কিছুদিন স্বস্তিতে কাটলেও পুনরায় করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির বিষয়টি উদ্বেগজনক। টানা ১৫ সপ্তাহ পর ২৪ ঘণ্টায় ৮৭৪ রোগী শনাক্ত হওয়া থেকেই অনুমান করা যায় দেশে করোনা পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে। তিন সপ্তাহের বিরতির পর আবারও করোনায় মৃত্যুর খবর এসেছে। দৈনিক রোগী শনাক্তের হার ১১ শতাংশে পৌঁছে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই সামাজিক সংক্রমণ শুরু হবে। করোনার প্রকোপ কমে আসায় দেশে বিভিন্ন খাতের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য যখন নানা চেষ্টা চলছে, তখনই চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
বস্তুত দেশে গত কয়েকদিনে শনাক্তের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ অনেকের উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এদিকে ভারতসহ আরও অনেক দেশে করোনার রোগী বাড়ছে। বুস্টার ডোজ নিয়েও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। কাজেই এখন আমাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সবাই সতর্ক থাকলে করোনার নতুন ঢেউ সীমিত রাখা কঠিন কোনো কাজ নয়।
কিভাবে করোনা মোকাবিলা করতে হয়, তা আমাদের জানা হয়ে গেছে। এখন দরকার সতর্ক থাকা। বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, মানুষ মাস্ক পরিধান করা ছেড়েই দিয়েছে। বস্তুত মানুষের উদাসীনতার কারণেই পুনরায় বাড়ছে করোনার প্রকোপ। লক্ষ করা গেছে, মার্কেটগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
আমাদের মতো জনবহুল দেশে এ ধরনের উদাসীনতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। লক্ষ করা গেছে, কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে অনেকে সতর্ক হওয়ার দরকার মনে করে না। দুঃখজনক হলো, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বহু শিক্ষিত মানুষও উদাসীন। যেভাবে নতুন করে করোনার প্রকোপ বাড়ছে, তাতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।
জানা গেছে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহজেই ফাঁকি দিতে সক্ষম। ফলে টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামী দিনে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট তুলনামূলক বেশি সংক্রমণশীল হবে। কাজেই সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
করোনার কারণে দেশের প্রধান রপ্তানি খাতগুলোতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজতে হবে এবং রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের সব ধরনের উদ্যোক্তা যাতে সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারেন, সেজন্য আগে থেকেই যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।
করোনার তাণ্ডবে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুনরায় করোনার প্রকোপ বাড়লে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগে থেকেই যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এখনো ১২ বছরের নিচের শিশুরা টিকা পায়নি।
কাজেই কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দেশে এমন এক সময় করোনার প্রকোপ বাড়ছে, যখন ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি মোকাবিলায় বিভিন্ন এলাকার মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থায় করোনার নতুন ঢেউ মোকাবিলায় সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।