Tuesday, April 16, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামসমস্যা রাজনৈতিক সামরিক, ধর্মের সঙ্গে বিরোধ কোথায়?

সমস্যা রাজনৈতিক সামরিক, ধর্মের সঙ্গে বিরোধ কোথায়?

মোহাম্মদ আবুল হোসেন

ওদিকে আঙ্কারার বিরুদ্ধে এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে। এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও সন্তুষ্ট নয়। ফলে তুরস্ক বাধ্য হয় রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে কয়েক বছর। ২০১৯ সালে রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাওয়ার কয়েকদিন পরেই এই নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা বলতে থাকে, ন্যাটোর একটি সদস্য হিসেবে তুরস্কের রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ন্যাটোর নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য খুবই বিপজ্জনক। এর জবাব দেয় তখন তুরস্ক। তারা বলে, যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ইউএস প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রিতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ব্যাপকভাবে এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে।


ন্যাটোর সদস্য হতে চায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। এজন্য ন্যাটোর সব সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন।

একটি সদস্যদেশ সমর্থন না দিলে বা ভেটো দিলেই দেশ দু’টির কেউই ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না। এক্ষেত্রে অন্যদেশগুলো সমর্থন দিতে চাইলেও সুইডেনের ভাগ্য আটকে আছে তুরস্কের কাছে। দেশটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা সমর্থন দেবে না। কিন্তু কেন? তুরস্কের দাবি নরডিক এই দু’টি দেশ ‘সন্ত্রাসকে সমর্থন দিচ্ছে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে (পিকেকে) সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে তুরস্ক। তারা এ গ্রুপ ও কুর্দিদের সশস্ত্র অন্য গ্রুপগুলোকে ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ হিসেবে অভিহিত করে। তুরস্কের অভিযোগ, পিকেকে বা গুলেনপন্থি আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। জবাবে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেক্কা হাভিস্তো বলেছেন, তিনি তুরস্কের এমন অবস্থান নেয়ায় বিস্মিত। তারা আঙ্কারার সঙ্গে এ নিয়ে দর কষাকষি করবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত তুরস্ক জানিয়ে দিয়েছে, তারা ফিনল্যান্ডকে সমর্থন দিলেও সুইডেনকে সমর্থন দেবে না। এমন প্রেক্ষাপটে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনেহেগেনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে পবিত্র কোরআনে অগ্নিসংযোগ করেছে উগ্রপন্থি রাসমুস পালুদান। এমনকি তুরস্ক ডেনমার্ককে সমর্থন না দিলে প্রতি শুক্রবার পবিত্র কোরআনে আগুন দেয়ার হুমকি দিয়েছে সে। প্রাথমিকভাবে তার এই কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিয়েছিল রাষ্ট্র, পুলিশ। পরে উত্তেজনা, প্রতিবাদের পর এর নিন্দা জানানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে। ডেনমার্ককে তুরস্কের সমর্থন না দেয়ার সঙ্গে পবিত্র কোরআনের সম্পর্ক কি? সভ্য বিশ্বের কাছে এ প্রশ্ন রাখলে উত্তর কী হবে? ডেনমার্ককে তুরস্ক সমর্থন দেবে না- এটা রাজনৈতিক কারণ।

 এর প্রতিবাদে রাসমুস পালুদান বা অন্য কেউ অন্য কোনোভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারতো। কিন্তু পুরো মুসলিম জাতির জীবনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ পবিত্র কোরআনে অগ্নিসংযোগ করে সে। এটা কী তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নাকি একটি জাতির বিরুদ্ধে রাসমুস পালুদানের ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা! এর মধ্যদিয়ে সে ধর্মীয় উস্কানি সৃষ্টি করেছে।   ২০২২ সালের মে মাসে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের কর্মকর্তারা ঘোষণা দেন যে, তুরস্কের এই অবস্থান পরিবর্তনের জন্য দুই দেশের কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল আঙ্কারা সফরে যাবেন। এর জবাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তখন জানিয়ে দেন, তাদের আঙ্কারা সফর করে বিরক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, ঐতিহাসিকভাবে নিরপেক্ষ বলে পরিচিত সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চালানোর পর তারা ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ঘোষণা হলেই হবে না। এক্ষেত্রে ন্যাটোর মোট ৩০টি দেশের সর্বসম্মত সমর্থন পেতে হবে তাদের। ১৯৫২ সালে ন্যাটো জোটের দ্বিতীয় সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে এর সদস্য হয় তুরস্ক ও গ্রিস।  কিন্তু এবার বেঁকে বসেছে তুরস্ক। ২০২২ সালেই প্রেসিডেন্ট এরদোগান দেশ দু’টির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন- কীভাবে আমরা তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারি? আঙ্কারার অনুরোধ সত্ত্বেও সন্দেহভাজন পিকেকে’র সদস্যদের দেশে ফেরত না পাঠানোর জন্য মে মাসের ওই একইদিনে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু কড়া সমালোচনা করেন ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের। সন্দেহভাজন ওইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা হয়তো পিকেকের সদস্য। না হয়, তারা প্রবাসে থাকা তুর্কি নেতা গুলেনপন্থি আন্দোলনকারী। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের বিরুদ্ধে যে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়, তার জন্য এদেরকে দায়ী করা হয়। ওই অভ্যুত্থান জনগণ রুখে দেয়। এতে কয়েক শ’ মানুষ নিহত হন। 

 তুরস্কের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্কটহোম। এজন্য স্কটহোমকে টার্গেট করে সমালোচনার তীর ছোড়েন এরদোগান। প্রতিবেশী সিরিয়ায় সামরিক অভিযানে আঙ্কারার জড়িত হওয়ার কারণে ২০১৯ সাল থেকে তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আছে সুইডেনের। ২০১৬ সাল থেকে সিরিয়ায় আন্তঃসীমান্ত বেশকিছু অপারেশন পরিচালনা করেছে তুরস্কের সেনাবাহিনী। এ সময় তারা টার্গেট করেছে আইসিল (আইসিস) এবং আঙ্কারার চোখে সন্ত্রাসী হিসেবে কুর্দি যোদ্ধাদের। ফলে তারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বেশকিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। কিছু এনজিও অভিযোগ করেছে, এ জন্য স্থানীয় কিছু অধিবাসীকে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে তুরস্ক।  ওদিকে আঙ্কারার বিরুদ্ধে এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে। এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপরও সন্তুষ্ট নয়। ফলে তুরস্ক বাধ্য হয় রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে কয়েক বছর। ২০১৯ সালে রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাওয়ার কয়েকদিন পরেই এই নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা বলতে থাকে, ন্যাটোর একটি সদস্য হিসেবে তুরস্কের রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ন্যাটোর নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য খুবই বিপজ্জনক। এর জবাব দেয় তখন তুরস্ক। তারা বলে, যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ইউএস প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রিতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ব্যাপকভাবে এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এরপরই তারা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।   সিরিয়ায় কুর্দি সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে সমর্থন দেয় ওয়াশিংটন। এরও নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক।

 পিকেকে’কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা কুর্দিস পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটস্‌ (ওয়াইপিজি)কে সামরিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে যেতে থাকে।  এগুলো সব রাজনীতি এবং ইতিহাস। এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও কোপেনহেগেনে একটি মসজিদের কাছে এবং ডেনমার্কে তুরস্ক দূতাবাসের বাইরে পবিত্র কোরআনের কপিতে এ বছর ২১শে জানুয়ারি আগুন দিয়েছে ইসলামবিদ্বেষী উগ্র ডানপন্থি রাসমুস পালুদান। একইসঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সুইডেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে প্রতি শুক্রবার সে এই কাজ করবে। এ ঘটনায় শুধু তুরস্কে নয়, মুসলিম জাহানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। রাসমুস পালুদানকে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর অনুমতি দেয়ার জন্য ডেনমার্ক অনুমতি দিয়েছে বলে তুরস্ক এর কড়া নিন্দা জানিয়েছে। বলা হয়েছে, ঘৃণা প্রসূত অপরাধ ছড়িয়ে দিতে উস্কানি দেয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ডেনমার্কের দূতকে তলব করে এসব কথা জানিয়ে দিয়েছে তুরস্ক। বলেছে, ডেনমার্কের এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য।

 জবাবে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন মিডিয়াকে বলেছেন, ওই ঘটনায় তুরস্কের সঙ্গে ডেনমার্কের সুসম্পর্ক পরিবর্তন হবে না। ডেনমার্কে স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার আইন নিয়ে আঙ্কারার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ দেখান তিনি। ওদিকে আগের সপ্তাহে রাসমুস পালুদানের কর্মকাণ্ডের কারণে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান আরও কড়া সতর্কতা দিয়েছেন স্টকহোমকে। বলেছেন, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার লড়াইয়ে তারা যেন তুরস্কের সমর্থন প্রত্যাশা না করেন। একইসঙ্গে ব্রাসেলসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যেখানে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা হবে, তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে তুরস্ক।  রাসমুস পালুদানের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে মুসলিম বিশ্বে। প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো দেশের মধ্যে আছে পাকিস্তান, ইরাক, লেবানন প্রভৃতি। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সুইডেনের দূতাবাসমুখী বিক্ষোভ থামিয়ে দেয় পুলিশ। ওদিকে তুরস্কে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments