Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামশ্রীলংকায় গণঅভ্যুত্থান

শ্রীলংকায় গণঅভ্যুত্থান

দেশটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠুক

শ্রীলংকার রাজনীতির পটপরিবর্তন হয়েছে। গণবিক্ষোভে দেশটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে বলা যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা নিরাপত্তা বেষ্টনী গুঁড়িয়ে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থান করছে। বিক্ষোভের মুখে পালাতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া বিমানবন্দরে প্রতিরোধের মুখে পড়েন, অভিবাসন কর্মকর্তাদের বাধায় তিনি পালাতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। গোতাবায়ার ছোট ভাই ও দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসেও গোপনে দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাদের আটকে দিয়েছে।

বস্তুত শ্রীলংকার অর্থনৈতিক বিপর্যয় যখন চ‚ড়ান্ত রূপ লাভ করেছে, তখন থেকেই দেশটির জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং মনে করে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছাড়া তাদের মুক্তি আসবে না। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য তারা ক্ষমতাসীন নেতাদেরই দায়ী করেন। জনতা মনে করে, তাদের দুরবস্থার জন্য রাজাপাকসের পরিবারের সদস্যদের বিলাসিতা ও স্বেচ্ছাচারিতাই দায়ী।

তারা আরও মনে করে, রাজাপাকসের পরিবারের ক্ষমতালিপ্সা, দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ এবং নিজেদের আখের গোছানোর অপচেষ্টার কারণেই তাদের এ দুর্দশা। এক কথায়, রাজাপাকসের পরিবারের দুই দশকের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান চাইছিল শ্রীলংকার জনগণ।

গোতাবায়ার পদত্যাগের পর শ্রীলংকার রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে বলেছেন, বুধবার থেকে গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে। তিনি ১৫ জুলাই পার্লামেন্টের অধিবেশন ডেকেছেন। তখনই জানানো হবে, প্রেসিডেন্টের পদ খালি হয়েছে। স্পিকার ঘোষণা দিয়েছেন, ১৯ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থিতা আহ্বান করা হবে, পরদিন ২০ জুলাই পার্লামেন্টের সদস্যদের ভোটে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

নতুন প্রেসিডেন্টের অধীনে সর্বদলীয় সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজাপাকসে পরিবারের অপসারণ এবং সর্বদলীয় সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই কি শ্রীলংকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে? এটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন বটে। আরও প্রশ্ন, শ্রীলংকার জনগণের বর্তমান উল­াস-আনন্দের স্থায়িত্ব কতদিন? দেশটির ঘরে ঘরে জ্বালানি নেই, পরিবহণের জ্বালানিও প্রায় শূন্য।

পরিবহণের অভাবে খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন। ওদিকে রয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। পাওয়া যাচ্ছে না ওষুধ। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে আমদানিও বন্ধ রয়েছে। উপরন্তু রয়েছে বিদেশি ঋণের বোঝা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে প্রশাসনযন্ত্র কাজ করবে, সেখানেও রয়েছে রাজাপাকসে পরিবারের দুর্নীতিগ্রস্তরা। এমন অসংখ্য সমস্যার ভার বইতে হবে নতুন সরকারকে।

বলা হয়ে থাকে, বিজয় অর্জনের চেয়ে বিজয় ধরে রাখাটাই বেশি কঠিন। সর্বদলীয় নতুন সরকার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তথা পররাষ্ট্রনীতিতে কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, সেটাও দেখার বিষয়। দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার বিষয়টি এক বড় ব্যাপার অবশ্যই। সবটা মিলিয়ে শ্রীলংকার পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববাসী। আমরা আশা করতে চাই, সার্কের অন্যতম সদস্য এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকা দ্রুতই বর্তমান সংকট উত্তরণে সক্ষম হবে। ফিরে আসবে দেশটির সুন্দর অতীত। আমরা ২০ জুলাইয়ের পর যে নতুন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তার সর্বাঙ্গীণ সাফল্যও কামনা করি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments