূচক। ফেব্রæয়ারি থেকে তা আবার চড়ছে। বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, দেড় বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ‘ঘর’অতিক্রম করে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে ওঠে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে। এর প্রতি মাসেই বাড়ছে।

২০২১ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর পর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছিল। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। ১২ মাসের গড় হিসাবে জুন মাস শেষে (২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশ খানিকটা ওপরে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। এ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত দুই অর্থবছরে সরকার মূল্যস্ফীতি আটকে রাখার যে লক্ষ্য ধরেছিল, তাতে আসলে সফল হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা, বাজারের পণ্যমূল্যের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তারপরও বিবিএসের তথ্যকে মেনে নিয়ে যদি বলি, তাহলেও বলতে হয় একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি আমরা। কয়েক মাস ধরেই কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এতে অবশ্য বৈশ্বিক বাজারেরও একটা প্রভাব আছে। বিশ্ববাজারে সব জিনিসের দামই বেশ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন আজিজুল ইসলাম। বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, দেড় বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ৬ দশমিক শ‚ন্য ৫ শতাংশে ওঠে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে। এর প্রতি মাসেই বাড়ছে।

২০২১ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর পর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছিল। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে জুন মাসে মূল্যস্ফীতি নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

১২ মাসের গড় হিসাবে জুন মাস শেষে (২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশ খানিকটা ওপরে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে। এ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত দুই অর্থবছরে সরকার মূল্যস্ফীতি আটকে রাখার যে লক্ষ্য ধরেছিল, তাতে আসলে সফল হয়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন বাজেট গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা, বাজারের পণ্যমূল্যের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

তারপরও বিবিএসের তথ্যকে মেনে নিয়ে যদি বলি, তাহলেও বলতে হয় একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি আমরা। কয়েক মাস ধরেই কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এতে অবশ্য বৈশ্বিক বাজারেরও একটা প্রভাব আছে। বিশ্ববাজারে সব জিনিসের দামই বেশ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন মির্জা আজিজুল ইসলাম।

গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ ছাড়াল
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসের মতো জুন মাসেও শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। জুন মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক ম‚ল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ‘ঘর’ ছাড়িয়ে ৮ দশমিক শূন্য নয় শতাংশে উঠেছে। মে মাসে যা ছিল ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য ও অন্যান্য সেবার দাম বেড়েছে বেশি।

জুন মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ; মে মাসে হয়েছিল ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য বলছে, শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি। জুন মাসে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ শতাংশ ছুঁইছুঁই করছে; ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশে উঠেছে। খাদ্যবহির্ভূত ম‚ল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। জুন মাসে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। মে মাসে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জুনে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য আট শতাংশ।

শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি কেনÑএ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমার কাছেও অবাক লাগে, এটা কেন হচ্ছে। তবে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন অনেক পণ্যই দ্রæত গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। সে ক্ষেত্রে গ্রামে পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে কারণে দাম বেড়ে যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গ্রাম হোক আর শহরই হোক, বাজারের বাস্তব প্রতিফলন বিবিএসের তথ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে না। সে কারণেই বিবিএসের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ ক্ষেত্রে বিবিএসের তথ্য সংগ্রহে যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেটা দূর করা প্রয়োজন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments