Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মরজব মাসের তাৎপর্য ও করণীয়

রজব মাসের তাৎপর্য ও করণীয়

হিজরি মাসগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ ও মহিমান্বিত মাসের নাম রজব। এ মাস আসে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে। তাই এই রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ মাসের বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এ মাস আল্লাহ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুমের) একটি। রাসুল (সা.) এ মাস সম্পর্কে খুবই গুরুত্ব দিতেন। ফলে রজবের চাঁদ দেখা গেলেই তিনি কিছু বিশেষ আমল শুরু করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’ (আলমুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯)

হাদিস শরিফে রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হওয়ার সুসংবাদ এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না, অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন। রাতগুলো হলো—জুমার রাত, রজবের প্রথম রাত, শাবানের ১৫ তারিখের রাত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৭)

রজব মাসে রোজা রাখার ভিন্ন কোনো ফজিলত নেই। তবে হ্যাঁ, এমনিতেই নফল রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাকেম ইবনে হাজার (রহ.) লিখেছেন, বিশেষভাবে রজব মাসে রোজার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ ও আমলযোগ্য কোনো হাদিস নেই। (তাবইনুল আজার বিমা ওরাদা ফি ফজলি রজব, পৃষ্ঠা ১১)

ইসলামী শরিয়তে রোজা রাখার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ দিনগুলো ছাড়া যেকোনো দিনই নফল রোজা রাখা যায়। এর অনেক ফজিলত রয়েছে। তবে রজবের বিশেষ রোজা হিসেবে ফজিলতপূর্ণ মনে করে রোজা রাখা সুন্নত নয়। বিশেষত, রজবের রোজাকে সুন্নত ও মুস্তাহাব মনে করে নফল রোজা রাখা ঠিক নয়।

আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, ২৭ রজবে রোজা রাখা অনেক ফজিলত। এমনকি অনেকের মধ্যে এ বিশ্বাস রয়েছে যে এই একটি রোজার ফজিলত এক হাজার রোজার সমান। এ জন্য তাকে হাজারি রোজা বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ ও গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই। আল্লামা ইবনুল জাওজি, হাফেজ জাহাবি, তাহের পাটনি, আবদুল হাই লখনবি (রহ.) প্রমুখ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এ রোজার ফজিলতকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেছেন। (কিতাবুল মাওদুয়াত, ইবনুল জাওজি : ২/২০৮, তালখিসুল মাওদুয়াত, পৃষ্ঠা ২০৯, তাজকিরাতুল মাওজুয়াত, পৃষ্ঠা ১১৬, আল আসারুল মারুপা, পৃষ্ঠা ৫৮)

এ মাসে পশু জবাই করে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা বা প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার একটি রেওয়াজ ছিল। একে ‘আতিরা’ বলা হতো। রাসুল (সা.) এই প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, “ইসলামে ‘ফারা’ (উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতিমার উদ্দেশে) জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং ‘আতিরা’ও নেই। অর্থাৎ রজব মাসে প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথাও নেই।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪৭৩)

তাই আসুন, আমরা রজব মাসের যথাযথ ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করি। অনর্থক বিদআত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments