Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeধর্মযাদের ইবাদত কবুল করা হয়

যাদের ইবাদত কবুল করা হয়

নবী-রাসুলরা ছাড়া সাধারণত মানুষমাত্রই পাপপ্রবণ হয়। নেক আমলের চেয়ে পাপের দিকেই মানুষ বেশি আসক্ত হয়। এই প্রতিবন্ধকা ডিঙিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে হয়। নেক আমলে মনোযোগী হতে হয়। এবং তা বিশুদ্ধ হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হয়।

প্রতিটি মুমিন কম-বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে। তার সেই ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে কবুল হচ্ছে কি না তা বোঝার কিছু মানদণ্ড ঠিক করেছেন সালফে সালেহিন। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো—

গুনাহে প্রত্যাবর্তন না করা : বান্দা যখন গুনাহকে অপছন্দ করতে শুরু করবে এবং তাতে প্রত্যাবর্তন তার কাছে অপ্রিয় হবে, তখন বুঝতে হবে যে তার ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে। পাশাপাশি যদি বিগত দিনের গুনাহগুলোর স্মরণ তাকে চিন্তিত ও লজ্জিত করে, আফসোসের তুফানে তার মনকে অশান্ত করে, তবে বুঝতে হবে তার আমল কবুল হচ্ছে।

‘মাদারিজুস সালেকিন’ নামক গ্রন্থে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, গুনাহের কল্পনা যদি কাউকে আনন্দ দেয় (সে গুনাহে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করে এবং পাশাপাশি ইবাদতও করে) তবে সে ৪০ বছর ইবাদত করলেও তা কবুল হবে না।

ইয়াহইয়া ইবনে মুআজ (রহ.) বলেন, যার জিহ্বা ইস্তেগফার করে কিন্তু তার অন্তর গুনাহের ওপর আবদ্ধ থাকে এবং তার দৃঢ় সংকল্প থাকে মাসখানেক (কিছু দিন) পর পাপে ফিরে যাওয়ার, সে ফিরেও যায়, তবে তার রোজা প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তার জন্য কবুলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

আমল কবুল না হওয়ার ভয় করা : আল্লাহ আমাদের ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন, বান্দা নিজের কল্যাণের জন্যই আল্লাহর ইবাদত করে। তাই দম্ভভরে তাঁর ইবাদত করা মূল্যহীন; বরং তাঁর ইবাদত করতে হবে অত্যন্ত যত্নসহকারে খুশুখুজুর সঙ্গে। আর পরিপূর্ণ খুশুখুজু আনতে হলে অবশ্যই ইবাদতটি সঠিক হচ্ছে কি না, তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে কি না, এ ভয় অন্তরে থাকতে হবে। তবেই ইবাদত বিশুদ্ধ করার গুরুত্ব অন্তরে তৈরি হবে।

আয়েশা (রা.) একবার নবীজি (সা.)-কে পবিত্র কোরআনের আয়াত—‘আর যারা দান করে এবং তাদের অন্তর ভীত কম্পিত।’ এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে বলেন, এরা কি তারা, যারা মদ পান করে এবং চুরি করে?

নবীজি (সা.) বলেন, ‘না, হে সিদ্দিক তনয়া, বরং এরা হলো ওই সব লোক, যারা সিয়াম পালন করে, সালাত (নামাজ) আদায় করে, সদকা দেয়। অথচ তাদের পক্ষ থেকে এসব কবুল না হওয়ার আশঙ্কা করে। এরাই তারা, যারা কল্যাণের দিকে দ্রুত ধাবমান এবং তার দিকে অগ্রগামী।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩১৭৫)

নেক আমলের সুযোগ পাওয়া : মহান আল্লাহ যাদের প্রতি দয়া করেন, তারাই বেশি বেশি নেক-আমলে আত্মনিয়োগের সুযোগ পান। অতএব বেশি বেশি নেক আমলের সুযোগ পেলে বুঝতে হবে, আমলগুলো আল্লাহর কাছে কবুল হচ্ছে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রকারের। সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব। আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, আর উত্তমকে মিথ্যা বলে মনে করেছে, আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সুগম করে দেব।’ (সুরা লাইল, আয়াত : ৪-১০)

নিজের আমলকে ছোট করে দেখা : নিজের আমলকে ছোট করে দেখার অর্থ হলো, নিজের আমলে নিজেই বিস্মিত না হওয়া কিংবা আমল করে তার ওপর অহংকার না করা। মহান আল্লাহ মানুষের শরীরেই যতগুলো নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন, সারা জীবন আমল করেও সেগুলোর যথাযথ হক আদায় করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমল নিয়ে অহংকার করলে আমলের সওয়াব বিনষ্ট হয়, নেক আমলে অলসতা চলে আসে। তা ছাড়া হাদিসের ভাষ্যমতে আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া শুধু নিজের আমল দিয়ে নাজাত পাওয়া সম্ভব নয়।  

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে নিজের আমল নাজাত দেবে না।’ তাঁরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনাকেও না? তিনি বলেন, ‘আমাকেও না।’ তবে আল্লাহ তাআলা আমাকে রহমত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তোমরা যথারীতি আমল করে নৈকট্য লাভ করো। তোমরা সকালে, বিকেলে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদত করো। মধ্য পন্থা অবলম্বন করো। মধ্য পন্থা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩)

ইবাদতে আত্মনিয়োগ পছন্দীয় হওয়া : ইবাদত কবুল হওয়ার এটাও একটি চিহ্ন। ইবাদত করতে আগ্রহী হওয়া, গুনাহতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়া। ইবাদতে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়, জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা আর-রাদ, আয়াত : ২৮)

ইবাদত কবুলের আশা করা : আল্লাহর রহমতের আশা ছাড়া শুধু আল্লাহর ভয় মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে যথেষ্ট নয়। কেননা আশা ছাড়া শুধু ভয় মানুষের হতাশা বাড়ায়, আর ভয় ছাড়া শুধু আশা মানুষকে বেপরোয়া করে তোলে, যার দুটোই মানুষের জন্য ভয়ংকর। আর যখন আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশার মিলন ঘটে, তখন আল্লাহর প্রতি ভয় থেকে ইবাদতে খুশুখুজু আসে, আর তাঁর রহমতের আশায় ইমান বৃদ্ধি পায়।

মহান আল্লাহ হজরত জাকারিয়া (আ.) ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাপারে বলেন, ‘তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর আমাকে আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে ডাকত, আর তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯০)

নেককার ব্যক্তির সংশ্রব পছন্দ করা : যারা নেককারদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে পছন্দ করে আর বদকারদের থেকে দূরে থাকে, তারা আল্লাহর সুদৃষ্টির আশা করতে পারে। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু জার (রা.)-কে বলেন, হে আবু জার, ঈমানের কোন শাখাটি অধিক মজবুত? তিনি (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলই অধিক অবগত। তিনি (সা.) বলেন, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর সখ্যতা স্থাপন করা এবং শুধু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ঘৃণা করা। (শুআবুল ঈমান)

বেশি বেশি ইস্তেগফার করা : বেশি বেশি ইস্তেগফার আমলকে ত্রুটিমুক্ত করে। তাই যারা বেশি বেশি ইস্তেগফার করে, তারা তাদের আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে আশাবাদী হতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তন করো, যেখান থেকে মানুষ প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৯)

আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা : আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) …আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ঠিকভাবে ও মধ্যমপন্থায় নেক আমল করতে থাকো। আর জেনে রাখো যে তোমাদের কাউকে তার আমল বেহেশতে নেবে না এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হলো, যা নিয়মিত করা হয়। তা অল্পই হোক না কেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৪) 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments