রাসুল (সা.) বলেন, আমার সাহাবিরা সব উন্মতের জন্য রক্ষাকবচস্বরূপ। আমার সাহাবিরা যখন বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উন্মতের ওপর ওয়াদাকৃত বিষয় উপস্থিত হবে
সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে গড়া একটি দল। তাঁরা কোরআন অবতীর্ণ হতে দেখেছে এবং মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে কোরআনের অর্থ ও মর্ম বুঝেছে। সুতরাং দ্বিনের ব্যাপারে তাঁরাই উম্মতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। আবু বুরদাহ (রা.) তাঁর পিতা থেকে একটি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেন।
যার শেষাংশে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আকাশের দিকে মাথা তুললেন এবং তিনি বেশির ভাগ সময়ই আকাশের দিকে তাঁর মাথা তুলতেন। অতঃপর তিনি বললেন, তারকারাজি অবস্থানের কারণেই আকাশ স্থিতিশীল আছে। তারকারাজি যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে তখন আকাশের জন্য ওয়াদাকৃত বিপদ আসন্ন হবে (কিয়ামত এসে যাবে)। আর আমি আমার সাহাবাদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তাস্বরূপ। আমি যখন বিদায় নেব, তখন আমার সাহাবিদের ওপর ওয়াদাকৃত সময় এসে সমুপস্থিত হয়ে যাবে (ফিতনা শুরু হবে)। আর আমার সাহাবিরা সব উন্মতের জন্য রক্ষাকবচস্বরূপ। আমার সাহাবিরা যখন বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উন্মতের ওপর ওয়াদাকৃত বিষয় উপস্থিত হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৩৬০)
হাদিসবিশারদরা বলেন, উল্লিখিত হাদিসে যদিও সাহাবিদের যুগের শেষাংশে সৃষ্ট ফেতনার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ‘আমার সাহাবিরা সব উন্মাতের জন্য রক্ষাকবচস্বরূপ’ বাক্যটি ব্যাপকার্থে গ্রহণ করার অবকাশ আছে। সাহাবিদের ঈমান, তাঁদের আমল, কোরআন ও হাদিসের ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যাখ্যা, ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে তাঁদের ভাষ্য পরবর্তী সব উম্মতের জন্য অনুসরণীয় ও নিরাপদ মাপকাঠি। মানুষ যখন দ্বিনের ব্যাপারে সাহাবিদের অনুসৃত পথ পরিহার করবে, তখন মুসলিম সমাজে নানা ধরনের ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে এবং সংকট তৈরি হবে।
মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর একটি বক্তব্য থেকে সেই সংকট ও ফেতনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। তিনি বলেন, তোমাদের পরবর্তী যুগে ফেতনা সৃষ্টি হবে, তখন প্রচুর সম্পদ থাকবে। মুমিন, মুনাফিক, পুরুষ-নারী, ছোট-বড়, স্বাধীন-গোলাম সবাই কোরআন খুলে পাঠ করবে (কিন্তু অর্থ বুঝবে না)। অচিরেই কেউ বলবে, ‘লোকদের কী হলো, তারা কেন আমার অনুসরণ করবে না যতক্ষণ না আমি তাদের জন্য এ ছাড়া নতুন কিছু প্রবর্তন করতে পারি। ’ অতএব তোমরা তার এই বিদআত হতে বেঁচে থাকবে। কেননা দ্বিনের মধ্যে যা নতুন প্রবর্তন করা হয় তা গোমরাহি। আমি তোমাদের জ্ঞানী ব্যক্তিদের পথভ্রষ্টতা সম্পর্কে সতর্ক করছি। কেননা শয়তান পণ্ডিতদের মুখ দিয়ে গোমরাহি কথা বলায়। আবার মুনাফিকরাও মাঝেমধ্যে হক কথা বলে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৬১১)
আল্লাহ সবাইকে সঠিক ঈমান দান করুন। আমিন