Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeধর্মযেসব বস্তু ধ্বংস ডেকে আনে

যেসব বস্তু ধ্বংস ডেকে আনে

অপরিশুদ্ধ অন্তর : মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো অপরিশুদ্ধ অন্তর। এর লালসা ও চাহিদা মেটাতে গিয়ে মানুষ নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। দুনিয়া ও আসমানবাসীর কাছে নিজেকে ঘৃণিত করে তোলে। কারণ অপরিশুদ্ধ হৃদয়ের কাজ হলো মানুষকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। কেননা নিশ্চয়ই মানুষের নাফস খারাপ কাজের নির্দেশ দিয়েই থাকে; কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার রব দয়া করেন। নিশ্চয় আমার রব অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)

কৃপণতা : অনেকে ধারণা করে একটু কৃপণ না হলে জীবনে উন্নতি করা সম্ভব নয়। ধন-সম্পদ আগলে রাখতে হলে কৃপণ হওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু ইসলাম বলছে, কৃপণতা মানুষের বড় শত্রু। এটি মানুষের ধ্বংসের কারণ। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) ভাষণ দিলেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, যখন তারা তাই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)

সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ : লোভ-লালসা মানুষকে বেপরোয়ারা করে তোলে, আর তা মানুষকে আল্লাহর বিধান অমান্য করে পাপাচারে মত্ত করে তোলে, ফলে মানুষ নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। কাব ইবনে মালিক আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)

দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া : দুনিয়ার প্রতি আসক্তিও মানুষের বড় শত্রু। যারা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে, মহান আল্লাহ তাদের মন থেকে প্রশান্তি তুলে নেবেন। তাদের জীবন থেকে বরকত তুলে নেবেন। ফলে সে দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারাবে। আবান বিন উসমান থেকে বর্ণিত, জায়দ বিন সাবিত (রা.) দুপুরের সময় মারওয়ানের কাছ থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আমাদের শ্রুত কতক হাদিস শোনার জন্য মারওয়ান আমাদের ডেকেছেন। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পার্থিব চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসঙ্গী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদিরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখিরাত, আল্লাহ তার সব কিছু সুষ্ঠু করে দেবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাজির হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১০৫)

শয়তান : মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রুগুলোর একটি শয়তান, যা মানুষকে সব সময় বিভ্রান্ত করে। প্রতিটি মানুষের সঙ্গেই একটি করে শয়তান নিয়োজিত থাকে, যা মানুষকে সর্বদা পাপের প্রতি উৎসাহ দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই একটি শয়তান নির্ধারিত আছে। সাহাবারা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনার সঙ্গেও কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার সঙ্গেও। তবে তার মোকাবেলায় আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন। এখন আমি তার সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। এখন সে আমাকে কল্যাণকর বিষয় ছাড়া কখনো অন্য কিছুর নির্দেশ দেয় না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭০০১)

দাম্ভিকতা : অহংকার, দাম্ভিকতা মানুষের ব্যক্তিত্বতে শেষ করে দেয়। তাকে সব মহলে নিন্দিত করে তোলে। মানুষের কাজে ঘৃণিত করে তোলে। মহান আল্লাহও দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা : নাহাল, আয়াত : ২৩)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জাহান্নাম ও জান্নাত বিতর্কে লিপ্ত হলো। জাহান্নাম বলল, অহংকারী ও পরাক্রমশালী স্বৈরাচারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। বেহেশত বলল, দুর্বল ও নিঃস্বরাই আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বলেন, তুই হলি আমার আজাব। যার থেকে ইচ্ছা আমি তোর মাধ্যমে প্রতিশোধ নেব। তিনি বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার রহমত, যাকে ইচ্ছা আমি তোমার মাধ্যমে অনুগ্রহ করব। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯২)

গোপন পাপ : এটি নিরবে মানুষকে শেষ করে দেয়। এর পরিণাম ভয়াবহ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন পাপ বর্জন করো। যারা পাপ করে, অচিরেই তাদের পাপের সমুচিত শাস্তি দেওয়া হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২০)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments