বিজ্ঞানীরা নতুন গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, মানুষের রক্তের ধরন তার আগেভাগে স্ট্রোকের ওপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যেসব মানুষের রক্তের গ্রুপ ‘এ’, তাদের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। রক্তের অন্য গ্রুপের সঙ্গে তুলনা করে এসব তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা। এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন সায়েন্স এলার্টে। এতে ফেলিসিটি নেলসন লিখেছেন, আমাদের লোহিত রক্তকোষের পৃষ্ঠদেশে কি ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে তা বর্ণনা করে রক্তের ধরণ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত যে দুটি তা হলো ‘এ’ এবং ‘বি’। আবার একত্রে তারা ‘এবি’ হিসেবেও থাকতে পারে। আবার এর বাইরে ‘ও’ হিসেবেও থাকতে পারে। রক্তের এই ধরন বা টাইপের মধ্যেও এর জন্য দায়ী জিনের রূপান্তর থেকে সূক্ষ্ম পরিবর্তন।
তবে জিন নিয়ে গবেষণায় ‘এ১’ সাবগ্রুপের সঙ্গে আগেভাগেই স্ট্রোকের নতুন এক সম্পর্ক উন্মোচিত করেছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে গবেষকরা ৪৮টি জেনেটিক গবেষণার ডাটা একত্রিত করেছেন।
এসব ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার মানুষ থেকে, যারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এছাড়া প্রায় ৬ লাখ মানুষের ডাটা নেয়া হয়, যারা স্ট্রোকে আক্রান্ত হননি বা নিয়ন্ত্রণে আছেন। এসব অংশগ্রহণকারীর সবার বয়স ১৮ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। আগেভাবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক আছে এমন দুটি লোকেশনের সন্ধান পাওয়া গেছে জিনোম-ভিত্তিক গবেষণায়। রক্তের গ্রুপের জিন যে স্থানে অবস্থান করে, সেটার সঙ্গে এর মধ্যে একটি স্থান মিলে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্লেষণে রক্তের ধরনের জিন নিয়ে গবেষণা করা হয়। তাতে রক্তের গ্রুপ ‘এ’-এর বিভিন্ন ভ্যারিয়েশন যাদের আছে তাদের জিনে দেখা গেছে, অন্য ধরনের রক্তের চেয়ে তারা ৬০ বছরের আগেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উচ্চ। তাদের এমন স্ট্রোকে আক্রান্তের শতকরা হার ১৬ ভাগ। অন্যদিকে যাদের জিনে গ্রুপ ‘ও১’ জিন আছে, তাদের এই ঝুঁকি কমে দাঁড়ায় ১২ ভাগ। এই গবেষণা করেন ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ভাসকুলার নিউরোলজিস্ট ও সিনিয়র লেখক স্টিভেন কিটনার। তিনি বলেন, কেন রক্তের গ্রুপ ‘এ’ বিশিষ্টদের ঝুঁকি বেশি তা এখনও আমরা জানি না। তবে এক্ষেত্রে সম্ভবত প্লেটলেট ও কোষের মতো রক্ত জমাট বাঁধার কোনো বিষয় আছে। এর সঙ্গে অন্যান্য প্রোটিনেরও সম্পর্ক থাকতে পারে। সব মিলে রক্ত জমাট বাঁধায় ভূমিকা রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৮ লাখের মতো মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ৬৫ বছর বা তারও বেশি বয়সী। প্রতি চারজনের মধ্যে এমন বয়সীর সংখ্যা প্রায় তিনজন। বয়স ৫৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রতি এক দশকে এই ঝুঁকি দ্বিগুন হারে বাড়তে থাকে।