Tuesday, April 16, 2024
spot_img
Homeধর্মসমুদ্রবিদ্যায় আফ্রিকান মুসলমানদের অবদান

সমুদ্রবিদ্যায় আফ্রিকান মুসলমানদের অবদান

ইউরোপের অনুসন্ধানের যুগে স্পেন ও পর্তুগাল বৈশ্বিক সমুদ্রযাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছিল। মুররা সমুদ্রবিদ্যায় উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিল। যেমন—অ্যাস্ট্রোল্যাব ও সেক্সট্যান্ট। এ ছাড়া তারা মানচিত্র অঙ্কন ও জাহাজ তৈরিতে অগ্রগতি অর্জন করেছিল।

তাদের এসব অর্জন অনুসন্ধানের পথ প্রশস্ত করেছিল। যে পথ ধরে ইউরোপীয়রা গত অর্ধসহস্রাব্দ বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে, তা খ্রিস্টীয় ১৩ শতাব্দীতে আইবেরিয়ান উপদ্বীপের মুররা উদ্ভাবন করেছিল।

স্প্যানিশ রাজারা কলম্বাসকে পশ্চিম প্রান্তের ভূমি আবিষ্কারের দায়িত্ব অর্পণের বহু আগে আফ্রিকান মুসলিমরা অন্যদের সঙ্গে আমেরিকার বিশেষ যোগাযোগ স্থাপন এবং স্থানীয় সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কেউ কি ভাবতে পারে কলম্বাস কিভাবে আমেরিকা আবিষ্কার করতে পারে, যখন তাঁকে একটি সুসভ্য ও পরিশীলিত জনগোষ্ঠী অবতরণ করতে দেখেছিল?

আধুনিক গবেষণায় এমন কিছু শক্তিশালী দলিল পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে কলম্বাসের হাজার বছর আগে, এমনকি খ্রিস্টপূর্ব সময় থেকেই আফ্রিকানরা প্রায়ই আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকা যেত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. বেরি ফেল কলম্বাসের আগে মুসলিমদের আমেরিকায় পৌঁছানোর প্রমাণের দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরেছেন। যার মধ্যে আছে ভাস্কর্য, মৌখিক (লোক) ঐতিহ্য, মুদ্রা, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, আরবি নথিপত্র ও শিলালিপি।

কলম্বাসের আগে আফ্রিকানরা আমেরিকায় পৌঁছেছিল তার শক্ত প্রমাণ কলম্বাস নিজেই দিয়েছেন। ১৯২০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লিও উইনার, যিনি একজন আমেরিকান ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদ, তিনি তাঁর ‘আফ্রিকা অ্যান্ড দ্য ডিসকভারি অব আমেরিকা’তে লিখেছেন, কলম্বাস তাঁর জার্নালে লিখেছেন আদিবাসী আমেরিকানরা তাঁকে নিশ্চিত করেছে যে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী নৌকায় চড়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে এসেছে সোনার টিপযুক্ত বর্শার ব্যবসা করতে।

মুসলিম স্পেন শুধু প্রাচীন মিসর, গ্রিস ও রোমান সভ্যতার বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নকে ধারণ ও স্থায়িত্ব দান করেনি, বরং তার প্রসারেও ভূমিকা রেখেছে। এবং তা নিজেদের জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, স্থাপত্যবিদ্যা ও আইনশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কয়েক শতাব্দীর পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা এই ধারণা তৈরি করেছে যে সভ্যতার বিকাশে আফ্রিকানদের ভূমিকা খুব সামান্য বা শূন্য। অন্যদিকে দুর্ভাগ্যবশত প্রাকৃতিকভাবেই আফ্রিকান জনগণ আদিম, জাতিগত কুসংস্কার, দাসত্ব, উপনিবেশবাদ ও অর্থনৈতিক নিপীড়নের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। যদি আফ্রিকানরা তাদের ইতিহাস পুনরায় লিখত, তবে তাদের সামনে গৌরবময় এমন সব বিষয় প্রকাশ পেত, যা তারা পুনরুদ্ধার করতে চাইবে। আফ্রিকান জনগণের গৌরবময় ভবিষ্যৎ অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা হলো তার গৌরবময় অতীত সম্পর্কে আফ্রিকানদের অজ্ঞতা।

কাউন্টার পাঞ্চ ডটঅর্গ থেকে  আতাউর রহমান খসরুর ভাষান্তর

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments