Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeজাতীয়রাজনীতিকে রক্তাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে: আব্দুর রব

রাজনীতিকে রক্তাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে: আব্দুর রব

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, আজকে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ। একজন দেশের বাহিরে অন্যরা কবে যাবে জানি না। প্রতিদিন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা খুন হচ্ছে, রক্ত ঝরছে, গুম হচ্ছে আসলে সরকার কি চায় জানি না। রাজনীতিকে রক্তাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সরকার  একটাও সত্য কথা বলে না। বিদেশ থেকে চাল কেনার ডলার নাই অথচ বলবে আছে। আজ বিকালে রাজধানীর শাহবাগে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’- কর্তৃক আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা এই মঞ্চের সবাই ক্ষমতায় আসতে চাই। তবে একা নয়, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আসতে চাই। বর্তমানে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গেলে সেই পরিবারটি আর মধ্যবিত্ত থাকে না। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে  গিয়ে গরিব হয়ে যায়।

আমরা ক্ষমতায় গেলে সকল গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবো। আর আমাদের ক্ষমতায় আসতে হলে এই জালিম সরকারকে আগে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নির্যাতন- নিপীড়ন, হামলা-মামলার মাধ্যমে অন্যদের দমিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে কোনো আন্দোলন বা রাজনৈতিক দলকে দমানো যায় না।

 নুর ডাকসু’র ভিপি হওয়ার পর সরকার খুশি হতে পারেনি। তাই নুরদের যেখানে পেয়েছে সেখানেই হামলা করেছে কিন্তু তাতে নুরদের রাজনৈতিক অগ্রগতিকে দমাতে পারেনি। এছাড়াও সরকার বলেছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে  দেবে। তাদের মিছিলে গুলি করে তাদের কর্মীকে হত্যা করেছে। এখন একটি ইউনিয়নেও বিএনপি সমাবেশ ডাকলে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি জানিয়ে মান্না বলেন, আমি এই কথা বলছি না যে, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাই না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো লাগবেই। কিন্তু এই সরকার চলে গেলে যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমতায় দেবে তা হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো হবেই সেইসঙ্গে একটি পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থাও করবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশে মাফিয়ার রাজত্ব কায়েম করেছে। দলকে তারা মাফিয়ার আদলে তৈরি করেছেন। মাফিয়া শাসন যেভাবে চলে- কেন্দ্রে একজন ক্ষমতায় থাকেন, আর তার অনুসারীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পেশি শক্তি ও অস্ত্রের মুখে সেই অঞ্চলের জনগণকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে, বর্তমান সরকারও ঠিক তাই করছে। সরকারের অনুগতদের ওপর থেকে নিজেদের প্রয়োজনে যা ইচ্ছা তা করার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ইডেন কলেজ তার সব থেকে আদর্শ উদাহরণ। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জেনেছি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য ইডেন কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাঠানো হচ্ছে। কোন ক্ষমতা বলে সেটা করা হয়? মাফিয়া ক্ষমতা বলে। প্রধানমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে গণতন্ত্র মঞ্চের এ নেতা বলেন, আপনি ইডেন কলেজের ভিপি  ছিলেন, আপনার ক্যাম্পাসে এমন ন্যক্কারজনক কর্মকা- প্রকাশ্যে আসার পর আপনার উচিত ছিল প্রশাসনসহ এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে বরখাস্ত করা কিন্তু আপনি তা করেননি। সাকি আরও বলেন, দেশে এখন ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসন চলছে। এই সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যে কোনো কিছু করতেই পারে। তারা মুখে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজেরাই সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়। প্রীতম দাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে তারা ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে আন্দোলনকে দমাতে চায়। এ সরকারের ছত্রছায়ায় দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামেগঞ্জে আজ চুরি, লুটপাট ও দুর্নীতির মহোৎসব চলছে বলেও তিনি দাবি করেন।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরু বলেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চ  তৈরি করা হয়েছে। কোনো দলকে ক্ষমতা থেকে নামানো কিংবা ক্ষমতায় আনার জন্য নয়। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করবো। আওয়ামী লীগ সরকার দেশে দুর্বৃত্তায়ন কায়েম করেছে উল্লেখ করে ডাকসু’র এই সাবেক ভিপি বলেন, আজকাল চট্টগ্রামের ডিসি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় আনার জন্য মোনাজাত করেন, পুলিশ কমিশনার আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রায় অংশ নেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আওয়ামী লীগ নেতার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন, ইডেনের অধ্যক্ষ ছাত্রলীগের অপকর্মকে প্রশ্রয় দেন। এগুলো হচ্ছে হাসিনা সরকারের উন্নয়নের নমুনা, এভাবেই তারা দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা করিয়ে সরকার নিজেদের চরিত্র সবার সামনে তুলে ধরছে দাবি করে নুরু বলেন, হামলা-মামলা দিয়ে জনগণের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা এই স্বৈরাচারী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবো।
বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সমাবেশ শুরু হয় চারটারও পরে পরে। তবে সমাবেশ শুরুর আগে থেকে মিছিল নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা সমাবেশ চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। সন্ধ্যার পর পর্যন্ত চলা এ সমাবেশ শেষ হওয়ার আগে গণতন্ত্র মঞ্চের আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা জোনায়েদ সাকি সংগঠনটির আগামীর কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেশের আট বিভাগীয় শহর ও প্রতিটি জেলা শহরে গণতন্ত্র মঞ্চ সমাবেশ করবে বলে তিনি জানান। আর ঢাকায় সংগঠনটি প্রতিটি থানায় থানায় সমাবেশ করবে, ৭ই অক্টোবর কাওরান বাজারে সমাবেশের মধ্য দিয়ে সেটি শুরু হবে।
এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক সানাউর রহমান তালুকদার, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাউয়ূমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments