Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeধর্মমাতৃত্ব আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ

মাতৃত্ব আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ

বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস

মাতৃত্ব পরিবারের মধ্যে তৈরি করে ভিন্ন রকম অনুভূতি। দাম্পত্য সম্পর্ককে নিয়ে যায় অন্য মাত্রায়। মাতৃত্ব একজন নারীর স্বভাবজাত আকাঙ্ক্ষা। মাতৃত্বের সৌভাগ্য লাভ করতে মাকে সহ্য করতে হয় কল্পনাতীত ব্যথার যন্ত্রণা।

আর সন্তানকে দেখে নিমেষেই মায়ের সব কষ্ট হারিয়ে যায়। তাই ইসলাম মায়ের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

সন্তানের জন্য মায়ের আত্মত্যাগ : পবিত্র কোরআন ও হাদিসে মায়ের কল্পনাতীত আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সর্বদা তাঁর প্রতি আনুগত্য ও সদাচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচারের নির্দেশ দিয়েছি, তার মা তাকে খুবই কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করেছে, গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়াতে ৩০ মাস সময় লাগে, এরপর সে শক্তিমত্তার অধিকারী হয় এবং ৪০ বছর বয়সে উপনীত হয়ে বলে, ‘হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দিন, যেন আমি আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার বাবা-মার প্রতি আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য, এবং আমি যেন ভালো কাজ করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন, আমার জন্য আমার সন্তানদের সৎকর্মশীল করুন…।

(সুরা : আহকাফ, আয়াত : ১৫)

মা হওয়া আল্লাহর ইচ্ছাধীন : আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে মা হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা তাকে তা থেকে বঞ্চিত করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা মেয়েসন্তান দেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে পুত্রসন্তান দেন। কিংবা ছেলে ও মেয়ে উভয়ই দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করেন, তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৪৯-৫০)

মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা : সন্তান হওয়ার খবর একজন নারীর মধ্যে তৈরি করে ভিন্ন রকম অনুভূতি। সন্তানকে ঘিরেই নারীর দীর্ঘদিনের আবেগ-আকাঙ্ক্ষা কাজ করে। তাই মুসা (আ.)-কে শিশু অবস্থায় পেয়ে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া তাঁকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর স্ত্রী সারাহ নিঃসন্তান ছিলেন। অনেক বয়স হলেও তাঁদের মধ্যে সন্তানের প্রতি আগ্রহ ছিল।আল্লাহ তাঁদের সুসংবাদ দিলে তখন সারাহ খুশিতে হেসে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি হেসে ফেলেন, অতঃপর আমি তাকে ইসহাক ও তার পর ইয়াকুবের সুসংবাদ দিই। তখন তার স্ত্রী বলল, কি আশ্চর্য, আমি সন্তানের মা হব! অথচ আমি বৃদ্ধা এবং আমার স্বামী বৃদ্ধ! সত্যিই তা অদ্ভুত বিষয়। ফেরেশতারা বলল, আপনি কি আল্লাহর কাজে বিস্মিত হচ্ছেন, হে পরিবার আপনাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ রয়েছে, নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৬৯-৭৩)

গর্ভকাল সবচেয়ে কঠিন সময় : সন্তান গর্ভধারণ ও প্রসবকালে একজন নারী জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করে। পবিত্র কোরআনে মায়ের গর্ভকালীন দুঃখ ও কষ্টকর মুহূর্তের বর্ণনা এসেছে। এই কঠিন সময় মারইয়াম (আ.) গর্ভধারণ ও প্রসব বেদনা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু পর্যন্ত চেয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তাকে গর্ভে ধারণ করে, অতঃপর তাকে নিয়ে দূরবর্তী স্থানে চলে যায়। প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুরগাছের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে, সে বলল, হায়, আমি যদি এর আগেই মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যেতাম।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২-২৩)

মাতৃত্বকালীন সেবা : গর্ভকালে মায়েদের শারীরিক ও মানসিক সেবা প্রয়োজন। এ কারণে মারইয়াম (আ.)-কে স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ ছাড়াও খেজুর ও পানি পানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে সব ধরনের দুশ্চিন্তা না করতে বলা হয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াতে বিশেষ উপদেশ রয়েছে। যেখানে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নিচ থেকে এক ফেরেশতা তাকে ডেকে বললেন, তুমি দুশ্চিন্তা কোরো না, তোমার রব তোমার পাদদেশে একটি ঝরনা তৈরি করেছেন। তুমি তোমার কাছের খেজুরগাছের ডাল নাড়া দাও, তা থেকে পাকা খেজুর পড়বে। অতএব আহার করো, পানি পান করো, চোখ জুড়াও, আর কোনো মানুষ দেখলে বলবে, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে চুপ থাকার মানত করেছি, সুতরাং আজ আমি কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলব না।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ১৬-২৬)

আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা : আল্লাহর কাছে মুমিনের আনন্দ-উচ্ছ্বাস ও দুঃখ-কষ্টের বিনিময় রয়েছে। তাই গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন যাতনার জন্য আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করা কর্তব্য। হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিম যে ক্লান্তি, কষ্ট, দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠায় আক্রান্ত হয় এমনকি যে তার শরীর কাঁটাবিদ্ধ হলেও সব কিছুর বিনিময়ে আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৪২)

শহীদের মর্যাদা লাভ : গর্ভধারণ করে কোনো নারী মারা গেলে শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। জাবির বিন আতিক (রা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাসুল (সা.) তাঁকে দেখতে আসেন। তাঁর পরিবারের কেউ বলল, ‘আমরা আশা করেছিলাম আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণ করবে।’ তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদের সংখ্যা খুবই কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে মারা গেলে শহীদ। মহামারিতে মারা গেলে শহীদ। গর্ভাবস্থায় মারা যাওয়া নারীও শহীদ। পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে এবং ক্ষয়রোগে মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৭৯)

তা ছাড়া সর্বাবস্থায় সহজতার জন্য আল্লাহকে স্মরণ করা এবং দোয়া করা উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও অনুগ্রহস্বরূপ, কিন্তু তা জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮২)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments