Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeবিচিত্রবিমান যখন বাসা

বিমান যখন বাসা

আগুনে বাড়ি হারানোর পরে জো অ্যান ইউসারি ঠিক করেছিলেন তিনি বিমানে বাস করবেন। সেই লক্ষ্যে তিনি একটি পুরানো বোয়িং ৭২৭ কিনেছিলেন যেটি আর ব্যবহারযোগ্য ছিলো না।  ছয় মাস  সময় নিয়ে তিনি নিজেই এটিকে সারান এবং ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন। বিমানের ভেতর ১৫০০ বর্গফুটের জায়গায় বানিয়ে ফেলেন নিজের পছন্দের বাসা। সেখানে আছে  তিনটি শয়নকক্ষ, দুটি বাথরুম এবং ককপিটে বানিয়ে ফেলেন গরম টাব। এসব বানাতে তাঁর খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার ডলারের কাছাকাছি।  ইউসারি – মিসিসিপির বেনোইটের একজন বিউটিশিয়ান। যদিও বিমান চালনার সাথে তাঁর কোনো সংযোগ ছিল না। তিনি তার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এক শ্যালকের  পরামর্শ অনুসরণ করে এই বাসা তৈরী করে ফেলেন। ইউসারি ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিমানে  থাকতেন।

বিমানটি ট্র্যাক থেকে পড়ে যাওয়ার পরে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল তারপর বিমানটিকে সর্বজনীন প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। যদিও তিনি বিমানে বসবাসকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না। 

১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে একজন বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনিয়ার ব্রুস ক্যাম্পবেল, যার একটি প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স ছিল তিনিও বিমানকে নিজের ঠিকানা বানিয়ে ফেলেন।  ক্যাম্পবেল এখন তার নিজের প্লেন একটি বোয়িং ৭২৭- এ  ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওরেগনের হিলসবোরোর জঙ্গলে বসবাস করছেন। ক্যাম্পবেল বলেন, আমি কখনই একটি প্রচলিত বাড়িতে থাকতে চাইনি। এ প্রকল্পের জন্য মোট খরচ হয়েছিল ২ লক্ষ ২০ হাজার ডলার। প্লেনটি গ্রীসের অলিম্পিক এয়ারওয়েজের ছিল এবং ১৯৭৫ সালে এটি ব্যবহার করতেন এয়ারলাইনের ম্যাগনেট মালিক অ্যারিস্টটল ওনাসিস। আমি যখন বিমানটি কিনেছিলাম তখন এর ইতিহাস জানতাম না।  আমি জানতাম না যে এটি পুরানো। আধুনিক মানের বিমানের তুলনায় এটি সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল। হয়তো বাসা বানানোর জন্য সবচেয়ে খারাপ পছন্দ। ফলস্বরূপ, বসবাস করার আগে কয়েক বছর ধরে বিমানটিকে সারানোর জন্য অনেক কাজ করতে হয়েছিল ক্যাম্পবেলকে। শীতের দিনগুলিতে যখন প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে তখন ক্যাম্পবেল  দক্ষিণ জাপানের একটি শহর মিয়াজাকিতে ফিরে যান নিজের অ্যাপার্টমেন্টে। ঠান্ডা কমলে ফিরে আসেন বিমানে। কিন্তু মহামারী বিষয়টিকে  কঠিন করে তুলেছে এবং গত তিন বছর ধরে তিনি বিমানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ক্যাম্পবেল প্রায়শই ইচ্ছুক দর্শকদের বিনামূল্যে বিমানে থাকার প্রস্তাব দেন। বিমানের মধ্যেই পাবলিক ইভেন্ট হোস্ট করেন, বিমানের ডান উইংয়ে শিল্পীদের পারফর্ম করার বন্দোবস্ত রেখেছেন ক্যাম্পবেল। অতিথিদের নাচারও বিশেষ জায়গা রয়েছে। 

আপনি যদি মনে করেন যে একটি বিমানে বাস করা যথেষ্ট অযৌক্তিক, তাহলে জানিয়ে রাখি টেক্সাসের ব্রুকশায়ারে  গউ-৮০ এবং উঈ-৯ এর মালিক জো অ্যাক্সলাইনের পরিকল্পনার কথা । অ্যাক্সলাইন এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গউ-৮০-এ বসবাস করেছেন। ২০১১ সালের  এপ্রিল ফুল দিবসে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরে অ্যাক্সলাইন উঈ-৮ সংস্কার করেন এবং এটিতে একটি সিনেমাহল বানিয়ে ফেলেন। কয়েক বছর ধরে, তিনি এমনকি তার সন্তানরাও বিমানে থাকছেন। তাঁর বেডরুমটি  ১০ ফুট বাই ১৮ ফুটের। সেখানে দুটি টিভি রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রচুর জায়গা।  বসার ঘরটিও বেশ বড়, ডাইনিং রুমে চারটি আসন রয়েছে, যাতে সন্তানরা ছুটিতে এলে তাদের কোনো অসুবিধা না হয়। তবে বিমানে বাইরের  বাতাস ঢোকার কোনো জায়গা নেই , তার জন্য বিমানের দরজা খোলার প্রয়োজন হয়। অ্যাক্সলাইন প্রথমে চেয়েছিলেন বোয়িং ৭৪৭ -কে নিজের বাসা বানাতে। কিন্তু শিপিং খরচ বেশি বলে তিনি এটি কেনার ইচ্ছা ত্যাগ করেন। 

বিমানগুলিকে বাসায় রূপান্তরিত করার আরো উদাহরণ আছে।  বোয়িং ৩০৭ স্ট্রাটোলাইনার  একসময় বিলিয়নেয়ার এবং চলচ্চিত্র পরিচালক হাওয়ার্ড হিউজের মালিকানাধীন ছিলো। তিনি পরে এটিকে একটি  ফ্লাইং পেন্টহাউসে রূপান্তরিত করেন। হারিকেনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর, এটি আর ব্যবহারযোগ্য ছিলো না। ১৯৮০এর দশকে ফ্লোরিডার বাসিন্দা ডেভ ড্রিমার  এটি কিনে নেন , যিনি  ব্যাপকভাবে সংস্কারের পর   এর নামকরণ করেছিলেন ‘দ্য কসমিক মাফিন’। ২০ বছর তিনি বিমানে বসবাস করেছিলেন। এরপর ২০১৮ সালে ফ্লোরিডা এয়ার মিউজিয়ামে তিনি এটি দান করেন। 
আমেরিকান কান্ট্রি গায়ক ন্যাশভিল একসময়ে  প্লেন মেকানিক ছিলেন। বহু দশক ধরে তিনি একটি রূপান্তরিত উঈ-৮ এ বসবাস করেছিলেন যা তিনি ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে স্ক্র্যাপইয়ার্ড থেকে সংগ্রহ  করেছিলেন।  ২০১৫ সালে তিনি মারা যান, মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন বিমানে থাকার জন্য তার কখনো কোনো অনুশোচনা ছিল না। 

যারা একটি বিমান বাড়িতে এক বা দুই রাতের অভিজ্ঞতা নিতে চান তাদের সামনে কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। কোস্টারিকায়, কোস্টা ভার্দে হোটেলে একটি সম্পূর্ণ সংস্কার করা বোয়িং ৭২৭ রয়েছে। সেখানে আপনি থাকতে পারেন। বিমানে দুটি বেডরুম রয়েছে।  এখন থেকে সমুদ্রের শোভা দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন । সুইডেনে বোয়িং ৭৪৭ এর ভিতরে একটি আস্ত হোটেলই তৈরী করে ফেলা হয়েছে। আপনি যদি শুধু পার্টি করতে চান তাহলে ২২০  জন লোকের সাথে ইভেন্টের জন্য  লন্ডন থেকে প্রায় ১০০ মাইল পশ্চিমে ইংল্যান্ডের কটসওল্ড বিমানবন্দরে একটি বোয়িং ৭৪৭ ভাড়া নিতে পারেন। এই কারণেই সম্ভবত ব্রুস ক্যাম্পবেলের বেশ কয়েকজন দর্শক এই জীবনধারা গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও ক্যাম্পবেলের মতো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে  অনেকেই পারেননি। তাই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে একবার বিমান বাড়িতে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

সূত্র : সিএনএন

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments