Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeখেলাধুলাসর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রোমাঞ্চকর ফাইনাল

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রোমাঞ্চকর ফাইনাল

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাইনাল হয়ে গেলো লুসাইল স্টেডিয়ামে। মেসির হাতেই উঠলো বিশ্বকাপ ট্রফি। এ নিয়ে অনেক নাটকীয়তা, শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা তো ছিলই। বলা চলে অবিশ্বাস্য এক ফাইনাল। যা আমি আর কখনো দেখিনি, শুনিওনি। রেকর্ড থেকেও পাওয়া যায় না এমন ফাইনালের লোমহর্ষক বিবরণ। যত অঘটনই ঘটুক না কেন, কাতার বিশ্বকাপে এই ফাইনাল সব মুছে দিয়েছে। কাতার সফল । ফুটবলও সফল।
যাই হোক, ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। হ্যাটট্রিক করেও শেষ অব্দি বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারেননি।

পেনাল্টি শুটআউটে তাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। শুরুটা অবশ্য ছিল আর্জেন্টিনার। ফরাসিদের ভাগ্য বিপর্যয়ের অন্যতম কারিগর হচ্ছেন ডি মারিয়া। যদিও তিনি পুরো সময় খেলতে পারেননি। প্রথমার্ধে খুঁজেই পাওয়া যায়নি ফ্রান্সকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সব ওলটপালট হয়ে যায়। ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে  দুই গোল করে বসেন এমবাপ্পে। খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। এটাও এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।  কারও ধারণা ছিল না দুই গোল হওয়ার পরও খেলার ভাগ্যে এমন ঘটবে।
কিন্তু হাই ড্রামা যে অপেক্ষা করছে  তা ছিল কল্পনার বাইরে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের মধ্যে মেসির গোলে ফের এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। খেলার রেজাল্ট তখন ৩-২।  ম্যাচের বাকি দুই মিনিট। তখনই গঞ্জালো  মন্তিয়েলের হ্যান্ডবলের কারণে দ্বিতীয়বারের মতো পেনাল্টি পায় ফ্রান্স।  গোল করেন এমবাপ্পে। 
খেলায় আবার উত্তেজনা ফিরে আসে। তখন অবধারিত হয়ে যায় পেনাল্টি শুটআউট। পেনাল্টি শুটআউটই খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। স্বপ্ন পূরণ হয় মেসির। ৩৬ বছর আগে দিয়েগো ম্যারাডোনা মেক্সিকো থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে গিয়েছিলেন বুয়েন্স আয়ার্সে।  মেসি বরাবরই স্বপ্ন দেখতেন। তার ভাগ্যে কি এটা জুটবে? কাতার বিশ্বকাপে শুরুটা ছিল বাজে, অপ্রত্যাশিত। সৌদি আরবের সঙ্গে হেরে যাওয়ার পর সতীর্থরা ভেঙে পড়লো। কিন্তু মেসি ভেঙে পড়েননি। মেসি শপথ করেছিলেন- ট্রফি আমাদের নিতেই হবে। বহু বছর পর ফুটবলদুনিয়া এমন রোমাঞ্চকর ফাইনাল দেখলো। যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।  যদি ম্যারাডোনা আজ বেঁচে থাকতেন হয়তো সবচাইতে বেশি খুশি হতেন তিনি। 
পেনাল্টি শুটআউটে ফ্রান্সের হয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে প্রথম শট নেন। এবারো তাকে আটকানো গেল না। আর্জেন্টিনার পক্ষে লিওনেল মেসিও বল পাঠান জালে। তবে কিংসলে কোম্যানের নেয়া দ্বিতীয় শট আটকে দেন মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনা হালে পানি পায়। বদলি নামা পাওলো দিবালা ব্যবধান ২-১ বানিয়ে ফেলেন। ফ্রান্স তৃতীয় শটেও ব্যর্থ। এবার অরেলিয়েন চুয়ামেনি বল মারলেন পোস্টের বাইরে। এতে আর্জেন্টিনার জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। চুয়ামেনির মতো ভুল হয়নি লিয়ান্দ্রো পারেদেসের। ব্যবধান ৩-১। চতুর্থ শটে র‌্যান্ডাল কোলো মুয়ানি আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ফ্রান্সের। আর্জেন্টিনা তখন টানা দুটি শট মিস করলেই কেবল ফ্রান্সের ম্যাচে ফেরার সুযোগ ছিল। কিন্তু এনজো ফার্নান্দেজ সে সুযোগ দেননি। গোল করে আর্জেন্টিনাকে এনে দেন বিশ্বকাপ।  মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠলো ঠিকই। দিনের শেষে হিরো এমবাপ্পে। তার পায়ে বল যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছিল কিছু একটা হবেই। গোটা আর্জেন্টাইন শিবির আতংকে রীতিমতো কাঁপছিল। শেষ অব্দি মেসিই হলেন সৌভাগ্যবান। তবে এর জন্য তাকে অনেক মেহনত করতে হয়েছে। 
কাতারের জাতীয় দিবসের উৎসবে এটা হচ্ছে মেসির উপহার। ফুটবলদুনিয়া খুশি, আনন্দিত। উন্মাদনা আর আবেগের সমাপ্তি ঘটলো। তবে এখানে বলে রাখি- ৮৮ হাজার ৯৬৬ জন দর্শকের বেশির ভাগই ছিলেন আর্জেন্টাইন। পরের দৃশ্য কী আর লিখবো। গোটা স্টেডিয়ামটি মনে হচ্ছিল ভেঙে পড়বে। এতটা উচ্ছ্বাস আর কখনো দেখা যায়নি।  মেসির চোখে তখন পানি।   কারণ আর্জেন্টিনার এটা সহজ জয় নয়। অনেক কষ্টের। অনেক লড়াইয়ের ফসল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments