Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeধর্মরাস্তায় চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা মুমিনের কাজ নয়

রাস্তায় চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা মুমিনের কাজ নয়

প্রতিদিনই মানুষকে চলাফেরা করতে হয়। কোথাও না কোথাও যেতেই হয়। সে প্রয়োজনেই নির্মিত হয় রাস্তাঘাট, সড়ক-মহাসড়ক। ইসলামে রাস্তার পরিচ্ছন্নতা, পরিধি ও অধিকার নিয়ে যথার্থ আলোচনা আছে, যার মাধ্যমে ইসলামের নান্দনিকতা ও পরিপূর্ণতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

রাস্তা সচল ও পরিষ্কার রাখা : রাস্তা সচল ও পরিষ্কার রাখা ঈমানের অন্যতম একটি শাখা। রাস্তা বন্ধ করা, রাস্তায় নির্মাণসামগ্রী বা অন্য কিছু রেখে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা অথবা ময়লা-আবর্জনা, ফলের খোসা, উচ্ছিষ্ট খাবার, পানের পিক, দুর্গন্ধ ছড়ায় এমন কোনো জিনিস ফেলা কোনোভাবেই ঈমানদারের কাজ নয়। বরং ঈমানের দাবি হলো—রাস্তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা আছে। সর্বোত্তম শাখা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলা। (মুসলিম, হাদিস : ১৬২)

রাস্তার পরিধি : প্রশস্ত রাস্তায় নির্বিঘ্নে পথচলা যায় এবং অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অবকাশ থাকে। ইসলামে রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে এর পরিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নতুন জায়গায় বাড়ি করতে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে রাস্তার পরিধি নিয়ে মতবিরোধ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাস্তার পরিধি উল্লেখ করে ফায়সালা দিয়েছেন। রাস্তা তৈরি করার ক্ষেত্রে সেটির অনুসরণ ফরজ না হলেও তা অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়। এমন রাস্তা যা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সসহ প্রয়োজনীয় গাড়িঘোড়া চলাচল করতে পারে এবং সহজে জানাজার খাটিয়া বহন করা যায়। কাজেই রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন পরিধি হাদিসের বর্ণনামতোই হওয়া উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা রাস্তা সাত হাত পরিমাণ চওড়া করো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৩৮)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, যখন মালিকরা রাস্তার ব্যাপারে পরস্পরে বিবাদ করল, তখন নবী (সা.) রাস্তার জন্য সাত হাত জমি ছেড়ে দেওয়ার ফায়সালা দেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৭৩)

সাত হাত ফুটের হিসাবে ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি হয়।

রাস্তার অধিকার : রাস্তা মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য নির্মিত হয়। কাজেই রাস্তা অবরোধ করে বা বন্ধ করে বা দখল করে পথচারীদের কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) রাস্তার অধিকার আদায় করে রাস্তা ব্যবহারের কথা বলেছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাস্তায় বোসো না।’ সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের তো এর প্রয়োজন হয়। পরস্পরে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘বসতেই হলে রাস্তার হক আদায় করে বোসো।’ সাহাবিরা বললেন, আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কী? রাসুল (সা.) বললেন, রাস্তার হক হলো—১. দৃষ্টিকে অবনত রাখা, ২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া, ৩. সালামের জবাব দেওয়া, ৪. সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা। (বুখারি, হাদিস : ৬২২৯)

অন্যান্য বর্ণনায় আরো আছে। যেমন—৫. পথহারাকে পথ দেখিয়ে দেওয়া, ৬. মজলুম ও বিপদগ্রস্তের সাহায্য করা, ৭. বোঝা বহনকারীকে সহযোগিতা করা, ৮. ভালো কথা বলা এবং ৯. হাঁচির জবাব দেওয়া। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮১৯; মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস: ৫২৩২; মুসলিম, হাদিস : ২১৬১; মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৬৬০৩)

এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে আছে—১০. দম্ভভরে না চলা, অর্থাৎ বিনয় অবলম্বন করে পথ চলা। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭)

পরিশেষে বলা যায়, চলাফেরার মধ্যেও মহান আল্লাহকে স্মরণ করে নিজেদের ঈমান আমল সংরক্ষণ করার মাধ্যমে পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করার সুযোগ আছে। অপেক্ষা শুধু কাজে লাগানোর। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments