কোরআনে কারিম ও হাদিসে বহু জায়গায় আগের উম্মতের বিচিত্র ঘটনাবলি বর্ণিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই উম্মতকে সতর্ক করা, তারা যেন এ ধরনের অন্যায় কাজ থেকে সতর্ক থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আমি রাসুলদের সব বৃত্তান্ত তোমাকে বলছি, যা দ্বারা তোমার অন্তরকে মজবুত করছি। আর এভাবে তোমার কাছে মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসিহত ও স্মরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ১২৯)
সাজার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করা : সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ দূর করার জন্য সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থার বিকল্প নেই। মানুষের জানমাল রক্ষা করা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সঠিকভাবে বিচার কার্য করতে হবে। এ জন্য যে অন্যায় করে তার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শিথিলতা করা যাবে না। ধনী-গরিব দুর্বল-সবল সবার ক্ষেত্রেই একই নিয়ম প্রযোজ্য। কারো ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সুপারিশ কিংবা তোষামোদ কিছুই চলবে না। এটা ইসলামের নির্দেশনা। রাসুল (সা.) আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন যে পূর্ববর্তী উম্মতরা সঠিক পদ্ধতিতে বিচার না করার কারণে ধ্বংস হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, …অতঃপর নবী? (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবায় বললেন, তোমাদের আগের জাতিসমূহকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে যখন তাদের মধ্যে কোনো সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অন্যদিকে যখন কোনো অসহায় গরিব সাধারণ লোক চুরি করত, তখন তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দিতাম। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৭৫)
কৃপণতা : সম্পদের প্রতি অধিক লোভ করা ও তা খরচ করার ব্যাপারে কৃপণতা করা, এটি আগের উম্মতের ধ্বংসের একটি কারণ ছিল। কারণ কৃপণতা হচ্ছে অন্তরের ব্যাধি। আমাদের নবী (সা.) আমাদের এ থেকে সতর্ক করেছেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা অত্যাচার থেকে বিরত থাকো। কেননা কিয়ামতের দিন অত্যাচার অন্ধকারে পরিণত হবে। তোমরা কৃপণতা থেকে সাবধান হও। কেননা এ কৃপণতাই তোমাদের আগের জাতিকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাঁদের খুন-খারাবি ও রক্তপাতে উৎসাহ জুগিয়েছে এবং হারাম বস্তু হালাল জ্ঞান করতে প্রলোভন দিয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৭০)
অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন ও বিবাদ করা : আম্বিয়ায়ে কেরামের সঙ্গে বিবাদ করা ও অহেতুক প্রশ্ন করে তাদের বিরক্ত করা, পূর্ববর্তী উম্মতের ধ্বংস হওয়ার কারণ ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, তোমরা আমাকে ততটুকু কথার ওপর থাকতে দাও, যতটুকু আমি তোমাদের জন্য বলি। কারণ তোমাদের আগের লোকেরা তাদের বেশি প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবীদের বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের যখন কোনো কিছু করার নির্দেশ দিই, তোমরা তা যথাসাধ্য পালন করো এবং যখন তোমাদের কোনো কিছু করতে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ করো। (মুসলিম, হাদিস : ৩১৪৮)
সীমালঙ্ঘন করা : যেকোনো ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি নিন্দনীয় ও তা বর্জনীয়। দ্বিনের ক্ষেত্রেও একই কথা। পূর্বেকার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন ছিল, যারা দ্বিনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে কিতাবিরা, স্বীয় দ্বিনের মধ্যে তোমরা বাড়াবাড়ি কোরো না এবং আল্লাহর সম্পর্কে সত্য ছাড়া কিছু বোলো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৭১)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : রাসুল (সা.) বলেছেন, সাবধান! দ্বিনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কোরো না। কেননা তোমাদের আগে যারা ছিল, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি তাদের ধ্বংস করেছে। (নাসাঈ, হাদিস : ৩০৫৭)
দুনিয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করা : ইসলাম আমাদের ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করার আদেশ দিয়েছে। সততা ও ন্যায়ে একে অন্যের থেকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। বিপরীতে দুনিয়ার ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। কারণ দুনিয়ার মোহ আমাদের পরকাল থেকে বিমুখ করে দেয় এবং অন্যায় অপরাধের দ্বার খুলে দেয়। রাসুল (সা.) শপথ করে বলেছেন, আমি এই উম্মতের ব্যাপারে দরিদ্রতার ভয় করি না, আমি ভয় করি তাদের দুনিয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা করা। মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং যা তোমাদের খুশি করে তাঁর আকাঙ্ক্ষা রাখো। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের ব্যাপারে দারিদ্র্যের ভয় করি না। কিন্তু তোমাদের ব্যাপারে এ আশঙ্কা করি যে তোমাদের ওপর দুনিয়া এরূপ প্রসারিত হয়ে পড়বে যেমন তোমাদের অগ্রবর্তীদের ওপর প্রসারিত হয়েছিল। আর তোমরাও দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যেমন তারা আকৃষ্ট হয়েছিল। আর তা তোমাদের ধ্বংস করবে, যেমন তাদের ধ্বংস করেছে। (বুখারি, হাদিস : ৩১৫৮)