Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeধর্মমুসলিমরা যেভাবে অমুসলিমদের আস্থা অর্জন করেছিল

মুসলিমরা যেভাবে অমুসলিমদের আস্থা অর্জন করেছিল

আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.) বললেন, আমরা আপনাদের কাছ থেকে এই শর্তে কর নিয়েছিলাম যে আপনাদের নিরাপত্তা দেব এবং রক্ষণাবেক্ষণ করব। কিন্তু আমরা তা পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছি না। আমাদের অন্য রণক্ষেত্রে যেতে বলা হয়েছে এবং সেখান থেকে কবে ফিরব তা-ও জানি না। সুতরাং আপনাদের থেকে নেওয়া অর্থ রেখে দেওয়ার কোনো অধিকার আমাদের নেই।

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.)

ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের প্রিয়ভাজন ও জনপ্রিয় হওয়ার বহু ঘটনা আমরা বই-পুস্তকে পড়েছি এবং আমাদের স্মৃতিতেও এমন ঘটনার জমা আছে। কিন্তু সামষ্টিকভাবে বা জাতি হিসেবে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের ঘটনাপ্রবাহের প্রতি আমরা উদাসীন। আল্লাহ তখনই এই উম্মতকে ‘জগিপ্রয়’ ও ‘বিশ্বনন্দিত’ জাতিতে পরিণত করেছিলেন, যখন এই জাতি মানবতা রক্ষা ও তার বিকাশ সাধনে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ কোরবানি করেছিল এবং ন্যায়-সত্যের আঁচল দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছিল। তখন চীনের মতো দূরদেশ থেকে আরবের আব্বাসীয় খলিফাদের দরবারে প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল এই মর্মে যে, আমাদের দেশে এমন লোক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের ওপর পরিপূর্ণ নির্ভর করে মামলা-মোকদ্দমার দায়িত্ব দেওয়া যায় এবং যাদের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়সংগতার ওপর আস্থা রাখা যায়। খলিফার প্রতি আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন এমন কিছু বিচারক পাঠিয়ে দেন যারা মামলা-মোকদ্দমায় ন্যায় ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করবে। এই হলো কোনো জাতির ‘আস্থাভাজন’ হওয়ার দৃষ্টান্ত। এটা সেই সময়ের অবস্থা যখন এই জাতির ঈমান ও বিশ্বাস ছিল আল্লাহর বাণী ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। তোমাদের বের করা হয়েছে বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধনে’—এর ওপর। যারা বিশ্বাস করত ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি, পারিবারিক আভিজাত্য ও বংশীয় গৌরব অর্জন এবং গোষ্ঠীভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক প্রাধান্য বিস্তারের জন্য আমাদের তৈরি করা হয়নি; বরং মানবতার সেবা ও বৈশ্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে চিরকালীন সাফল্যের পথ দেখাতে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

এই বিষয়ে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর পরিচালনাধীন ইসলামী বাহিনী হেমসে অবস্থান করছিল। তারা স্থানীয় অমুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া বা নিরাপত্তা কর আদায় করছিল। তখনই খিলাফতের পক্ষ থেকে নির্দেশ এলো ইসলামী বাহিনীর সব সৈনিককে ‘ইয়ারমুক’ রণক্ষেত্রে সমবেত হতে হবে। কেননা সেখানে যুদ্ধ চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। সেনাপতি আবু উবায়দা (রা.) সেনাদের ইয়ারমুকের দিকে রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে এবং অমুসলিমদের থেকে নেওয়া জিজিয়া ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। কোষাধ্যক্ষকে বললেন, একটি পয়সাও যেন অবশিষ্ট না থাকে। অর্থ ফেরত দেওয়া হলে অমুসলিমরা জানতে চান কেন তাদের অর্থ ফেরত দেওয়া হচ্ছে? সেনাপতি আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.) বললেন, ‘আমরা আপনাদের কাছ থেকে এই শর্তের ভিত্তিতে কর গ্রহণ করেছিলাম যে আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দেব এবং রক্ষণাবেক্ষণ করব। কিন্তু অনিবার্য কারণে আমরা তা পূরণ করার সুযোগ পাচ্ছি না। কেননা আমাদের অন্য রণক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে এবং সেখান থেকে কবে নাগাদ ফিরে আসব তা-ও জানি না। সুতরাং আপনাদের থেকে নেওয়া অর্থ আমাদের কাছে রাখার কোনো অধিকার আমাদের নেই। ’ ঐতিহাসিকরা লেখেন, সেনাপতির উত্তর শুনে স্থানীয় অমুসলিমরা কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বলে, মহান স্রষ্টা তোমাদের আবার ফিরিয়ে আনুন। তারা তাদের পুরাতন শাসকদের তুলনায় মুসলমানের শাসনাধীন থাকাকে ভালো মনে করত। তারা বলত, ওরা তো আমাদের থেকে বেশি বেশি কর আদায় করত, আমাদের শোষণ করত। অথচ আমাদের সঙ্গে তোমাদের আচরণের নমুনাও আমরা দেখেছি। এই হলো জাতি হিসেবে আস্থাভাজন হওয়ার ইতিহাস।

তামিরে হায়াত থেকে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments