Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মহারাম উপার্জনে সাহরি-ইফতার নয়

হারাম উপার্জনে সাহরি-ইফতার নয়

রমজানের রোজা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। হাদিস শরিফে এসেছে, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে কস্তুরীর ঘ্রাণের চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৩৮)

রোজা রাখা মহান আল্লাহর কাছে এত বেশি পছন্দনীয় যে হাদিসে কুদসিতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, রোজার পুরস্কার তিনি নিজ হাতে দেবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বনি আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই, সওম ছাড়া। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। (বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)

এখানেই শেষ নয়, রোজাদারদের জন্য জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ দরজা থাকবে, যার নাম হবে ‘রাইয়্যান’। দুনিয়াতে যেমন বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য বিমানবন্দর ইত্যাদিতে বিশেষ গেট থাকে, জান্নাতেও রোজাদারদের জন্য বিশেষ গেট থাকবে। ইরশাদ হয়েছে, সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেন, জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যাতে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)

তাই এই মহাফজিলতপূর্ণ ইবাদতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা মুমিনের কর্তব্য। রমজানের সাহরি ও ইফতারে ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ যাবতীয় খরচ যেন নিখুঁত, পবিত্র ও সৎ অর্থের মাধ্যমে উপার্জিত হয়, সেদিকে খেয়াল করা আবশ্যক। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হালাল খাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। হারাম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের আমি যেসব পবিত্র রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আহার করো। পাশাপাশি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে  থাকো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)

তিনি আরো ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুলরা, তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি সম্যক জ্ঞাত।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)

এই আয়াত দ্বারা জানা যায়, মহান আল্লাহ নবী-রাসুলগণকে তাদের সময়ে দুই বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এক. হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করো। দুই. সৎকর্ম করো। এখানে মূলত উদ্দেশ্য হলো, তাঁদের উম্মতদের এ দুটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা। কারণ নবী-রাসুলদের তো মহান আল্লাহ নিষ্পাপ রেখেছিলেন।

তাফসিরে ইবনে কাসিরের ভাষ্যমতে, এই দুটি আদেশকে একসঙ্গে বর্ণনা করার মধ্যে ইঙ্গিত এই যে সৎকর্ম সম্পাদনে হালাল খাদ্যের প্রভাব অপরিসীম। খাদ্য হালাল হলে সৎকর্মের তাওফিক হতে থাকে। পক্ষান্তরে খাদ্য হারাম হলে সৎকর্মের ইচ্ছা করা সত্ত্বেও তাতে নানা আপত্তি প্রতিবন্ধক হয়ে যায়।

এর প্রমাণ অবশ্য নবীজি (সা.)-এর হাদিসেও পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধুলামলিন। সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রভু, হে আমার প্রতিপালক, অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এ অবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৮৯)

অথচ ‘দোয়া’ মহান আল্লাহর পছন্দনীয় ইবাদতগুলোর একটি। বোঝা গেল হারাম ভক্ষণ মানুষের নেক আমলকে প্রভাবিত করে। মানুষের জন্য জাহান্নামকে অবধারিত করে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই গোশত (দেহ) জান্নাতে যাবে না, যা হারাম (খাবার) থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৭২৩, তিরমিজি, হাদিস : ৬১৪)

তাই সাহরি ও ইফতারে হারাম উপার্জনের সম্পদ থেকে ভক্ষণ করাও রোজার মহিমা ক্ষুণ্নকারী কাজ। অতএব রোজাদারের উচিত, মহান আল্লাহর এই প্রিয় ইবাদতটি যেন কলুষমুক্ত হয়, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments