Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামমিউচুয়াল ফান্ডে জালিয়াতি: জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

মিউচুয়াল ফান্ডে জালিয়াতি: জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজারের ৪ মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করার ঘটনা উদ্বেগজনক। জানা গেছে, ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীরের নেতৃত্বে ১৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এ টাকা নিয়ে তিনি দুবাই পালিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ইউএফএস একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) কোম্পানি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমতি নিয়ে কোম্পানিটি বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকে। এ প্রক্রিয়াকে শেয়ারবাজারের পরিভাষায় ‘মিউচুয়াল ফান্ড’ বলা হয়।

নিয়ম অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে কোনো অনিয়ম হলে ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের সামনেই জালিয়াতি করেছে ইউএফএস; দেখিয়েছে ভুয়া সম্পদ ও অস্তিত্বহীন ব্যাংক ব্যালেন্স। আশ্চর্যজনক হলো, স্বাভাবিকভাবে এসব বিষয় অডিটে ধরা পড়ার কথা থাকলেও দুটি অডিট কোম্পানি এসব ভুয়া আর্থিক রিপোর্টের বৈধতা দিয়েছে।

এসব বিষয়ে ১ জানুয়ারি যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে স্বতপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রতি রুল জারি করেন সর্বোচ্চ আদালত।

সর্বশেষ বিএসইসির তদন্ত রিপোর্টে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, যার মধ্যে রয়েছে ইউএফএসের লাইসেন্স বাতিল এবং কোম্পানির এমডিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলাসহ অডিট কোম্পানি নিষিদ্ধ করা। এছাড়া সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম লক্ষ করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন-এটাই সরকারের নীতি হওয়া উচিত। অথচ শেয়ারবাজারকে কেন্দ্র করে একাধিকবার নিয়মভঙ্গের ঘটনা ঘটলেও সরকার ও সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়ার জন্য হাজার হাজার বেকার তরুণ মায়ের গহনা বিক্রি করে, বোনের কাছ থেকে ধারকর্জ করে অথবা জমি বন্ধক রেখে টাকা সংগ্রহ করে স্বপ্নে আবিষ্ট হয়েছিল। কিন্তু কতিপয় ‘বাজিকর’ কারসাজির মাধ্যমে স্বপ্নাবিষ্ট তরুণদের হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে।

পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির নায়কদের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা বিএসইসির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অথচ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ দূরে থাক, প্রতিষ্ঠানটির উদাসীনতায় চিহ্নিত অপরাধীরা অতীতে যেমন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছেন, তেমনি শেয়ারবাজারের ৪ মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের নায়ক ইউএফএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছেন।

ভয়াবহ শেয়ার কেলেঙ্কারির পর দেশের পুঁজিবাজারকে একটি সুস্থির ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নিজেও উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু ‘সকলই গরল ভেল’। উদ্যোগ, পদক্ষেপ ও আশ্বাসবাণীতে অবস্থার কোনো পরিবর্তন তো হয়ইনি; উপরন্তু পরবর্তী সময়ে একাধিকবার পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও কেলেঙ্কারির পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুঁজিবাজারকে কেন্দ্র করে নিয়মভঙ্গ ও জালিয়াতির ঘটনায় দায়ী ইউএফএসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments