মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার উত্তর কোরিয়ার কোম্পানি ‘নামনাম’-এর সঙ্গে যোগসাজশ করে একটি চক্র বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে ১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের অনুসন্ধানের মাধ্যমে ১৯৭৬ সালে মধ্যপাড়ায় ১২৮ মিটার গভীরে কঠিন শিলার অবস্থান আবিষ্কারের পর এর সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে খনি উন্নয়নের জন্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি এমওই স্বাক্ষর করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তর কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘নামনাম’ ও পেট্রোবাংলার মধ্যে চুক্তি হয়।
উদ্বেগের বিষয় হলো, চুক্তি অনুযায়ী ২০০১ সালের মধ্যে খনি তৈরির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি-সরঞ্জামের অভাবে দীর্ঘ ৬ বছর খনিটিতে কোনো কাজই হয়নি। পরবর্তীকালে চুক্তির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি পায় অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা।
শুধু তাই নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চলে যাওয়ার সময় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে না দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; উপরন্তু বড় ধরনের আর্থিক অভিযোগ থাকার পরও ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পুরো বিল পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সূত্রমতে, যে কোনো প্রকল্প শেষ হলে ওই প্রকল্পের ঠিকাদার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করেছে কিনা এবং চুক্তি অনুযায়ী কোনো মালামাল কম দিয়েছে কিংবা কাজটি যথাযথভাবে শেষ করেছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই শেষে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করতে হয়।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির উন্নয়ন প্রকল্পে স্পষ্টতই এর ব্যত্যয় ঘটেছে। এ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদে পদে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলেও পুরো বিল পরিশোধ করা হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার পাথরের চাহিদা থাকায় সূচনাকাল থেকেই খনি উত্তোলনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও তা বাস্তবতার মুখ দেখেনি; বরং ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও সীমাহীন অব্যবস্থাপনার কারণে এর ললাটে ‘লোকসানি’ প্রতিষ্ঠানের তকমা জুটেছে।
দেশে প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি-অনিয়ম সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। মূলত দুর্নীতি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকার অর্জনে বড় বাধা।
এসব মৌলিক অধিকার রক্ষায় সরকারের আন্তরিক ভূমিকা কাম্য হলেও এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে, এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। কাজেই মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে সরকার আরও কঠোর হবে, এটাই প্রত্যাশা।