Thursday, March 28, 2024
spot_img
Homeজাতীয়ভিসি একবার এসে সেই দৃশ্য দেখে যান

ভিসি একবার এসে সেই দৃশ্য দেখে যান

ভিসির সাড়া নেই। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে দুপুরে একজনকে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশনে থাকার কারণে কাজল নামে ওই শিক্ষার্থীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনশনস্থলেই শুয়েছিলেন। কথা বলতে পারছিলেন না। এ দৃশ্য দেখে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।আরো দু’জন শিক্ষার্থী সকালে অসুস্থ হন। এর মধ্যে একজনের তীব্র শ্বাসকষ্ট। অন্যজন জ¦রে আক্রান্ত। অনশনস্থলের পাশেই এম্বুলেন্স। শিক্ষার্থীরা উদ্যোগী হয়ে এ এম্বুলেন্স এনে রেখেছে। এমন দু:সহ বাস্তবতা চলছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনের সামনে। ওদের বয়স আর কতো। ২০ বছরের একটু বেশি। জীবন বাজি রেখে তারা আন্দোলনে নামলো। কোথাও কোনো ইশারা পাচ্ছিলো না। তাচ্ছিল্যে করা হচ্ছিলো তাদের। ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ার অপপ্রচারে ভিসির সঙ্গে ঠোট মেলালেন শিক্ষকরা। বুধবার তারা ক্যাম্পাসের বাইরে ফটক এলাকায় দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গালিগালাজের অভিযোগ তুলেছেন। এতে আরো মর্মাহত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রথম থেকে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যাচার। বাইরের ইন্ধন রয়েছে দাবি করলেন ভিসি। শিক্ষার্থীদের তরফ থেকেই গুলি ছোড়া হয়েছে জানিয়েও দিচ্ছেন আকার ইঙ্গিতে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা বিচলিত ছিলেন। নানাভাবে তাদের দিকে আঙুল তোলা হলো। তাদের আন্দোলনকে বানচাল করার চেষ্টা করা হলো। তবুও দাবিতে অটল শিক্ষার্থীরা। যতই তাদের উপর আঘাত করা হচ্ছে ততই যেনো তারা তেতে উঠছে। শেষমেশ তারা আমরণ অনশনেই গেলো। শীতরাজ্য মেঘালয়ের কাছাকাছি এলাকা হওয়ার কারণে সিলেটে এমনিতেই প্রচ- ঠা-া। রাত হলেই তীব্র কুয়াশার সঙ্গে দাপিয়ে নামে শীত। শহরের পাহাড়ি অঞ্চলের কাছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ওখানে ঠা-া আরেকটু বেশি। জরুরি কাজ ছাড়া শীত মৌসুমে ক্যাম্পাসে কেউ বের হন না। কিন্তু এই সময়ে খোলা আকাশের নিচে ৫ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা। এর আগে ছিলেন আরো তিনদিন। সব মিলিয়ে এক সপ্তাহ ধরে তাদের আন্দোলন। অনেক শিক্ষার্থী এরই মধ্যে সর্দি, জ¦রে আক্রান্ত। আন্দোলনের কারণে সেভাবে খাবারও মিলছে না। জীবন বাজি রেখে শিক্ষার্থীরা এখন আন্দোলন করছেন।

এই আন্দোলনের কারণ- ভিসি ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ চান তারা। এক দফা দাবি। এক সপ্তাহ আগেও ভিসি তাদের কাছে ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অভিভাবক। রোববার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের এখন প্রধান শত্রু ভিসি। আর ক্যাম্পাসে তারা ভিসি দেখতে চান না। এ নিয়ে কোনো আলোচনাও তারা চান না। এই অবস্থায় প্রথমে ক্যাম্পাসে মুখোমুখি হয়ে পড়া শিক্ষকরা বুধবার রাত থেকে সমঝোতায় নেমেছেন। তারাও পড়েছেন দোটানায়। শিক্ষার্থী ছাড়তে পারছেন না, আবার ভিসির বিরোধীও হতে পারছেন না। ২৫-৩০ জন বয়োবৃদ্ধ সিনিয়র শিক্ষক সহ শতাধিক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। মন ভালো নেই তাদের। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত ছিলেন ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা কথা বলার সুযোগ দেননি। আজ আবার দুপুরে এসেছেন। শিক্ষার্থীরা মাত্র দুই মিনিট কথা শুনেছেন। কিন্তু শিক্ষকদের সমঝোতার প্রস্তাব আমরণ অনশন ও আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের মনঃপূত হয়নি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছেন- তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানাতে। কিন্তু শিক্ষকরা সেটি করছেন না। কিংবা করতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে বড় পরিসর নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ এসেছিলো ভিসির কাছে। শিক্ষামন্ত্রীর কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সহ সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা। ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কথা শুনেছেন।

শিক্ষার্থীর কথাও শুনেছেন নেতারা। ভিসির সঙ্গে তারা এ নিয়ে আলোচনা করেন। ভিসি সরাসরি নেতাদের কিংবা সিলেটের মানুষের সহযোগিতা চাইলেন না। চাইলে হয়তো পরিবেশ ভিন্ন হতো। সিলেটের সর্বদলীয় রাজনীবিদ ও সামাজিক নেতারা অতীতে এই বিশ^বিদ্যালয়ের অনেক জটিল ঘটনার সমাধান করেছেন। কিন্তু ভিসি সেটি করলেন না। তিনি কোথায় ভরসা রাখলেন সেটি বুঝা মুশকিল। শিক্ষকদের অনেকেই ভিসির সাম্প্রতিক আচরণে ক্ষুব্ধ। তিনি এক হাতেই চালাচ্ছিলেন ক্যাম্পাস। তার কথাই ক্যাম্পাসে চূড়ান্ত। নিজেকে সরকারের ‘আস্থাভাজন’ হিসেবে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন তিনি। এ কারণে তার সঙ্গে কেউ শক্তভাবে কথা বলতে পারেন না। শিক্ষকরাও ভিসি সঠিক পরামর্শ দিতে পারেননি। তাদের মতে- ভিসি ক্যাম্পাসে তার নিজ বলয় দ্বারাই পরিবেষ্টিত ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমদ। এই বলয়ে হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীও রয়েছে। ঘটনার পর থেকে তারাও ভিসিকে ‘মিসগাইড’ করছেন। ফলে ভিসি বুঝে উঠতে পারছেন না- এখন তার করা উচিত। তবে- আপাতত ভিসি কী করবেন সেদিকে নজর নেই শিক্ষার্থীদের। তাদের মুখের ভাষা, মনের ভাষা এক হয়ে গেছে।

ভিসিকে হটতেই হবে- এমন পণ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে তাদের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নড়ছে না। এ দৃশ্য দেখে কষ্ট হচ্ছে অনেকেরই। সিলেটের মানুষও ব্যতীত। নিজ জেলার প্রতিষ্ঠান হলেও বিশ^বিদ্যালয়ের স্বার্থে সিলেটের মানুষ কখনোই ক্যাম্পাসে অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে চান না। অতীতেও করেননি। শিক্ষার্থীদের কষ্ট ও দুর্ভোগ দেখে দূর থেকে হা-হুতাশ করছেন অনেকেই। একটি দৃশ্য গতকাল ক্যাম্পাসেই চোখে পড়লো। দৃশ্যটি নজরে পড়ে অনেকেই। মনে খারাপের সেই দৃশ্য। ভিসি ভবনের সামনে বসে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন করছিলেন। আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে চার শিক্ষার্থী (ছাত্রী) অঝোরে কাঁদছিলো। কাছে যেতেই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কাঁদছিলো তারা। জিজ্ঞেস করা হলে একজন বলে উঠলো- ‘আমার বোন, ভাইরা না খেয়ে মরছে, আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি। কিছুই কী করার নেই আমাদের। ওদের কাছে গিয়ে আমরা বলেছিলাম- একটু পানি খাও। কেউ দেখবে না। কিছুই বললো না। মুখ ফিরিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এখন হলে ফিরে গিয়ে মুখে তো খাবার তুলতে পারবো না আমরা কেউ। খাবার মুখে নিলেই মনে পড়ে যায়- অনশনে থাকা আমার ভাই-বোনের অসহায় মুখ।’

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments