বিক্ষোভকারীদের প্রতিক্রিয়া
ভেস্তে গেছে রাতের পর রাত জেগে থাকা। বিক্ষোভকারীদের নিদ্রাহীন লাল চোখগুলোতে জমে উঠেছে রাজ্যের হতাশা।
মুখে ফুটে উঠেছে তারই প্রতিচ্ছায়া- ‘আমরা হেরে গেছি, হেরে গেছে শ্রীলংকা।’ না, এটি কোনো নাটক বা সিনেমার সংলাপ নয়।
বুধবার রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এ হতাশার কথা মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন দ্বীপদেশটির জনপ্রিয় অভিনেত্রী দামিথা আবেরত্নে। ‘রনিল ঠেকাও’ আন্দোলনের তিনিও একজন একনিষ্ঠ কর্মী। এএফপি।
রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যেন বুক ভেঙে গেছে বিক্ষোভকারীদের। বদলে গছে গত কয়েকদিনে দানা বেঁধে ওঠা আন্দোলনের ঝকঝকে চিত্রটাও। তার বিজয় ঠেকাতে কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ের বাইরে বুধবার সকালেই জড়ো হয়েছিলেন শ দুয়েক বিক্ষোভকারী। উৎসুক জনতার বেড়িতে থাকা ভবনের ভেতরে চলছিল ব্যালটযুদ্ধ। আর বাইরে উপরের দিকে দুহাত প্রসারিত করে চোখ বন্ধ অবস্থায় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনায় মত্ত ছিলেন বেলেপাথরের ভবনটির সিঁড়িতে বসে থাকা রনিলবিরোধীরা। এ ভাবেই কাটল কয়েকটি অপেক্ষার ঘণ্টা। দুপুরের পরপরই এলো সেই দুঃসংবাদ, বিক্ষোভকারীদের হৃদয় চৌচির করা বার্তা- রনিলকেই প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিয়েছে পার্লামেন্ট।
একজন দৌড়ে এসে বললেন, ‘এক্ষুণি পালাও, আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে সরকার।’ রনিলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিক্ষোভকারী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নুজলি হামীম এএফপিকে বলেন, ‘আমরা হতাশ, কিন্তু বিস্মিত নই।’ দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি আরও বললেন, ‘রাজনীতিবিদদের কাছে ভালো কিছু আশা করেছিলাম আমরা। এখন আমাদের আন্দোলনের কৌশল বিবেচনা করতে হবে। এখন আমাদের শরীরজুড়ে ভর করেছে রাজ্যির ক্লান্তি।’
প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে ছয়বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের। তাই তাকে প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকাতে হবে। বিক্ষোভ-আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মী শ্রীলংকান দর্শকদের ‘নয়নমণি’ মন্দাকিনি, গামানি, জুলাই ৭, আইসক্রিম প্রভৃতি সিনেমাখ্যাত ২৮ ছবির অভিনেত্রী দামিথা আবেরত্নে।
বহু টিভি নাটকের জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী পেশাগত ব্যস্ততাকে তুড়ি মেরে যোগ দিয়েছিলেন এ আন্দোলনে। কিন্তু ‘শেষরক্ষা হয়েও হলো না, আমরা হেরে গেছি।
প্রকারান্তরে পুরো দেশ হেরেছে।’ রনিলের বিজয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে আবেরত্নে বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় থাকার জন্য লড়াই করছেন। কিন্তু তারা জনগণের কথা একটুও ভাবেন না। যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের প্রতি রাজনীতিবিদদের কোনো অনুভূতি নেই।’
নির্বাচিত হওয়ার পর বিক্রমাসিংহে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিভেদ ভুলে দেশের সংকট যৌথভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানান।
বিক্ষোভের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত একজন ক্যাথলিক ধর্মযাজক ফাদার জীবনথা পিরিস এএফপিকে বলেন, ‘আমরা রাজাপাকসে শাসনের মানবসৃষ্ট একটি সংকটে ভুগছি, যার জন্য রনিল বিক্রমাসিংহও দায়ী। তাই আমরা রনিলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব, থামব না।’