Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মসাইলেন্সারের বিকট শব্দে আতঙ্ক সৃষ্টি করা গুনাহ

সাইলেন্সারের বিকট শব্দে আতঙ্ক সৃষ্টি করা গুনাহ

মহান আল্লাহর যে নিয়ামতগুলো মানুষের জীবনে ভিন্ন গতি এনে দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম নিয়ামত হলো যানবাহন। আগে যে রাস্তা পাড়ি দিতে কয়েক দিন লেগে যেত, এখন সে রাস্তা পাড়ি দেওয়া যায় কয়েক ঘণ্টায়। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত মহান আল্লাহ প্রদত্ত এই নিয়ামতের শুকরিয়া করা। এবং এর ব্যবহার যেন নিজের ও অন্যের কল্যাণে হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা।

এর দ্বারা যেন কারো কষ্ট বা ক্ষতি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা।

কয়েক বছর ধরে অনেকে শখ করে নিজেদের গাড়ির সাইলেন্সার পাইপ খুলে রেখে বিকট শব্দ তুলে নগরময় দাপিয়ে বেড়ায়। আবার অনেক উঠতি বয়সী কিশোর-যুবক গাড়িতে ডিজিটাল হর্ন লাগিয়ে কুরুচিপূর্ণ নানা শব্দ বাজায়। এবং বন্ধুরা মিলে এসব গাড়ি বেপরোয়া গতিতে শহর চষে বেড়ায়। তাদের গাড়ির বিকট শব্দে পথচারী অন্য গাড়ির চালক-যাত্রীরা ভীত হয়ে থাকে, না জানি কখন এই অবুঝ বেপরোয়া চালকদের ভুল স্টান্টে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। বাহন নিয়ে এক শ্রেণির মানুষের অহংকারের অসুস্থ প্রতিযোগিতা নবীজি (সা.)-এর যুগেও ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, অহংকার ও দাম্ভিকতা চিত্কারকারী উট পালকদের মধ্যে এবং নম্রতা বকরিওয়ালাদের মধ্যে। (মুসলিম, হাদিস : ৯১)

যা হোক, এভাবে বিকট শব্দ করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি-মোটরসাইকেল চালানো কয়েকটি কারণে নাজায়েজ। নিম্নে তার অন্যতম কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

এতে অহংকার ফুটে ওঠে : চলার পথে গাড়ি-মোটরসাইকেলে বিকট শব্দ করে বেপরোয়া গতিতে চালানোর মাধ্যমে দাম্ভিকতা ফুটে ওঠে, যা মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না। যারা আল্লাহকে ভালোবাসে, তাদের উচিত এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অহংকারবশত তুমি মানুষকে অবজ্ঞা  কোরো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৭)

কারণ প্রবল দাম্ভিকতা নিয়ে আত্মপ্রদর্শন মানুষের বিপদ ডেকে আনে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, একদা এক ব্যক্তি এক জোড়া জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরে (রাস্তা দিয়ে) চলছিল। তা নিয়ে তার খুব গর্ব বোধ হচ্ছিল। তার জমকালো লম্বা চুলগুলো সে খুব যত্নসহকারে আঁচড়ে রেখেছিল। হঠাত্ আল্লাহ তাআলা তাকে ভূমিতে ধসিয়ে দেন এবং সে কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই নিচের দিকে নামতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৭৮৯)

মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয় : এভাবে বিকট শব্দ করে গাড়ি-মোটরসাইকেল চালানো ও অহেতুক হর্ন বাজানোর কারণে পথচারীদের কষ্ট হয়। বিশেষ করে যারা রাতের বেলা বন্ধুদের সঙ্গে গাড়ি-মোটরসাইকেল নিয়ে আমোদ করতে বের হয়, গভীর রাতে তাদের উচ্ছৃঙ্খল রেসিংয়ের শব্দে বহু মানুষের আচমকা ঘুম ভেঙে যায়, অনেকে হঠাত্ ভয় পেয়ে ঘুম ভাঙার কারণে অসুস্থ বোধ করে, গভীর রাতে হঠাত্ কানে ভেসে আসা বিকট শব্দে ঘুম ভাঙা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য ক্ষতির কারণ। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষেধ। আবু সিরমাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেবে, আল্লাহ তাকে কষ্ট দেবেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৪২)

নিজেকে বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় : বিকট শব্দে গাড়ি-মোটরসাইকেল চালানো নিজের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। আর বেপরোয়া গতি তো জীবনই কেড়ে নিতে পারে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের নিজেকে ইচ্ছাকৃত বিপদের মুখে ঠেলে দিতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিয়ো না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

মানুষের কুদৃষ্টি পড়ে : বেপরোয়া চলাফেরা মানুষের চোখে পড়ে, ফলে অনেকে মনে মনে তার ধ্বংস কামনা করে। কুদৃষ্টি অত্যন্ত ভয়ংকর বিষয়, যা মানুষের জীবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কুদৃষ্টির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাস্তব। ’ কোনো বিষয় যদি ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত, তাহলে ‘কুদৃষ্টি’ ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত এবং তোমাদের (কুদৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের)-কে গোসল করতে বলা হলে তোমরা গোসল করাবে। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৯৫)

মহান আল্লাহ সবাইকে বেপরোয়া আত্মপ্রদর্শন থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments