Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মসুদ নিয়ে একটি ভুল ধারণা

সুদ নিয়ে একটি ভুল ধারণা

মহান আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। আর ব্যবসাকে করেছেন হালাল। অনেকে এ বিষয়টা মেনে নিলেও, জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সুদের ভুল ব্যাখ্যা করে বসেন। তারা মনে করেন যে পবিত্র কোরআনে ‘রিবা’ সম্পর্কে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তা শুধু প্রাচীন আরবে প্রচলিত সুদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন—কোনো দরিদ্র বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কারো কাছ থেকে ঋণ নিল। ঋণদাতা তার এ বিপদের সুযোগে তার থেকে সুদ গ্রহণ করল, এটা সুস্পষ্ট জুলুম। অন্যের বিপদের সুযোগ নেওয়া অমানবিক কাজ। তবে এখনকার দিনের প্রচলিত সুদ এমন নয়; বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখনকার ঋণগ্রহীতা মানে যে সুদ দেয়, সে তো দরিদ্র নয়, বিপদগ্রস্তও নয়। বরং ধনী, পুঁজিপতি এবং ব্যবসায়ী। এখন দরিদ্ররা ধনীদের সুদ দেয় না; বরং ধনীদের থেকে সুদ আদায় করে। এতে দরিদ্রদেরই উপকার হয়। অর্থাৎ তারা দাবি করতে চায়, ব্যবসায়ী সুদ হারাম নয়।

এ ব্যাপারে উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম মুফতি শফি (রহ.) লেখেন, প্রথম কথা হলো, কোরআনে রিবার বিরুদ্ধে আলোচনা এক জায়গায় নয়, বিভিন্ন সুরার আট-নয় জায়গায় এসেছে এবং চল্লিশের চেয়ে বেশি হাদিসে বিভিন্ন শিরোনামে রিবার অবৈধতা বর্ণনা করা হয়েছে। এসব উদ্ধৃতির কোনো একটি জায়গাতেও এটা বলা হয়নি যে এ অবৈধতা শুধু ওই রিবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য লেনদেন করা হয়। ব্যবসায়ী সুদ এ বিধানের আওতামুক্ত। এত সুস্পষ্ট বিধানের ক্ষেত্রে এ অধিকার কারোরই নেই যে আল্লাহ তাআলার স্পষ্ট নির্দেশকে শুধু ধারণার বশবর্তী হয়ে বিকৃত করে দেবে। কোনো একটা বিধানকে শর্তযুক্ত করতে হলে তার জন্য স্পষ্ট দলিল প্রমাণের প্রয়োজন। কোনো প্রমাণ ছাড়া সাধারণ আইনকে শর্তযুক্ত করার কোনো অবকাশ নেই। কেউ করলে তা কোরআন বিকৃতির শামিল হবে।
আল্লাহ না করুন, এ দরজা যদি খুলে দেওয়া হয়, তাহলে কেউ বলে উঠবে, আধুনিক যুগের আধুনিক মদ হারাম নয়। প্রাচীন আরবের প্রচলিত মদই অবৈধ ছিল। কারণ সেগুলো অপরিচ্ছন্ন পাত্রে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পচিয়ে বানানো হতো। এখন তো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মেশিনের মাধ্যমে এসব তৈরি করা হয়। সুতরাং এ মদ ওই বিধানের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। তেমনি জুয়ার ব্যাপারটিও। তৎকালীন আরবে যে ধরনের জুয়াবাজি প্রচলিত ছিল আল কোরআন যেটাকে ‘মাইসির’ এবং ‘আসলাম’ আখ্যায়িত করে হারাম ঘোষণা দেয়, আজ ওই জুয়ার অস্তিত্বই নেই। আজ তো লটারির মাধ্যমে বড় বড় ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।

এসব ওই যুগের জুয়ার অন্তর্ভুক্ত নয়। এখানেই শেষ নয়। ব্যভিচার, বেলেল্লাপনা, চুরি, ডাকাতি সব কিছুই প্রাচীন ধারা থেকে পরিবর্তিত ধারাই আমরা দেখতে পাই। তবে তো সব কিছুকেই বৈধ বলতে হবে। আর এটাই যদি মুসলমানী হয় তাহলে ইসলামের তো আর কিছুই থাকবে না। যখন শুধু আকার-আকৃতির পরিবর্তনের কারণে কারো সত্তাগত পরিবর্তন হয় না, তাহলে যে মদ মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটায় তার আকৃতি যা-ই হোক এবং তা যেভাবেই বানানো হোক, সব সময়ই তা হারাম হবে। জুয়া ও বাজি চাই তা প্রচলিত চোখ ধাঁধানো আকৃতিতে হোক বা লটারির মতো অন্য কোনো পন্থায় হোক, সর্বাবস্থায়ই তা অবৈধ। বেহায়াপনা, নগ্নতা এবং ব্যভিচার প্রাচীন পদ্ধতিতে হোক আর আধুনিককালের ক্লাব, হোটেল, সিনেমার আকারে হোক—সর্বাবস্থায় তা অবৈধ। ঠিক তেমনি রিবা বা সুদ, চাই তা প্রাচীন আমলের মহাজনী সুদ হোক বা আধুনিককালের ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকিং সুদ হোক সর্বাবস্থায়ই তা হারাম এবং অবৈধ। (বিশ্ববাজার ধসের মূল কারণ সুদ, পৃষ্ঠা ৩৬)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments