Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeধর্মরামি পাঠাগার: তুরস্কের সেনাকেন্দ্র যেভাবে জ্ঞানকেন্দ্র হলো

রামি পাঠাগার: তুরস্কের সেনাকেন্দ্র যেভাবে জ্ঞানকেন্দ্র হলো

সেনানিবাস হিসেবে রামি ব্যারাকের ব্যবহার বন্ধ হয় ১৯৬০ সালে। এর পর থেকেই ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক স্থাপত্যটির ভাগ্যাকাশে যেন মেঘ জমেছিল। গত শতকের আশির দশকে কার পার্কিং, ফুটবল পিচ ও খাদ্যগুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় তা। যদিও ১৯৭২ সালেই রামি ব্যারাক তুরস্কের সাংস্কৃতিক সম্পদ হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছিল। তুরস্কে ইসলামপন্থী সরকার আসার পর উসমানীয় খেলাফতের স্মৃতিবাহী ভবনটির অতীত মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেনাকেন্দ্র রূপান্তর হয় জ্ঞানকেন্দ্রে। দীর্ঘ আট বছর সংস্কারকাজ চলার পর ১৮ শতকে নির্মিত ভবনটি যেন নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। রামি ব্যারাক পরিণত হয়েছে ইস্তাম্বুলের বৃহৎ গণপাঠাগারে। যাতে ৭০ লাখ বইসহ গুরুত্বপূর্ণ বহু নথি, পাণ্ডুলিপি ও স্মারক স্থান পেয়েছে। জানুয়ারি ২০২৩ সালে রামি পাঠাগার সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

রামি পাঠাগারের বুকশেলফের আয়তন ৩৬ হাজার বর্গমিটার। চার হাজার ২০০ পাঠক একসঙ্গে সেখানে বই পড়তে পারবে। পাঠকক্ষ ছাড়াও এতে আছে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি উদ্ধারকক্ষ, সাক্ষাৎকার কক্ষ, ক্যাফে, বই বিতান ও ছোট জাদুঘর। পাঠাগারের দীর্ঘ করিডরগুলো তুরস্কের অতীত ও বর্তমান শিল্পীদের শিল্পকর্ম দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, রামি পাঠাগার সাধারণ পাঠক ও গবেষক উভয় শ্রেণির দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য পাঠাগার প্রাঙ্গণে আছে ৫১ হাজার বর্গমিটারের নান্দনিক বাগান।

রামি ব্যারাকের নির্মাণকাজ শুরু হয় সুলতান তৃতীয় মোস্তফার সময় (১৭৫৭-১৭৭৪ খ্রি.)। উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে সেনানিবাসটির সম্প্রসারণ করেন। তিনি মূলত ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে বিশৃঙ্খল ও অনিয়মিত জানিসারি বাহিনীর পরিবর্তে স্থায়ী ও শক্তিশালী নিয়মিত আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আশা করছিলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্য অতীত ভাবমূর্তি ফিরে পাবে এবং তিনি তাঁর ইউরোপীয় প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবেন। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ রামি ব্যারাকে উসমানীয় সামরিক পতাকা উত্তোলন করেন এবং এখানে অবস্থান করে সেনাবাহিনী পরিচালনা করেন। ভেতরে তিনি পশ্চিমা ধাঁচের একটি আধুনিক সামরিক ক্যাডেট স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুর্কি বাহিনীর বিপর্যয়ের আগ পর্যন্ত রামি ব্যারাক সেনা সদর হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। ১৯১৮ সালে ফরাসি বাহিনী ইস্তাম্বুল দখলের সময় রামি ব্যারাকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তারা কম্পাউন্ডে অবস্থিত মসজিদের মিনারে ক্রুশ স্থাপন করে, যা তুর্কি সেনাবাহিনী ও সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ করে। আহত করে ফরাসি বাহিনীতে থাকা আলজেরীয় সেনাদের। এই ঘটনা ফরাসি বাহিনীর বিরুদ্ধে তুর্কি জনগণকে সংঘবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ১৯২৩ সালে তুর্কিরা ইস্তাম্বুলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার পর সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছিল তা হলো মসজিদের মিনার থেকে ক্রুশ অপসারণ। সে সময় থেকেই রামি ব্যারাক তুর্কিদের কাছে স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আছে।

মিডলইস্ট আই অবলম্বনে

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments