Tuesday, April 16, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামরাজধানীর জলাবদ্ধতা : মুক্তি মিলবে কবে?

রাজধানীর জলাবদ্ধতা : মুক্তি মিলবে কবে?

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে আকাশ থেকে নেমে আসা গত সোমবারের টানা বর্ষণ দেখিয়ে দিয়েছে, কী বর্ষাকাল, কী শীতকাল-জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই রাজধানীবাসীর। বস্তুত এ নগরীর মানুষের জীবনধারার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জলাবদ্ধতা।

বছরের যে সময়েই হোক না কেন, সামান্য বৃষ্টিতেই কোথাও না কোথাও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি যেন নগরবাসীর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর টানা বর্ষণ বা ভারি বৃষ্টিপাত হলে তো কথাই নেই। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো চলে যায় পানির নিচে। ড্রেন-খাল উপচে বাড়িঘরেও পানি ঢুকে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও কাজকর্মের পাশাপাশি বিঘ্নিত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা।

জলাবদ্ধতার প্রধান কারণগুলো খুঁজলে প্রথমদিকে থাকবে-অপরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ, পানিপ্রবাহের ছোট-বড় নালায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, বিভিন্ন স্থানে নালা সরু করে ফেলা এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করা, খাল দখল ও ভরাট ইত্যাদি। মূলত অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন থেকেছে। দুই সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার উন্নয়ন কাজে কেবল সমন্বয়হীনতা নয়, পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবও প্রকট। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) দুই ভাগ করার সময় বলা হয়েছিল, উন্নত নাগরিক সেবা প্রদানই বিভাজনের মূল্য উদ্দেশ্য। শুধু তাই নয়, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই মেয়র জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করা হবে বলে নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু এসব যে নিছকই গালগল্প, গত সোমবারের বৃষ্টিতে রাজধানীবাসী তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।

দুঃখজনক হলো, জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর রাজধানীর জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লেও এ থেকে উত্তরণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রশ্ন, এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে কবে? দেখা যায়, বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাই শুধু ভেঙে পড়ে না, পাশাপাশি রাস্তায় আটকে পড়ে শ্রমজীবী-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। জলাবদ্ধতা নগরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হলেও এ থেকে মুক্তি মিলছে না মূলত সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনাহীনতা এবং অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে। অবশ্য এজন্য নগরবাসীর অসচেতনতাও কিছুটা দায়ী।

গত সোমবারের জলাবদ্ধতার চিত্র আমাদের সামনে যে সত্যটি তুলে ধরেছে, তা হলো-উন্নয়নের নামে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। রাজধানীর ২৬টি খাল, তিন হাজার কিলোমিটার ড্রেন ও জলাশয় ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের হাতে ন্যস্ত করা হলেও সেগুলো পৌনঃপুনিকভাবে আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ অবধারিতভাবে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে দুজন মেয়র রয়েছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন কাউন্সিলররা। সবার উচিত, সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং তা সার্বক্ষণিকভাবে পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা নেওয়া। একইসঙ্গে আরও একটি কাজ করা জরুরি। রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীগুলো সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। এর ব্যত্যয় হলে সাংবাৎরিক জলাবদ্ধতায় আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়বে নগরবাসীর জীবন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments