Thursday, April 18, 2024
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদ USAমার্টিন লুথার কিংকে নিয়ে অজানা ১০ তথ্য

মার্টিন লুথার কিংকে নিয়ে অজানা ১০ তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে দেশটির নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ডঃ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ৯৪তম জন্মদিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের জীবন ও কর্মের প্রতি আমেরিকানদের মনোযোগ দেয়া উচিৎ। ১৯৬৪ সালে বর্ণবাদ বিরোধী অহিংস আন্দোলনের জন্য তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তিনি একজন সফল বক্তা ও সফল রাজনীতিবিদ। ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত তার বক্তৃতাটির মধ্য দিয়ে তিনি জনমনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। 

ডঃ মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র অনেক উক্তি মানুষ অনুপ্রেরনা হিসাবে নেয়া তার মধ্যে একটি হচ্ছে-‘উড়তে না পারলে দৌড়াও। দৌড়াতে না পারলে হাঁটো। হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দাও, কিন্তু যাই করো না কেন তোমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’ মার্টিন লুথার কিং কিংবদন্তী হলেও তার জীবনের কিছু বিস্ময়কর বিষয় রয়েছে যা অনেকের কাছেই অজানা। এমন ১০টি কম জানা তথ্য নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিবিসি।

‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণটি ছিল পুরোপুরি প্রস্তুতিহীন
১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচীতে তার সেই ঐতিহাসিক ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং। ভাষণ যখন মাঝামাঝি তখন গোসপেল শিল্পী মাহালিয়া জ্যাকসন চিৎকার করে বলেন- মার্টিন তোমার সেই স্বপ্নের কথা সবাইকে বলো। এরপরই লুথার কিং বলতে শুরু করেন, তিনি কেমন বৈষম্যহীন আমেরিকার স্বপ্ন দেখেন।

আর তার এই ভাষণের মধ্য দিয়ে কিংবদন্তীতে পরিণত হন তিনি। 

লুথার কিং বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি আমার ছোট ছোট চার সন্তান এমন একটি দেশে বাস করবে যেখানে তাদেরকে তাদের গায়ের রং দিয়ে বিচার করা হবে না, বরং তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে বিচার করা হবে। আজ আমার একটি স্বপ্ন আছে। তিনি আরও বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে, একসময়কার দাসদের সন্তান এবং দাস মালিকদের সন্তানরা ভাই-ভাই হয়ে এক টেবিলে বসতে পারবে। আমি স্বপ্ন দেখি, এমনকি মিসিসিপি প্রদেশ যেটা অবিচার এবং নিপীড়নে জর্জরিত, তা একদিন স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের আশ্রয়স্থলে পরিণত হবে।

জন্মের সময় তার নাম ছিল মাইকেল কিং
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং। সেসময় তার নাম দেয়া হয় মাইকেল কিং। কিন্তু ছয় বছর পর তার পিতা জার্মানি সফর করেন এবং মার্টিন লুথারের সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মার্টিন লুথারকে এতটাই পছন্দ করেছিলেন যে দেশে ফিরে তিনি তার নিজের ও সন্তানের নাম পরিবর্তন করে মার্টিন লুথার কিং রাখেন। 

যাজক হতে চেয়েছিলেন লুথার কিং
১৯৪৪ সালে ১৫ বছরের মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র মোরহাউজ কলেজে ভর্তি হন। জর্জিয়ার আটলান্টায় অবস্থিত কৃষ্ণাঙ্গদের এই কলেজে তার পরিবারের আগের সদস্যরাও পড়াশুনা করেছেন। জানা যায় যে, তিনি বেশ সাধারণ একজন ছাত্রই ছিলেন। কিন্তু কিং নিজে সামাজিক সমতায় গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। ফলে সেই কলেজে পড়ার সময়েই তিনি যাজক হতে চেয়েছিলেন। 

তিনি ৩০ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন
অধিকার কর্মী হিসেবে সক্রিয় ১৩ বছরে মার্টিন লুথার কিং মোট ৩০ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। আন্দোলন সমাবেশে যোগ দিয়েই গ্রেপ্তার হন বেশিরভাগ সময়। ১৯৬০ সালে আটলান্টায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জর্জিয়া কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জেল থেকে তার স্ত্রীকে লিখেছিলেন, আমার পরিবারের এই কষ্ট আটলান্টাকে আরও ভাল শহরে পরিণত করবে, জর্জিয়াকে আরও ভাল অঙ্গরাজ্যে এবং আমেরিকাকে আরও ভাল দেশে। 

তিনি ৫টি বই লিখেছেন
মার্টিন লুথার কিং তার জীবনে পাঁচটি বই লিখেছেন। তার সবথেকে আলোচিত বই ১৯৬৪ সালে লেখা ‘হোয়াই উই কান্ট ওয়েট’। 

তিনি ছিলেন স্টার ট্রেক ভক্ত
মার্টিন লুথার কিং নিজেকে স্টার ট্রেকের সবথেকে বড় ভক্ত মনে করতেন। নিচেল নিকোলস অভিনয় করেছিলেন স্টার ট্রেকের  লেফটেন্যান্ট নিয়োটা উহুরা চরিত্রে। এক পর্যায়ে তিনি তার এই চরিত্রটি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মার্টিন লুথার কিং তাকে স্টার ট্রেক না ছাড়তে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তার অনুরোধেই আবারও স্টার ট্রেকে ফিরে গিয়েছিলেন নিচেল নিকোলস। 

একাধিক গুপ্তহত্যা চেষ্টা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে
১৯৫৮ সালে এক মানসিকভাবে অসুস্থ নারী মার্টিন লুথার কিং-এর উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালান। নিউ ইয়র্ক শহরে চালানো ওই হামলায় লুথার কিং গুরুতর আহত হন। সাত ইঞ্চি ব্লেড তার শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, মৃত্যু থেকে একদমই কাছে ছিলেন তিনি। তবে সুস্থ হয়ে লুথার কিং জানান, আক্রমণকারী ওই নারীর প্রতি তার কোনো ক্ষোভ নেই। 

তার মাকেও হত্যা করা হয়েছিল
মার্টিন লুথার কিংকে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৭৪ সালের ৩০শে জুন তার মাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৩ বছর বয়সী এক হামলাকারী মার্টিন লুথার কিং এর মা কে গুলি করেছিলেন। হামলাকারীকে পরে গ্রেপ্তার করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যদিও পরে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় হত্যাকারীকে। মার্টিন লুথার কিং এর পরিবারই তার সাজা কমানোর আবেদন করেছিল। 

তারকা জুলিয়া রবার্টসের জন্মের সময় বিল পরিশোধ করেছিল কিং পরিবার
বিখ্যাত তারকা জুলিয়া রবার্টস জানান যে, তার জন্মের সময় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছিল মার্টিল লুথার কিং এর পরিবার। তাদের দুই পরিবারও বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল বলে জানান রবার্টস। জুলিয়া যখন জন্মান তখন তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় হাসপাতালের বিল দিতে পারছিলেন না তারা। এ সময় এগিয়ে এসেছিল কিং এর পরিবার। 

মাত্র ৩৯ বছর বয়সে খুন হয়েছিলেন লুথার কিং
১৯৬৮ সালের ৪ই এপ্রিল হত্যা করা হয় মার্টিন লুথার কিংকে। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৯ বছর। জীবনে মাত্র ১৩ বছর তিনি অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পেরেছেন। তবে এই ১৩ বছরেই তিনি বর্ণবাদ দূর করতে যে সফলতা দেখিয়েছেন তা এর আগের ৩৫০ বছরেও সম্ভব হয়নি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments