Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeধর্মযেভাবে নির্মিত হয় ইউরোপের সর্ববৃহৎ মসজিদ

যেভাবে নির্মিত হয় ইউরোপের সর্ববৃহৎ মসজিদ

১৯২৯ সালে ইতালিতে নির্বাসিত হন আফগান যুবরাজ মুহাম্মদ হাসান ও তাঁর স্ত্রী প্রিন্সেস রাজিয়া। প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ও বাংলাদেশ সরকারসহ প্রায় ২২টি মুসলিম দেশ মসজিদটি নির্মাণে অর্থায়ন করে

গ্র্যান্ড মস্কো অব রোম ইউরোপের সর্ববৃহৎ মসজিদ। রোমের প্রথম এ মসজিদটি রোমের উত্তরাঞ্চলের প্যারিওলির আকুয়া এসেটোসা এলাকায় অবস্থিত। মসজদটির আয়তন প্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটার। তাতে একসঙ্গে ১২ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।

তা ছাড়া ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, লাইব্রেরি ও ইসলামিক স্কুলও রয়েছে এ মসজিদে। ধর্মীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাজসেবামূলক তৎপরতাও রয়েছে এ মসজিদে। ইসলাম বিষয়ক পাঠদান, বিবাহ অনুষ্ঠান, জানাজার নামাজসহ তাতে বিভিন্ন সেমিনার ও ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।

১৯২৯ সালে ইতালিতে নির্বাসিত হন আফগান যুবরাজ মুহাম্মদ হাসান ও তার স্ত্রী প্রিন্সেস রাজিয়া। মূলত তারাই বৃহত্তম এ মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ও বাংলাদেশ সরকারসহ প্রায় ২২টি মুসলিম দেশ মসজিদটি নির্মাণে অর্থায়ন করে। এর নির্মাণব্যয় হয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ইউরো। মসজিদের প্রতি বর্গফুটে প্রায় তিন হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।

১৯৭৪ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ইতালি গেলে দেশটির সরকারের কাছে মসজিদ স্থাপনের আহ্বান জানান। এরই প্রেক্ষিতে সেই বছর রোমান সিটি কাউন্সিল মসজিদের ২০ বর্গমিটার জমি দান করে। মসজিদ নির্মাণব্যয়ের ৭০ শতাংশ সৌদি সরকার বহন করে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করে। তবে নানা বাধা-বিপত্তির কারণে দীর্ঘ এক দশক পর ১৯৮৪ সালে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। মসজিদের মিনার নির্মাণ নিয়ে প্রথমে অনেকে বিতর্ক ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও দ্বিতীয় পোপ জন পলের আশীর্বাদে তা দূর হয়। তবে মিনারের উচ্চতাকে সেন্ট পিটার্সের গম্বুজের চেয়ে এক মিটার কমিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হয়।

এদিকে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সৌদির অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় আল হাসান এর প্রায় ৩০ মিলিয়ন ইউরো প্রদান করেন। তাই মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মতো এর নকশা করা হয়। প্রখ্যাত ইতালীয় স্থাপত্যবিদ ইতিহাসবিদ পাওলো পোর্টোগেসি ভিত্তোরিও গিগলিওটি ও সামি মুসাভি এ মসজিদের নকশা করেন। ১৯৯৫ সালের ২১ জুন মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন ইতালির প্রেসিডেন্ট সান্দ্রো পেরতিনি, রোমের পোপ দ্বিতীয় জন পল ও তৎকালীন সৌদি প্রিন্স সালমান বিন আবদুল আজিজসহ

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।

আন্দালুসিয়ান শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি নজর কাড়ে সবার। মসজিদের মধ্যভাগে রয়েছে ধূসর বর্ণের ১৬টি গম্বুজে আবৃত একটি বড় গম্বুজ। তিনটি অংশে বিভক্ত এ মসজিদের বাইরে রয়েছে ২৬ মিটার উঁচু মিনার। প্রথম তলায় বিশাল পরিসরে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসলামিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউট ও প্রশাসনিক অফিস এবং তৃতীয় তলায় রয়েছে সেমিনার রুম। নামাজের স্থানে মোজাইক পাথরে রয়েছে আরবি শিলালিপি। কাচের জানালা দিয়ে আসা রোদের আলো মসজিদের মধ্যে এনে দেয় অন্য রকম অনুভূতি। মসজিদটির ছত্রে ছত্রে মিশে আছে ইসলামী স্থাপত্যশিল্প ও রোমান ঐতিহ্য। সৌদি আরব, মিসর ও মরক্কোর ইমামরা মসজিদটি পরিচালনা করেন। বর্তমানে এর দায়িত্ব পলন করছেন মিসরীয় আলেম শায়খ সালাহ রমজান আল সাইয়িদ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments