Saturday, April 20, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামবিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট

বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট

হঠাৎ দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। রাজধানীতে সোম ও মঙ্গলবার এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হয়েছে। রাজধানীর বাইরে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চলছে।

লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। একটানা লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, কোনাবাড়ী, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, দিনের অধিকাংশ সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

উৎপাদন ব্যাহত হলে সময়মতো বিদেশে পণ্য পাঠানো সম্ভব হবে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিতে পারে। বস্তুত বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিদ্যুতের অভাবে সেচযন্ত্র বন্ধ থাকায় চলতি আউশ মৌসুমের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা গেছে, সোমবার সারা দেশে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। সরকারি হিসাবে লোডশেডিং সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট বলা হলেও বাস্তবে এটি ছিল আরও বেশি। যেহেতু গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; সেহেতু গ্যাসের সরবরাহ কখন স্বাভাবিক হবে সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের উচ্চমূল্য সব দেশকেই সমস্যায় ফেলেছে। বিষয়টি বাংলাদেশকেও বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও জ্বালানি না থাকায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। গ্যাস সংকটে চুলা জ্বলছে না রাজধানীর অনেক আবাসিক এলাকায়। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করেছে সরকার।

গত জুনের শেষ সপ্তাহে স্পট মার্কেট থেকে যে এলএনজি কেনা হয় ইউনিটপ্রতি (এমএমবিটিইউ) ২৫ ডলারে, তা এখন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণে লোকসান কমাতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে জ্বালানির বিশ্ববাজার এখনো অস্থির। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে পারছে না সরকার।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লেও এ মুহূর্তে গ্যাসের অভাবে এর পুরো সুফল পাচ্ছে না দেশবাসী। অতীতে দেখা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেয়ে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কারণ এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। আবারও যেন এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য গ্যাসের নতুন উৎসের সন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থাকলেও অনুসন্ধান কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। আমাদের সাগর এলাকায়ও গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করা হলে আশা করা যায় এ প্রতিষ্ঠান দেশবাসীকে গ্যাস খাতে বড় ধরনের সুখবর দিতে সক্ষম হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments