Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামঅপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিপীড়ন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অঘটনের অন্ত নেই। কখনো ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত, কখনো একই সংগঠনের দুই গ্রুপের সংঘাত, ক্যাম্পাস ও হলের মধ্যে মারামারি, হানাহানি, কখনো শাটল ট্রেনে মারামারি, কখনো ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, কখনো শিক্ষকদের প্রতি অশালীন আচরণ—কী নেই সেখানে? সেখানে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অথচ তার প্রতিকারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কয়েক দিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত।

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই পাঁচ তরুণের হাতে যৌন নিপীড়ন ও মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক ছাত্রী। এ সময় তাঁকে ও তাঁর বন্ধুকে মারধর করে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। তিনি মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার হাটহাজারী থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচজনকে আসামি করে মামলাও করেন সেই ছাত্রী। কিন্তু গতকাল শুক্রবার এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি। এমনকি দায়ী কাউকে শনাক্তও করা যায়নি।

এ ঘটনার পর থেকেই অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তার দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রীরা অবস্থান নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল করেন এবং শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। কয়েকজন শিক্ষকও তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে সমর্থন প্রকাশ করেন। এ সময় ছাত্ররা যেসব স্লোগান দেন তার মধ্যে ছিল—‘ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি’, ‘নাম অবশ্যই প্রশাসনের জানা, তবে মামলা কেন অজ্ঞাতনামা’, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’ ইত্যাদি। ছাত্রদের দাবি, ঘটনার স্থানসহ ক্যাম্পাসের অনেক স্থানেই সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলোর ফুটেজ দেখে সহজেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। ফুটেজ দেখে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করে প্রশাসন। কিন্তু তাঁর সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে সুস্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না করে শুধু ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত’ থাকার অভিযোগে চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। এর সঙ্গে যৌন নিপীড়নের ঘটনার কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদি তেমন কোনো সম্পর্ক থাকে, তাহলে কোনোভাবেই তা আড়াল করা উচিত হবে না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের সঙ্গে শত শত শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা লাভ এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকসমাজের দায়িত্ব সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা। আমরা আশা করি, তদন্ত কমিটি দ্রুত তাদের প্রতিবেদন দেবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করবে। একই সঙ্গে পুলিশকে সর্বতোভাবে সহায়তা করতে হবে, যেন তারা আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীর ছদ্মাবরণে থাকা এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধীরা কোনো ধরনের অনুকম্পা পাওয়ার যোগ্য নয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments