Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeসাহিত্যশঙ্কাতুর বইমেলা, সংকটে প্রকাশনা

শঙ্কাতুর বইমেলা, সংকটে প্রকাশনা

সামনে বইমেলা, তাও ব্যস্ততা নেই বইপাড়ায়। অস্বাভাবিকভাবে কাগজের দাম বাড়ায় নতুন বই প্রকাশে গতি নেই সৃজনশীল বই প্রকাশকদের। সব ধরনের কাগজে একই হারে দাম না বাড়লেও নানা পদের মধ্যে রিমপ্রতি সর্বোচ্চ ১৯-২০ হাজার টাকা বেড়েছে লেজার কাগজের দাম। পাইকারিতে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বইসংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বেড়েছে, হয়েছে অন্তত দ্বিগুণ। একুশে বইমেলা নিয়ে দুশ্চিন্তার রেখা পড়েছে প্রকাশকদের কপালে। সেই রেখার সংক্রমণ লেখক পাঠকদের মধ্যেও যে ছড়াবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।

বাংলাদেশের বইবাজারখ্যাত বাংলাবাজার এলাকায় সরেজমিনে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই মাসে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। রিমপ্রতি যে কাগজ তারা ১৭০০ টাকায় কিনতেন, সেই কাগজই এখন ৩৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এই সময়ে আমরা বইমেলার প্রস্তুতি নিই। আবার অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ডায়েরি, ক্যালেন্ডার করায়। এ জন্য কাগজের ব্যবসা ভালো থাকে। এবার ছাপার কাজটা আপাতত বন্ধ রেখে বাদবাকি করতে হচ্ছে, যাতে কাগজের দাম কমলে দ্রুত ছাপার কাজ সেরে নেওয়া যায়। কিন্তু সেটাও এখন অনিশ্চিত, কাগজের দাম না কমে বরং বেড়েই চলছে।’

ভাষাচিত্র প্রকাশনীর প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, ‘কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মূলত সিন্ডিকেটের কারণে। সরকার যদি এই সিন্ডিকেট ভেঙে কাগজ সহজলভ্য করতে দাম নির্ধারণ করে দেয় তাহলে প্রকাশকদের জন্য ভালো হবে। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া আসলে কিছুই করার নেই। আর এভাবে কাগজের দাম বহুগুণ বেড়ে গেলে এর চাপটা প্রকাশনার থেকে পাঠকের ওপরেই বেশি পড়বে। ফলে বইয়ের দাম পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে, তারা বই কিনবে না। এতে বইবাজারে ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

রাজধানীর কাঁটাবন এলাকার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার প্রকাশনাগুলোতেও কাজের গতি কমে এসেছে। অন্যান্য বছর এ সময় প্রকাশনাগুলো ঘিরে লেখকদের জটলা লেগে থাকে। এ বছর তেমন কোনো লেখকের আনাগোনা নেই, ব্যস্ততাও নেই প্রকাশনাগুলোতে। কাগজের দাম বাড়ায় কাগজের অপচয় হয় এমন মানহীন বই প্রকাশ না করার তাগিদ দিয়ে পেন্ডুলাম পাবলিশার্সের প্রকাশক রুম্মান তার্শফিক বলেন, ‘আগে থেকেই কাগজের দাম বেশি ছিল এবং বছরের এ সময়ে দাম বেড়ে যেত। কিন্তু এবার সবার টনক নড়ে উঠল কারণ এবার দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। এটা আসলে প্রকাশনীর জন্য চিন্তার বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজের দাম তো প্রকাশক বহন করেন না। বহন করেন পাঠক। বইয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঠকরা বই কিনতে আগের তুলনায় আরও সর্তক হবেন। সেক্ষেত্রে প্রকাশকদের বই প্রকাশে আরও সাবধান হতে হবে।’

প্রকাশকরা ব্যবসায়ী বলেই হয়তো সাবধানী বেশি। নামি প্রকাশকরাও হাতেগোনা বই প্রকাশ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বললেন সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হচ্ছে, বইমেলায় যে বই লেখকরা নিজেরাই কিনে নেবেন সে রকম বই।

ভালো মানের বই প্রকাশ করলে পাঠক দাম বেশি হলেও কিনবেন, কেউ কেউ এমনটা ভাবলেও অন্য প্রকাশকরা তেমনটা মনে করছেন না। পাঠক সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কাই অধিকাংশ প্রকাশকের। চৈতন্য প্রকাশনার প্রকাশক রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লেট, বাঁধাই, লেমিনেশনের খরচও বাড়ছে। আমরা যেখানে বইমেলায় ৩০-৩৫টা বই করি সেখানে ১০টা বইই করতে হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর বইয়ের মূল্যও বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এতে পাঠক সংখ্যাও কমে যাওয়ার শঙ্কায় আছি।’

পেন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কাগজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রকাশনা শিল্পের জন্য চরম অশনিসংকেত। তিনি বলেন, প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে শুধু প্রকাশক একা নন বরং পুস্তক বাঁধাই, প্রিন্টিং প্রেস, বাজারজাতসহ অনেকেই জড়িত। বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর জন্য কাগজের দাম বৃদ্ধি সত্যি বিপর্যয় ডেকে আনবে। বই প্রকাশ কম হবে। বইয়ের দাম বেশি হবে। সাধারণ পাঠকের জন্য বইকেনা দুরূহ হয়ে পড়বে।’

কাগজের দাম বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যেই বইয়ের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ। আর বইয়ের দাম বাড়ায় রাজধানীর বুকশপগুলোতেও বিক্রি কমেছে অনেকটাই। রাজধানীর বৃহৎ বুকশপ পাঠক সমাবেশের এক বিক্রয়কর্মী জানান, আগে যে পরিমাণ বই বিক্রি হতো, সেটা এখন আর হচ্ছে না। বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ঠিক একই কথা জানান বাতিঘর ও বেঙ্গল বুকশপের বিক্রয়কর্মীরা। বাতিঘরে বই কিনতে আসা মিজান বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহেই আমি নতুন নতুন বই কিনতাম। কিন্তু এখন কিনতে পারছি না। সাম্প্রতিক প্রকাশিত বইগুলোর দাম এত বেশি রাখা হয়েছে যে, আগে আমি যে টাকায় তিন চারটা বই কিনতাম সেই টাকায় এখন দুই একটা বই কিনতে পাচ্ছি। অনেক সময় তাও হচ্ছে না।’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments