যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসকে লেখা চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিস ট্রাসের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি মুসলিমদের নেতারা। গত ১১ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম মিডলইস্ট আই এ তথ্য জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পূর্ব-জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদুল আকসা তত্ত্বাবধানকারী ফিলিস্তিন-জর্দানভিত্তিক সংস্থা ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ ব্রিটিশ রাজার উদ্দেশ্যে এ বিবৃতি তৈরি করে।
এতে ফিলিস্তিনের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ মুহাম্মদ হুসাইন ও সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ ইকরামা সাবরি সম্ভাব্য এ স্থানান্তরের তীব্র নিন্দা জানান।
গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে নিউ ইয়র্ক সফরকালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদকে জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করার বিষয়ে কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিস ট্রাস। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যুগ যুগ ধরে জেরুজালেম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও শান্তির উজ্জ্বল উদাহরণ ছিল। যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর ঐতিহাসিক আইনি ব্যবস্থাকে স্বীকৃতিও দিয়েছে, যা ১৮৫২ সাল থেকে ‘স্থিতিশীলতা’ নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মের বিশেষ এ অধিকার সুরক্ষিত ছিল। এরপর ইসরায়েল ইহুদি সম্প্রদায়ের পক্ষে একতরফা নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের এ একতরফা নীতির অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের বিরোধিতা করছি। কারণ তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বার্তা দেয় যে যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক আইন ও ‘স্থিতিশীল’ পরিস্থিতির বিপরীত অবস্থান নিয়েছে এবং ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অব্যাহত অবৈধ সামরিক দখল, পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলের একতরফা অধিভুক্তীকরণ ও পবিত্র নগরীতে ইসরায়েলের অবৈধ ইহুদীকরণের ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে। ’
চিঠিতে ১৯৬৭ সালের আগের ‘স্থিতিশীল পরিস্থিতি’ পুনরায় চালুর দাবি জানানো হয়। তা ছাড়া যুক্তরাজ্যের এমন পদক্ষেপ দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং জেরুজালেমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সংঘাতকে আরো উদ্দীপ্ত করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। এদিকে চিঠির প্রতিক্রিয়ায় রাজা চার্লসের এক মুখপাত্র ‘এটি যুক্তরাজ্য সরকারের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।
১৯৬৭ সালে আরবদের সঙ্গে যুদ্ধে জিতে ইসরায়েল পূর্ব-জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং পুরো জেরুজালেম শহরকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর এক বছর পর তা বাস্তবায়ন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর গুয়াতেমালা, প্যারাগুয়ে, হন্ডুরাস, রোমানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চেক, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, গিনিয়া, কসোভো, ইউক্রেন, সুরিনাম জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করে।
এর আগে ২০২০ সালে রাজা তৃতীয় চার্লস জেরুজালেম সফরকালে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। তখন তিনি তাদের জন্য ‘স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমতা’ কামনা করেন। তা ছাড়া ইসলামের ইতিহাস ও ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও ইতিবাচক মনোভাবের জন্য ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই