Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামভারতকে নিয়ে আমেরিকার খারাপ বাজি এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

ভারতকে নিয়ে আমেরিকার খারাপ বাজি এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

ওয়ার অন টেররিজমের শয়তানি এজেন্ডা মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের বশংবদ শাসকদের জন্য এক ধরণের ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছিল। মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে পলিটিক্যাল ইসলাম ও মূলধারার ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের নির্মূল করার গোপণ অভিসন্ধি নিয়ে তথাকথিত জঙ্গিবাদ নির্মূলের নামে দেশে দেশে বিশেষ বাহিনী গঠন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণে পেন্টাগণ ও সিআইএ’র তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। মূলধারা কোনো ইসলামি রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমান না থাকলেও সে সময় হঠাৎ করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের সাথে দেশের কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের দিকেই অঙ্গুলি তুলেছিল অনেকে। দেশের প্রায় সব জেলায় একই সময়ে বোমা বিস্ফোরণসহ সে সময়ের জঙ্গিবাদী ঘটনাগুলো কোনো কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠর ফল্স ফ্ল্যাগ অপরেশন ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও যথেষ্ট অবকাশ আছে। ওয়ার অন টেররিজমের নামে পশ্চিমা একতরফা যুদ্ধের বর্বরতাকে জায়েজ করতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে তালেবানদের নিয়ে পিশ্চমা বিশ্বের প্রোপাগান্ডা এজেন্ডায় এক সময় মাদরাসা শিক্ষাকে টার্গেট করা হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাও পশ্চিমা ও ভারতীয় লেসপেন্সাররা ভীতিকরভাবে গণমাধ্যমের আলোচ্য বিষয়ে পরিনত করেছিল। জঙ্গিবাদের উত্থানের তকমা দিয়ে কেউ কেউ মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ারও দাবি তুলেছিল। যদিও বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত কথিত জঙ্গিবাদী তৎপরতার সাথে কোনো মাদরাসা শিক্ষার ডেলিবারেটিভ সংযোগ প্রমান করা যায়নি। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী ঘটনার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি রে¯েঁÍারায়। সেই ঘটনায় নিহত ২০ জনের মধ্যে ৯ জন ইতালীয় ও ৭ জন জাপানী নাগরিক, দুইজন বাংলাদেশী, একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান এবং একজন ভারতীয়। নিহত ইতালীয়দের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতের উদ্যোক্তা-ক্রেতা এবং জাপানিদের মধ্যে প্রায় সকলেই কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে জাইকার ইঞ্জিনিয়ার ও পরামর্শক। এ হামলার পর যৌথ কমান্ডো অপারেশনে নিহত সন্ত্রাসীদের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাদের প্রায় সকলেই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। পরিচয় পওয়া ৫ জনের প্রায় সবাই অভিজাত নামিদামি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই সন্ত্রাসী তৎপরতার সাথে দেশের মাদরাসা শিক্ষাকে জড়িত করার কোনো সুযোগ নেই। স্বাধীনতার স্বপক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার একশ্রেণীর ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তি সব সময়ই দেশের ইসলামি শিক্ষা ও মূলধারার ইসলামি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের টার্গেট করে তাদের লিপ সার্ভিস অব্যাহত রেখেছে।

সিরিয়া, আফগানিস্তান থেকে ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যন্ত পশ্চিমা পরাশক্তির ভিত্তিভূমি অনেকটা নড়বড়ে হয়ে পড়ার সাথে সাথে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব ওয়ার অন টেররিজমের নামে অন্তহীন যুদ্ধের এজেন্ডা ওথকে সরে যেতে শুরু করে। ইরানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ বিশ্বশক্তির পারমানবিক সমঝোতাচুক্তি থেকে একসময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা একতরফাভাবে সরে গেলেও আফগানিস্তান থেকে অনেকটা পালিয়ে, রাতের অন্ধকারে সেনা প্রত্যাহার এবং সিরিয়ায় রণেভঙ্গ দেয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক বাস্তবতা অনেকটাই পাল্টে যায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদল ঘটার পর ইরানের সাথে আবারো একটি সম্ভাব্য সমঝোতায় পৌঁছানোর আগেই মধ্যপ্রাচ্যে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকারের সাথে সউদী আরবের স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক পুণ:প্রতিষ্ঠার পর সউদী আরবের ডি ফ্যাক্টো বাদশা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরব লীগের সম্মেলনে আরব ঐক্যের পুরনো কন্ঠস্বরের জোরালো আওয়াজ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের দাবি ও সঙ্কল্প থেকে সরে যাইনি। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম এমন ঐক্যের ডাক শোনা গেল। যেখানে সউদী রাজারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর একচ্ছত্র নির্ভরশীলতা ও বশ্যতা থেকে বেরিয় আসার সাহসী অবস্থানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মধ্যপাচ্যে ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে চীন-রাশিয়ার মত পরাশক্তির নেপথ্য ভূমিকা এবং শাসকদের নতুন উপলব্ধির এই মাহেন্দ্রক্ষণ আরব জনগণের জন্য নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্ভাবনার আভাস দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের একচ্ছত্র সমর্থন থাকাই স্বাভাবিক। এ সপ্তাহে একটি মার্কিন গবেষণা জরিপের তথ্য অনুসারে, তথাকথিত ওয়ার অন টেররিজমের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ৪৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় একচ্ছত্রভাবে পশ্চিমাবিশ্বের। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রোডলারের দেশগুলো পশ্চিমা বশংবদ ছিল। ওয়ার অন টেররিজমের বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা ও ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতায় সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে ভারত ও বাংলাদেশের রিজিম সেই পুরনো জুজু দেখিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণের ধারাবাহিক প্রপাগান্ডা তৎপরতা এখনো অব্যাহত রেখেছে। নবম জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও বাংলাদেশে বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলে জনমতের প্রতিফলন ছিল না। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের অংশগ্রহণ ছাড়া একতরফা নির্বাচনের একমাত্র আঞ্চলিক কুশীলব ছিল ভারত। প্রতিবেশী দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ, মানুষের মানবাধিকার হরণ, রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে একতরফা নির্বাচনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ভারতের ভূমিকা বিশ্বের সামনে প্রকাশিত হয়ে পড়লেও ভারতের সাথে পশ্চিমাদের কৌশলগত সম্পর্কের কারণে তা যতটা আলোচিত-সমালোচিত হওয়ার কথা, তা হয়নি। পশ্চিমাদের এই নীরবতার সুযোগ নিয়ে ভারত আবারো একটি একতরফা নির্বাচনের মঞ্চ সাজানোর অভিসন্ধি করার চেষ্টা করতেই পারে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনীতি এক জটিল আবর্তে প্রবেশ করেছে। বিশেষত নবম জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচনকে একতরফা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও রাজনীতির মাঠকে প্রতিবন্ধকতাহীন রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিনত করা, বেপরোয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট সতর্ক দৃষ্টি রেখে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের তরফ থেকে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হলেও চীনের ক্রমবর্ধমান উত্থান ও প্রভাব ঠেকাতে পশ্চিমাদের সাথে ভারতের কৌশলগত সম্পর্কের খাতিরে তা ভারতীয় প্রভাবকে অতিক্রম করতে পারেনি। এবার আর সে অবস্থা নেই। ব্যাপক জনবহুল ও ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চাহিদা ও সমর্থনের একটি পরিপুরক সম্পর্ক রয়েছে। কোটি কোটি মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভাগ্য ও মানবাধিকারের প্রশ্নে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তার শুরুটা ছিল নাইন-ইলেভেন পরবর্তী ওয়ার অন টেররিজমের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে র‌্যাব গঠন, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের পেছনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক এজেন্ডার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। পুলিশের সক্ষমতা, সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতা, জননিরাপত্তা ও জঙ্গিবাদী ঝুঁকির প্রশ্নে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন আশা জাগাতে সক্ষম হলেও এ বাহিনীকে সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলে ব্যবহার এবং গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করেনি। আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক কৌশলের সাথে সাথে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে সরকারের অস্বচ্ছ ভূমিকার কারণে র‌্যাব ও পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কতিপয় কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকার উষ্মা প্রকাশের সাথে সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং অংশ্রগহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে বিরোধীদলের সাথে আলোচনা ও দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মানবাধিকার ও গুম-খুনের সুষ্ঠু তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হলে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের দাবি ও অবস্থান আরো সংহত হতে পারত। একটি বাহিনীর কতিপয় সদস্য বা কর্মকর্তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সরকার বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। মানবাধিকারের প্রশ্নে উত্থাপিত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষিদের বিচারের সম্মুখীন করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেই বিতর্ককে অহেতুক সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জে পরিনত করা হয়েছে। এখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তথা আমলা ও মন্ত্রী-এমপিদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশংকা দেখা দিয়েছে। পক্ষান্তরে সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিমধ্যে পাল্টা নিষেধাজ্ঞাসহ মোকাবেলার কৌশল নিয়ে কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টা মূলত গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জননিরাপত্তা বিষয়ক। এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি ও রাজনৈতিক সমঝোতা হলে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে যেকোনো পরাশক্তির চাপ মোকাবেলা করতে সক্ষম।

নাইন-ইলেভেন পরবর্তী ওয়ার অন টেররিজমের প্রোপাগান্ডায় মূল টার্গেট ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো। ওয়াশিংটন তার আঞ্চলিক মিত্রদের সাথে রণকৌশল ও ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের উপর ভারতের আধিপত্যবাদী নীতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রকট ও একচ্ছত্র হয়ে ওঠার মোজেজা এখানেই। ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর উপর ভারতীয় ঘোড়া কূটনীতি, নবম জাতীয় নির্বাচনে গোপণ সমঝোতা এবং পরবর্তী দশম ও একাদশ নির্বাচনে নজিরবিহীন কারসাজির সাথে ভারতীয় কূটনীতিকদের সম্পৃক্ততা ছিল দৃশ্যমান ও প্রকাশ্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের খারাপ প্রভাব ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশই নয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে মোকাবেলায় ভারতকে ব্যবহারের যে কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করেছিল, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে খুব খারাপ বাজি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। গত ১ মে ফরেন অ্যাফেয়ার্স অনলাইন মেগাজিনে কার্নেগি এনডাওমেন্টের আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ক গবেষক, এশলে জে. টেলিসের লেখা একটি নিবন্ধের শিরোনাম, ভারতের উপর আমেরিকার খারাপ বাজি (আমেরিকা’স ব্যাড বেট অন ইন্ডিয়া)। নিবন্ধে চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আঞ্চলিক সংঘাতে ভারতের যে ভূমিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করেছিল, তা পুরোপুরি ভ্রান্ত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। জর্জ ডাব্লিও বুশ থেকে জো বাইডেন পর্যন্ত সেই ভুল নীতির চর্চা চলছে। তবে সেই ওয়ার অন টেররিজমের সময়কার ইসলামোফোবিক এজেন্ডা ভারত তার আভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে পুরোদমে ব্যবহার করে চলেছে।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের লেখা একটি নিবন্ধ অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে যথেষ্ট আলোচিত হয়েছে। দ্য ফেডারেল অনলাইন মেগাজিনে প্রকাশিত নিবন্ধে সুবীর ভৌমিক ইসলামোফোবিক প্রপাগান্ডার পুরনো সুরে শেখ হাসিনা বিরোধী বিএনপি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। উল্লেখ্য, অন্যতম বড় ইসলামিস্ট দল জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন নেই। আগের ২০ দলীয় জোটেও জামায়াত নেই। তবে সেক্যুলার বামপন্থী দলগুলোর মত জামায়াতে ইসলামিও যুগপৎ সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতের শূন্যস্থান দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সবচেয়ে সক্রিয় ইসলামি রাজনৈতিক দল চরমোনাই পীরের ইসলামি আন্দোলন আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামি ঐক্যজোটের একাংশ, হেফাজতে ইসলামসহ কওমী আলেমদের নিয়ে আওয়ামী জোটে ভেড়ানোর তৎপরতার কথাও শোনা যাচ্ছে। সুবীর ভৌমিকরা সরকারবিরোধী জোটকে ইসলামিস্ট ট্যাগ লাগিয়ে ইসলামোফোবিয়ার পুরনো এজেন্ডা বাস্তবায়নেই লিপ্ত আছেন। তবে তাঁর নিবন্ধের যে অংশটি নিয়ে বিরোধীদলের সমর্থকরা টকশো গরম করছেন, তা হচ্ছে, সুবীর ভৌমিক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা জরিপের বরাত দিয়ে বলেছেন, বর্তমান সংসদে থাকা সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন করলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩২টি থেকে সর্বোচ্চ ৪৭টি আসন পাবে। সুবীর ভৌমিকের রিপোর্টে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গী এবং সম্ভাব্য সকল উপায়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ধরে রাখার তত্ত্বাবলী হাজির করা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের একদিন আগে প্রকাশিত সুবীর ভৌমিকের একটি নিবন্ধে শেখ হাসিনা তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনায় ভারতের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছিলেন। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। তার মতে, ভারতের প্রত্যাশা হচ্ছে, শেখ হাসিনা এবার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসুক। এ প্রসঙ্গে তিনি জরিপ, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নির্বাচনে জিততে আওয়ামী লীগ সরকারের করণীয় সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন। তবে বাকশালের পুনরাবৃত্তি না চাইলেও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের দাবির প্রসঙ্গে সুবীর ভৌমিকের দিকনির্দেশনামূলক নিবন্ধে কিছুই নেই।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments