বুধবার রাজধানীতে ‘ডিপ্লোম্যাটস পাবলিকেশন্স’ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তারা বলেন, মিয়ানমার ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক উৎপাদন করে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরবরাহ করছে।
এর মাধ্যমে দেশটি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে; কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু মাদক নয়, মিয়ানমার থেকে অস্ত্রও আসছে এ দেশে। এসব কারণে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তারা। বক্তারা বলেন, মিয়ানমার যাতে মাদক উৎপাদন ও পাচার করতে না পারে, সেজন্য ইন্টান্যাশনাল নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ডের পক্ষ থেকে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসতে শুরু করে। চালানকৃত ইয়াবার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং তা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক সংকট তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশে আসায় বহুমাত্রিক সংকট তৈরি হয়েছে। কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। বেড়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব। এ পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তাও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। বস্তুত মিয়ানমার বাংলাদেশের জন্য যে সংকট তৈরি করেছে, বক্তাদের সবাই তারই সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন।
এক হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় অভিযান চালিয়ে ২০ লক্ষাধিক ইয়াবা, দেশি-বিদেশি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ এবং বিক্রয়নিষিদ্ধ পণ্য জব্দ করাসহ ৯৭২ জন দুষ্কৃতকারীকে আটক করা হয়েছে। এ পরিসংখ্যান নিশ্চিতভাবেই রোহিঙ্গা সংকটের প্রকট রূপেরই প্রতিচ্ছবি। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিল মানবিক কারণে।
অথচ তারাই এখন মূর্তিমান সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এ সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এই মীমাংসা হতে পারে একমাত্র রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ করা, যাতে দেশটি তার নাগরিকদের ফেরত নিতে সম্মত হয়।
বুধবারের অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি। ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ডের উচিত হবে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, যাতে দেশটি মাদক উৎপাদন ও সরবরাহ থেকে বিরত থাকে।