Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামবিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়

গণতন্ত্রের সঙ্গে মানানসই নয়

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ধুম লেগেছে যেন। ইউপি নির্বাচনের শেষ তথা ষষ্ঠ ধাপ বাকি আছে। এরই মধ্যে পাঁচ ধাপে ৩ হাজার ৭৪৪টি ইউপি নির্বাচনে ৩৫১ জন চেয়ারম্যান, ৮৫৮ জন সাধারণ সদস্য এবং ৩৬১ জন সংরক্ষিত সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

সব মিলিয়ে এ সংখ্যা ১ হাজার ৫৭০। ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় পার হলে বোঝা যাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কত। বলা বাহুল্য, এত বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার ঘটনা ইতঃপূর্বে কখনো দেখা যায়নি। স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা এ অভাবিত ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

তাদের মতে, তৃণমূলের এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর অংশগ্রহণের কথা, অথচ একক প্রার্থী হিসাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিপুলসংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হচ্ছেন। তারা বলছেন, রাজনৈতিক ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ার জন্য এ প্রবণতা মোটেও সুখকর নয়, বরং এটা এক অশনিসংকেত। তারা আরও বলছেন-দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়া, বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের অংশ না নেওয়া, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে কেউ দাঁড়ালে তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি, মাঠ পর্যায়ে হুমকি-ধমকি ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় অন্যদের মাঠ ছাড়তে বাধ্য করা ইত্যাদি কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। তারা বলছেন, এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, রাজনীতিক ও নির্বাচন কমিশনকে এখনই ভাবতে হবে। তাদের মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করার সময় এসেছে।

বিশেষজ্ঞদের এসব মতামতের সঙ্গে আমরা যোগ করতে চাই, নির্বাচনে টাকার খেলাও হচ্ছে। বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নির্বাচনবিমুখ করে তোলার উদাহরণ রয়েছে অনেক। নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতার পেছনে কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে যেসব অনিয়ম ও গণতন্ত্রের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটছে, কমিশন সেগুলোর বিহিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসাবে কাজ করছে।

ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। গণতন্ত্রের মর্মবাণী হচ্ছে, নির্বাচনকে হতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। নির্বাচন করতে আগ্রহী প্রার্থীরা নির্ভীকচিত্তে প্রভাবশূন্য অবস্থায় নির্বাচকমণ্ডলীর কাছ থেকে ভোট প্রার্থনা করবেন, এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বলা বাহুল্য, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, জনগণের মতামত তথা ইচ্ছার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন না ঘটা। আর সেক্ষেত্রে নির্বাচিত হওয়া জনপ্রতিনিধি তার নির্বাচনি এলাকার সমগ্র জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হন।

চলমান ইউপি নির্বাচনে তেমনটিই ঘটে চলেছে। অর্থ ও পেশিশক্তি নষ্ট করছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ও মর্মবস্তুকে। আমরা গণতন্ত্রের সুষ্ঠু চর্চা দেখতে চাই আর সেজন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার যে উদাহরণ তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এ জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনকে পালন করতে হবে স্ব স্ব দায়িত্ব। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে আগামী সব ধরনের স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও উৎসবমুখর হোক, এটাই প্রত্যাশা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments