Friday, March 29, 2024
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদ USAমেরুদণ্ড বেচে চেয়ার কিনলেন ম্যাকার্থি!

মেরুদণ্ড বেচে চেয়ার কিনলেন ম্যাকার্থি!

একবার-দুবার নয়, টানা ১৫ দফা ভোটাভুটির পর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো কেভিন ম্যাকার্থির। প্রতিনিধি পরিষদে বারবার হোঁচট খেয়ে অবশেষে শনিবার পাঁচ দিনের মাথায় এসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্পিকার নির্বাচিত হন। তবে এ যাত্রা ততটাও সহজ ছিল না। 

কট্টর ২০ সদস্যকে নিজের দলে ভেড়াতে দিয়েছেন নানা আপস-ছাড়-সমঝোতার প্রতিশ্রুতি। আঙুল উঁচিয়ে ধমকের সুরে, মাথায় হাত বুলিয়ে কিংবা কট্টরদের ‘হাতে-পায়ে’ ধরে ভোট ভিক্ষাসহ কী করেননি ম্যাকার্থি! 

শতাব্দীর ইতিহাসে যেমন এমন নির্বাচনি বিড়ম্বনার ঘটনা বিরল, তেমনি চেয়ার দখলে এহেন আত্মসম্মান বিসর্জনও অহরহ দেখা যায় না। যেন নিজের হাতেই মেরুদণ্ড বেচে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীন চেয়ারটি ‘কিনলেন’ ম্যাকার্থি। ভবিষ্যতেও যে এর জন্য তাকে চড়া মূল্য দিতে হবে তা বলার অবকাশ থাকে না।

ছাড়-একক সদস্যের ক্ষমতা : পছন্দ না হলে মাত্র একজন সদস্যই স্পিকারকে অপসারণের দাবি তুলতে পারবেন। ক্ষমতায় আসার শর্তে ভরা মজলিশেই এই আপসনামা ছুড়ে দেন ম্যাকার্থি। 

চুক্তি মোতাবেকে, চাইলেই যে কোনো রিপাবলিকান তাকে অভিশংসনের জন্য ভোট দাবি করতে পারবেন। তাতে আরো জুড়ে দেওয়া হয়-এই ‘আসন শূন্য করো’ দাবির পর প্রতিনিধি পরিষদে পুনরায় ভোটাভুটি হতে পারে।

পরিণাম : আসন শূন্য করার প্রথা কংগ্রেসে বহু যুগ ধরেই চলমান। তবে একজনের ভোটে স্পিকারের ক্ষমতা হারানো রোধে বর্তমানে তা কমপক্ষে পাঁচ সদস্যে উপনীত করা হয়েছিল। ম্যাকার্থি পুনরায় একক ক্ষমতায় নিয়ে এলে সেটির জন্য তাকেই বেগ পোহাতে হবে।

ছাড়-আইন প্রণয়নের জটিল পথ : যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের প্রিয় টিভি সিরিজ- স্কুল হাউজ রকে শেখানো প্রতিনিধি পরিষদে বিল পাশ পদ্ধতি পুনরায় শিক্ষার্থীদের দেখানো যেতে পারে। কিভাবে আইন প্রণেতারা দাবি উত্থাপন করেন, কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা-বিবেচনার পর তা কংগ্রেসে নিয়ে আসা হয়, সংশোধন করেন, ভোট দেন। বর্তমান সময়গুলোতে যা দেখা যেত না- বিশাল অঙ্কের বিলের জন্য রুদ্ধদ্বার বৈঠকে চলত দরকষাকষি। দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের দরকারও হতো না। ম্যাকার্থি বিল পাশের পদ্ধতি পুরোনো দিনের মতো করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন আর পেছন দরজার আড়ালে হিসাব চুকানো চলবে না।

পরিণাম : আধুনিক পক্ষপাতমূলক দলের সাথে এই আইন প্রণয়ন কঠিন হয়ে পড়বে। নতুন বিল তৈরি করা হবে দুরূহ। রাজনীতিবিদরা প্রক্রিয়াটিকে সহজেই মেনে নেবেন না। ধারণা করা হচ্ছে ম্যাকার্থির জন্য এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাও খুব একটা সহজ হবে না।

ছাড়-রক্ষণশীলরা নীতিনির্ধারণ করতে পারবে : ‘হাউজ রুলস কমিটি’ মূলত হাউজের নীতি নির্ধারণ করে। কখন একটি বিলের ওপর ভোট দেওয়া হবে, কতক্ষণ এটি নিয়ে বিতর্ক হবে এবং কীভাবে এটি সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিংবা আদৌ পরিবর্তন করা হবে কিনা।-নিম্নকক্ষের শক্তিশালী এই প্যানেলে অতি রক্ষণশীলদের অন্তত একটি আসন দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন ম্যাকার্থি।

পরিণাম : এই টেবিলে আসন নেওয়ার মানে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থার চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ। এতে রক্ষণশীলরা যেকোনো নীতি নির্ধারণে সরাসরি ভূমিকা পাবে। এমনকি এই কট্টররা নিজেদের মতাদর্শ অনুসারে সবকিছু ঢেলে সাজানোর পূর্ণ সুযোগও পাবে।

ছাড়-সমর্থকদের আনুগত্য হারানো : মেরিল্যান্ডের অ্যান্ডি হ্যারিস ছিলেন ম্যাকার্থির ঘোরবিরোধী। প্রতিশ্রুতের ডালা মেলে শেষমেশ তাকেও দলে ভিড়িয়েছেন ম্যাকার্থি। আশ্বস্ত করেছেন ভোট প্রদানে। শুক্রবার হ্যারিসের মতো পরিবর্তন হয় আর ভোট দিতে রাজি হন। কোনো খোলা প্রতিশ্রুতি না দিলেও যে বড় স্বার্থ হ্যারিসের আছে তা অজানা নয়। তিনি প্রভাবশালী হাউজ কমিটিতে যেতে আগ্রহী। তিনি হাউজ অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির স্বাস্থ্য উপকমিটির সভাপতিত্বে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যা বিলিয়ন ডলার সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে। বিবিসি

পরিণাম : সমর্থকরা দীর্ঘ প্রতীক্ষায় তার দিকে চেয়ে আছেন। যোগ্যদের বঞ্চিত করে অনৈতিক কিছু করলেই হারাবেন সমর্থকদের বিশ্বাস। জ্যেষ্ঠতা বিবেচনা না করে কোনো পদক্ষেপ নিলে নিজ সমর্থকদের মধ্যেই তৈরি হবে ম্যাকার্থির নতুন শত্রু।

ছাড়-ব্যায় সংযম : অতি রক্ষণশীলরা শুরু থেকে একটি সাধারণ অভিযোগ করে আসছিলেন। তা হলো, ফেডারেল ব্যয় অস্থিতিশীল পর্যায়ে বেড়েছে। স্পিকারের লড়াইয়ের সময় তারা ম্যাকার্থিকে ব্যয় হ্রাস করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে বলেন। স্পিকার হওয়ার আশায় ম্যাকার্থি মেনেও নেন সব।

পরিণাম : সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় রিপাবলিকানরা যে কোনো বাজেট পাশ করতে পারবেন। এই পদক্ষেপ নিয়ে সৃষ্ট আন্তঃদলীয় বিতর্কে অতিরক্ষণশীলদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যাকার্থি। যা ইতোমধ্যে কিছু রক্ষণশীলকে ক্ষুব্ধ করেছে। যার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে বছর শেষের শাটডাউন এড়ানোর সময়।

ছাড়-গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর অগ্রাধিকার : সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ে ম্যাকার্থি তার দলের পক্ষেই থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

পরিণাম : ২০১৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর পর থেকে সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অভিবাসন নীতি কঠোর করা রিপাবলিকান এজেন্ডার কেন্দ বিন্দুতে পরিণত হয়। এ ধরনের সংস্কারের জন্য সম্ভবত একটি সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। যার মধ্যে ম্যাকার্থি কী সিদ্ধান্তে আসবে তার জন্য চেয়ে আছেন দেশবাসী।
 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments